un_al_queda_bg_214209008_45107
জাতিসংঘ নথিতে বাংলাদেশে আল-কায়েদার সক্রিয়তা!

বাংলাদেশে পরিচালিত দুটি বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে আল-কায়েদার সম্পৃক্ততা নির্দেশ করেছে জাতিসংঘ। সংস্থা দুটির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ থাকার কথাও উল্লেখ রয়েছে জাতিসংঘ রেজল্যুশনে। এর মধ্যে একটি সংস্থার মাধ্যমে একজন বাংলাদেশি ভারতে যুক্তরাষ্ট্রের কনস্যুলেট অফিসে হামলার পরিকল্পনার সঙ্গে যুক্ত হয়েছিলেন বলেও তথ্য রয়েছে ওই নথিতে।

গত ১৪ ফেব্রুয়ারি জাতিসংঘের ‘সিকিউরিটি কাউন্সিল আল কায়েদা স্যাংকশন কমিটি’র রেজল্যুশনে বলা হয়েছে, সন্ত্রাসী সংগঠন আল কায়েদার সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার কারণে ‘গ্লোবাল রিলিফ ফাউন্ডেশন’ নামক সংস্থাটির ওপর জাতিসংঘ নিষেধাজ্ঞা আরোপ রেখেছে। বাংলাদেশে এই সংস্থাটি সক্রিয়ভাবে কাজ করছে।

এছাড়া ‘আল হারামাইন’ নামে আরেকটি সংস্থার বাংলাদেশ শাখা আল কায়েদা নেট ওয়ার্কের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছে বলে উল্লেখ রয়েছে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের আলাদা একটি নথিতে। এতে বলা হয়েছে, আল কায়েদা নেটওয়ার্ক এবং ওসামা বিন লাদেনকে (বর্তমানে মৃত) আর্থিকভাবে এবং প্রযুক্তিগত সহায়তা দিয়েছে এই এনজিওটি। সেখানে বলা হয়, ভারতে যুক্তরাষ্ট্রের কন্স্যুলেটে সন্ত্রাসী হামলা চালানোর উদ্দেশ্যে এক বাংলাদেশী নাগরিককে ওই এলাকায় নজরদারী করে তথ্য আদান-প্রদানের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। সন্দেহভাজন হিসেবে পুলিশের হাতে ধরা পড়ার পর তার স্বীকারোক্তি থেকেই এসব তথ্য পাওয়া গেছে। ওই ব্যক্তি স্বীকার করেছেন, আফগানিস্তানে আল কায়েদার প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে তিনি প্রশিক্ষণ পেয়েছেন। সেখানেই ১৯৯৪ সালে  ওসামা বিন লাদেনের সঙ্গে তার সাক্ষাত হয়।

সন্ত্রাসী হামলার ওই পরিকল্পনার কথা তিনি প্রথম বাংলাদেশের আল হারামাইনের কার্যালয়েই শুনেছেন বলে জানান ওই ব্যক্তি।

সিকিউরিটি কাউন্সিল আল কায়েদা স্যাংকশন কমিটির নথিতে জানা গেছে, ২০১০ সালের ২১ জুন ‘গ্লোবাল রিলিফ ফাউন্ডেশন’র ওপর প্রথম নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে জাতিসংঘ। এরপর গত ১৪ ফেব্রুয়ারি  সংস্থাটির বিষয়ে কিছু তথ্য আপডেট করে যাতে সংস্থাটি এখনো বাংলাদেশে তার সক্রিয়তা বজায় রেখেছে বলে উল্লেখ করা হয়।

এর আগে ২০০৪ সালে বাংলাদেশে আল কায়েদার অস্তিত্ব আবিষ্কার করে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ। সৌদিআরবভিত্তিক  এনজিও ‘আল হারামাইন ইসলামিক ফাউন্ডেশন’র বাংলাদেশ শাখা আল কায়েদার সাথে সম্পৃক্ত থাকার কারণে  জাতিসংঘ ‘সিকিউরিটি কাউন্সিল আল কায়েদা স্যাংকশন কমিটি’ তখনই সংস্থাটির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে।

২০০৪ সালের ৬ জুলাই বাংলাদেশে আল হারামাইনকে আলকায়েদা, ওসামা বিন লাদেন, তালেবান অথবা নামে-বেনামে আল-কায়েদার সমর্থনে  অর্থায়ন, পরিকল্পনা, সুবিধা যোগানো, প্রস্তুতি বা কর্মকাণ্ডের সাথে সম্পৃক্ত হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।

তখন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার হুমকিতে আন্তর্জাতিক আইন এবং জাতিসংঘের চার্টারের আওতায় আল হারামাইনের বিরুদ্ধে সর্বতোভাবে রুখে দাঁড়াতে সদস্য রাষ্ট্র বাংলাদেশকে আহবান জানানো হয়।

জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের সংশ্লিষ্ট কমিটি বলেছে, বিশ্বব্যাপী আল কায়েদা নেটওয়ার্ককে সহায়তায় সক্রিয়ভাবে কাজ করতে প্রধান একটি এনজিও হিসেবে কাজ করে ‘আল হারামাইন।’ বিশেষ ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে বিশ্বের নির্ধারিত ব্যবসায়ী মহলসহ বিভিন্ন  স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের কাছ থেকে এই প্রতিষ্ঠানের অর্থের যোগান আসে। আব্দুল আজিজ আল আকিল আল হারামাইনের প্রতিষ্ঠাতা।

আল হারামাইন জেমাহ ইসলামিয়া, আল ইত্তেহাদ, আল ইসলামিয়া, ইজিপসিয়ান ইসলামিক জিহাদ এবং লস্কর ই তায়্যিবাসহ আল-কায়েদা নেট ওয়ার্ককে সহায়তা দিচ্ছে। এসব সন্ত্রাসী সংগঠন তহবিল সংগ্রহ এবং তাদের কার্যক্রমে আল হারামাইনকে সামনে ব্যবহার করে।

বাংলাদেশ ছাড়াও বসনিয়া ও হারজেগোভিনা, সোমালিয়া, ইন্দোনেশিয়া, পাকিস্তান, আফগানিস্তান, আলবেনিয়া, ইথিওপিয়া, নেদারল্যান্ডস,  ইউনিয়ন অব কমোরোস এবং যুক্তরাষ্ট্রে বিস্তৃত রয়েছে এই কর্মকাণ্ড।

অন্যদিকে,  জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের আল কায়েদা নিষেধাজ্ঞা কমিটি গত ২০১০ সালের ২১ শে জুন আল কায়েদার সাথে সম্পৃক্ত থাকার কারনে বাংলাদেশসহ বিশ্বে আরো ৭টি দেশে কমকা- পরিচালনাকারি গ্লোবাল রিলিফ ফাউন্ডেশনের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। প্রতিষ্ঠানটির অর্থ সম্পত্তি জব্দ, ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা এবং অস্ত্র অবরোধ বা বিধি-নিষেধ আরোপ করে।

যুক্তরাষ্ট্রের কয়েকটি ঠিকানা ব্যবহারকারী এই ‘গ্লোবাল রিলিফ ফাউন্ডেশন’ বাংলাদেশ ছাড়াও আফগানিস্তান, অরিত্রিয়া, ইথিওপিয়া, ভারত, ইরাক, ফিলিস্তিন, সিরিয়া এবং সোমালিয়াতে তাদের কর্মকান্ড পরিচালনা করছে।