pacforon-01_44392
৬ বছর মৃত ছেলের সাথে বাবার কথোপকথন

এক দশকে দুই সন্তানকে হারান চীনের তিয়ান জুয়েমিং নামে ৬০ বছর বয়সী এক বাবা। সন্তান হারানোর কষ্ট সহ্য করতে পারছিলেন না কিছুতেই। তাই নিজের ছেলেকে কাছে রাখতে একপর্যায়ে তিনি সিদ্ধান্ত নেন ছেলের মৃতদেহ একটি বরফ মিশ্রিত বাক্সের ভেতর রেখে দেবেন। মৃত সেই ছেলেকে বাক্সের মধ্যে রেখে দিয়ে প্রাণভরে দেখতেন এবং তার সাথে কথা বলতেন। আর এভাবেই কেটে যায় দীর্ঘ ছয়টি বছর।

তিয়ান জুয়েমিং পেশায় ছুতার মিস্ত্রী। তিনি চীনের চং কিং প্রদেশে হুয়াংলিং গ্রামে বাস করেন। ১৯৭৯ সালে বিয়ে করে তার স্ত্রী ইয়াং হং কিংকে নিয়ে গ্রামের একটি কাদামাটিতে তৈরি ঘরে ওঠেন। সে সময় তিয়ানের পরিবার আত্মীয় স্বজনদের সাথে থাকতো।

তিয়ান নিজের জীবনমানের উন্নয়নের আশায় শহরে গেলেন। নিজের কাজের দক্ষতার কারণে ধীরে ধীরে বেশ স্বচ্ছলও হয়ে উঠলেন। ১৯৮২ সালে এ দম্পতির একটি মেয়ে হয়, ১৯৮৭ সালে হয় ছেলে। পরিবারকে আরও বেশি সময় দিতে তিয়ান চাকরি ছেড়ে গ্রামে ফিরে গিয়ে তিন তলা বাড়ি বানান। তার বাড়ি ও পরিবার সে গ্রামে সবচেয়ে সমৃদ্ধশালী ও সুখী বলে খ্যাত ছিল। কিন্তু দুর্ভাগ্য, সেটা আর বেশিদিন তার কপালে সইল না।

গ্রীষ্মের এক সকালে তিয়েনের মেয়ে ইং ইং বাজারে গেল সবজি কিনতে। কিন্তু বাজার থেকে সে ফিরে আসলো ফ্যাকাসে মুখে। দ্রুতই তার শরীর খারাপ হয়ে গেল ও তার শ্বাস কষ্ট শুরু হয়ে গেল। দ্রুত ডাক্তার ডাকা হলো, কিন্তু তৎক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গেছে। মেয়েটি মারা গেল।

এর ৯ বছর পর তিয়ান তার জীবনের দ্বিতীয় আঘাত পেলেন। তার ছেলে কিন ইউয়ান তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। তিয়ান তার ছেলের পড়াশোনার জন্য ও ভবিষ্যৎ জীবনের উন্নতির জন্য সাধ্যমত সব কিছু করতেন। ২০০৬ সালে তার কাছে খবর এলো তার ছেলে দীর্ঘ এক মাস যাবত অসুস্থ, প্রচণ্ড জ্বর। তিয়ান ও তার স্ত্রী ছুটে গেলেন হাসপাতালে। কিন লিউকেমিয়াতে আক্রান্ত হয়েছিল তার ছেলে। কিন্তু সেটা ধরা পড়ে একদম চূড়ান্ত পর্যায়ে। সব প্রার্থনাকে ব্যর্থ করে দিয়ে ২০০৬ সালের জুলাই মাসে ১৮ বছর বয়সে সে মারা যায় ছেলেটি।

কিনের মৃত্যুতে তিয়ান একেবারেই ভেঙে পড়েন। তিনি বুঝতে পারছিলেন না কিভাবে তিনি তার মনকে সান্ত্বনা দেবেন। তিনি ও তার স্ত্রী সিদ্ধান্ত নিলেন তারা ছেলেকে সমাহিত করবেন না। তারা একটি বাক্সে তাদের ছেলের মৃতদেহ রাখলেন ও বরফ দিয়ে সেটাকে সংরক্ষণ করলেন।

তিয়ান ছয় বছর পর চীনের গণমাধ্যমকে জানান, যখনই তারা তাদের ছেলেকে খুব মিস করতেন, তখন তারা কফিনের ঢাকনি খুলে তার সাথে গল্প করতেন। যদিও তিয়ান জানতেন এটা স্বাভাবিক আচরণ নয়।

তিনি বলেন, আমি জানি এ ধরনের কাজ আমার আত্মীয় ও প্রতিবেশীদের বিব্রত করে। কিন্তু দুই সন্তান হারানোর কষ্ট ভোলার জন্য যে আমার আর কোনও উপায় জানা ছিল না।