দৈনিক বার্তা: পুলিশের হাতে আটকের পর টাকা-পয়সা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ অনেক পুরনো। এবার নতুন এক বাণিজ্যের অভিযোগ পাওয়া গেছে। সন্দেহভাজন বা মামলার আসামি যে কাউকে আটকের পর তার মোবাইল সেটটি নিয়ে নেয়ার অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কাউকে আটক করার পর সঙ্গে থাকা মানিব্যাগ ও মোবাইল সেটটি জব্ধ করার নামে নিয়ে নেয়া হয়। কিন্তু বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই তা জব্দ তালিকায় লেখা হয় না। সংশ্লিষ্ট পুলিশ সদস্যরা মোবাইল সেটটি নিয়ে নেন। পুলিশি হয়রানির ভয়ে ছাড়া পেলেও কেউ মোবাইল ফিরে পাওয়ার জন্য যোগাযোগ করেন না। এমনকি যোগাযোগ করলেও উল্টো তাদের ভয়-ভীতি দেখিয়ে দূর করে দেয়া হয়। ভুক্তভোগী একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে। তবে ঢাকা মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার (ডিসি-মিডিয়া) মাসুদুর রহমান জানান, পুলিশের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ সত্য নয়। কাউকে গ্রেপ্তার বা তল্লাশির পর জব্দকৃত আলামত একাধিক সাক্ষীর সামনে তালিকাভুক্ত করা হয়। এক্ষেত্রে জব্দ তালিকার কোন জিনিসপত্র পুলিশ সদস্যের হাতিয়ে নেয়ার সুযোগ নেই। তারপরও সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকলে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হয় বলে জানান তিনি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সন্দেহভাজন কোন ব্যক্তি, মামলার আসামি বা ভয়ঙ্কর অপরাধী যে কাউকে গ্রেপ্তারের পরপরই পুলিশ তার মানিব্যাগ ও মোবাইল সেটটি নিজেদের হেফাজতে নেয়। গুরুতর অপরাধে অভিযুক্তদের বাদে অন্য সবার মোবাইল সেটগুলোই সংশ্লিষ্ট পুলিশ সদস্যরা গায়েব করে দেয়। এসব পরে বিক্রি করা হয় অথবা নিজেদের আত্মীয়-স্বজনদের ব্যবহারের জন্য দেয়া হয়। বহুল আলোচিত সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় নিখোঁজ দারোয়ানের ব্যবহৃত মোবাইল সেট ডিবি’র এক কর্মকর্তার ভাইয়ের কাছ থেকে উদ্ধার করেছিল র্যাব। ঘটনার কয়েকদিন পর থেকেই সাগর-রুনির বাসার দারোয়ান হুমায়ুন কবীর পালিয়ে যায়। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তাকে হন্যে হয়ে খুঁজলেও হুমায়ুন কবীরকে পাওয়া যাচ্ছিল না। এক পর্যায়ে ২০১২ সালের ১৫ই জুলাই ওই দারোয়ানের মোবাইল সেটটি ডিবি’র তৎকালীন সহকারী কমিশনার সোলায়মানের ভাই মোসলেম উদ্দিনের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়। বিষয়টি নিয়ে সমালোচনার ঝড় উঠলে এসি সোলায়মানকে সে সময় বান্দরবানে বদলি করা হয়।
রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে এমন ঘটনা হরহামেশাই ঘটছে। মামলার আসামি হলে তো কথাই নেই, সন্দেহভাজন কাউকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হলেও তার মোবাইল ফোনটি রেখে দেয় সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তারা। হয়রানির ভয়ে কেউ মোবাইল সেট ফেরত চাইতে যায় না। ইশতিয়াক নামে এক ব্যক্তি জানান, সম্প্রতি তার মামাকে ডিবি পুলিশ গ্রেপ্তার করে। পরে আদালত থেকে তিনি জামিন পান। কিন্তু গ্রেপ্তারের পরপরই পুলিশ তার কাছে থাকা আইপ্যাড মোবাইলটি নিয়ে নেয়। জব্দ তালিকায়ও সেটটির কথা উল্লেখ ছিল না। পরে অহেতুক ঝামেলার কারণে এ নিয়ে পুলিশের সঙ্গে আর যোগাযোগ করেননি। কাঁঠালবাগানের বাসিন্দা পলাশ হাওলাদার নামে এক যুবক জানান, গত বছরের ১৮ই নভেম্বর ক্রিসেন্ট রোড এলাকা থেকে কলাবাগান থানা পুলিশ তাকে আটক করেছিল। আটকের পরপরই পুলিশ তার কাছ থেকে মোবাইল ও মানিব্যাগটি নিয়ে নেয়। দুই মাস পর তিনি জামিনে ছাড়া পেয়ে থানার সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তার কাছে মানিব্যাগ ও মোবাইলফোন ফেরত নিতে গিয়েছিলেন। ওই পুলিশ কর্মকর্তা তাকে মানিব্যাগটি ফেরত দিলেও ভেতরে কোন টাকা ছিল না। অথচ আটকের সময় তার মানিব্যাগে কয়েক হাজার টাকা ছিল। এছাড়া, মোবাইলটি চাইতে গেলে তাকে ধমক দিয়ে তাড়িয়ে দেয়া হয়। খলিলুর রহমান নামে নীলক্ষেতের এক প্রেস ব্যবসায়ী জানান, কিছু দিন আগে যাত্রাবাড়ী এলাকায় পুলিশের একটি টহল টিম তাকে অহেতুক আটক করে গাড়িতে তোলে। এসময় পুলিশ সদস্যরা তার কাছ থেকে মানিব্যাগ ও সঙ্গে আই ফোনটি নিয়ে নেয়। পরে এদিক সেদিক কিছুক্ষণ ঘুরিয়ে গাড়ি থেকে নামিয়ে দেয়। মানিব্যাগ ও ফোন ফেরত চাইলে ইয়াবাসহ আটকের মামলার ভয় দেখায়। বিষয়টি তিনি এক সংবাদকর্মীকে জানালে ওই সংবাদকর্মীর মাধ্যমে মানিব্যাগ ও আই ফোনটি ফেরত পান।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, আটক বা গ্রেপ্তারের বাইরে বিশেষ করে রাতের বেলা টহল পুলিশ ও চেকপোস্টের দায়িত্বে থাকা পুলিশ সদস্যরা মোবাইল সেট হাতিয়ে নিয়ে থাকে বেশি। কেউ প্রতিবাদ করলেই তাকে মামলার ভয় দেখানো হয়। ভয়ে অনেকেই প্রিয় মোবাইল সেটটি পুলিশের হাতে রেখেই চলে যান। তবে একটি সূত্র জানায়, উপ-পরিদর্শক থেকে নিচের পদের পুলিশ সদস্যরা এসব করে থাকে। উপরের পদের পুলিশ সদস্যরা কেউ সামান্য মোবাইলফোন নিয়ে এমন করে না।