11
মার্কিন কূটনীতিকের সঙ্গে হেফাজত নেতাদের বৈঠক

ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাসের রাজনৈতিক কর্মকর্তা ক্যাথলিন গিবিলিস্‌কো এবং সহকারী রাজনীতি বিশেষজ্ঞ লুবাইন চৌধুরী মাসুম হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। গতকাল  সকাল ১০টায় মার্কিন দূতাবাসের দুই কর্মকর্তা হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে যান। এ সময় হেফাজত নেতৃবৃন্দ তাঁদেরকে অভ্যর্থনা জানিয়ে আমীরের কার্যালয়ে নিয়ে যান। এরপর মার্কিন দূতাবাস কর্মকতা হেফাজত নেতৃবৃন্দের সঙ্গে সরাসরি আলোচনায় বসেন। এতে উপস্থিত ছিলেন হেফাজতে ইসলামের মহাসচিব হাফেজ মুহাম্মদ জুনায়েদ বাবুনগরী, মাওলানা আনাস মাদানী, যুগ্মমহাসচিব মাওলানা মুঈনুদ্দীন রুহী, সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী, আমীরের প্রেস সেক্রেটারি মাওলানা মুনির আহমদ, কেন্দ্রীয় নেতা মাওলানা হাবীবুল্লাহ আজাদী, মাওলানা মুজাম্মেল হক প্রমুখ।
বৈঠকে মিসেস ক্যাথলিন হেফাজত নেতৃবৃন্দের কাছে সংগঠনটির ১৩ দফার আন্দোলন, নীতি-আদর্শ, সাংগঠনিক তৎপরতা, গত বছরের ৫ই মে শাপলা চত্বরের ঘটনাসহ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বিস্তারিত জানতে চান। হেফাজত নেতৃবৃন্দ এসব বিষয়ে তাদের বক্তব্য তুলে ধরার পাশাপাশি সংগঠনের অরাজনৈতিক ও শান্তিপূর্ণ অবস্থান সম্পর্কে অবহিত করে বলেন, হেফাজতে ইসলামের তৎপরতা কাউকে ক্ষমতায় নেয়ার জন্য বা নামানোর জন্য নয়। হেফাজতে ইসলাম মুসলমানদের ঈমান-আক্বিদার সুরক্ষার আন্দোলনের পাশাপাশি দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব ও সমাজে শান্তি-শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার জন্যই কাজ করে যাচ্ছে। হেফাজতে ইসলাম আল্লাহ, রাসূল ও ইসলামের অবমাননাসহ ঈমান-আক্বিদাসহ ইসলামী সংস্কৃতির উপর আঘাত হানা যেমন সহ্য করে না, তেমনি সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর যে কোন হামলার ঘটনাকেও সমর্থন করে না। এর বাইরে হেফাজতে ইসলাম কখনওই কোন রাজনৈতিক তৎপরতায় জড়িত হবে না। এ সময় মিসেস ক্যাথলিন শাপলা চত্বরের হতাহতের ঘটনা, পবিত্র কুরআন পোড়ানোর ঘটনা এবং সন্ত্রাস ও কথিত জঙ্গিবাদ নিয়েও আলোচনা করেন। হেফাজত নেতৃবৃন্দ ওই সব ঘটনায় নিরপেক্ষ বিচারবিভাগীয় তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের বিচার করার জন্য সরকারের প্রতি বার বার দাবি জানানোর কথা তুলে ধরে বলেন, শাপলা চত্বরের এত বড় ভয়াবহ ঘটনার পরও সারা দেশে আমাদের বিশাল জনসমর্থন সত্ত্বেও কোন ধরনের সহিংসতায় না জড়িয়ে আমরা চরম ধৈর্যের পরিচয় দিয়েছি। কারণ, আমরা কখনওই সহিংস পন্থায় দাবি আদায়ে বিশ্বাস করি না। উলামায়ে ক্বেরাম সমাজে শান্তি ও ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি জোর-জুলুম, সন্ত্রাস ও দুর্নীতির বিরুদ্ধেই কাজ করে যাচ্ছেন। এ সময় মিসেস ক্যাথলিন বলেন, শাপলা চত্বরের ঘটনার সময় আমি যুক্তরাষ্ট্রে ছিলাম। পবিত্র কুরআন পোড়ানোর মতো ঘটনার সঙ্গে হেফাজতের লোকজন জড়িত থাকতে পারে- এমন অভিযোগ তখন ব্যক্তিগতভাবে আমার বিশ্বাস হয়নি। মার্কিন কূটনীতিক দারুল উলূম হাটহাজারী মাদ্‌রাসার পাঠ্য পদ্ধতিসহ কোন কোন বিষয়ে পড়ানো হয় এবং দেশ ও সমাজ গঠনে তাদের ভূমিকা সম্পর্কে খোঁজখবর নেন। ক্বওমি শিক্ষা ব্যবস্থা, সরকারি স্বীকৃতি এবং উলামায়ে কেরামের সামাজিক সম্পৃক্ততা সম্পর্কেও তিনি প্রশ্ন করেন। এ সময় হেফাজত আমীরের প্রেস সেক্রেটারি ও মাসিক মুঈনুল ইসলামের নির্বাহী সম্পাদক মাওলানা মুনির আহমদ মার্কিন কূটনীতিক মিসেস ক্যাথলিনের কাছে বাংলাদেশের উলামা-মাশায়েখ, ক্বওমি মাদ্‌রাসা ও হেফাজতে ইসলাম সম্পর্কে মার্কিন সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি জানতে চান। উত্তরে তিনি তার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া কোন কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন। তবে মিসেস ক্যাথলিন এ সময় যুক্তরাষ্ট্রের মুসলিম নাগরিক পরিচালিত মাদ্‌রাসা সম্পর্কে হেফাজত নেতৃবৃন্দ কতটা অবহিত এবং পারস্পরিক অভিজ্ঞতা বিনিময়ের জন্য ক্বওমি মাদ্‌রাসা নেতৃবৃন্দের কোন প্রতিনিধিদল যুক্তরাষ্ট্র সফরে আগ্রহী কিনা জানাতে চান। হেফাজত আমীরের প্রেস সেক্রেটারি মাওলানা মুনির আহমদ জানান, আড়াই ঘণ্টা স্থায়ী বৈঠকটি সকাল ১০টায় শুরু হয়ে সাড়ে ১২টায় শেষ হয়। বৈঠক শেষে হেফাজত নেতৃবৃন্দ এবং দারুল উলূম হাটহাজারী মাদ্‌রাসা কর্তৃপক্ষের আন্তরিক আতিথেয়তা ও সহযোগিতার জন্য মার্কিন কূটনীতিক ধন্যবাদ জানান। বৈঠক শেষে দারুল উলূম হাটহাজারী মাদ্‌রাসার পরিদর্শন বইয়ে মিসেস ক্যাথলিন মন্তব্য লেখেন। বিদায় নেয়ার আগে দারুল উলূম হাটহাজারী মাদ্‌রাসার শিক্ষাভবন, ছাত্রাবাসসহ ক্যাম্পাস পরিদর্শন করেন।