1দৈনিক বার্তা: মালদহের মানিকচকের পর এ বার মুর্শিদাবাদের  সাগরদিঘি। সালিশি সভার ‘মাতব্বরি’তে আত্মঘাতী হল এক তরুণী। মৃতের নাম শাহিনা খাতুন (১৯)। তাঁর বাড়ি সাগরদিঘি থানার দিয়ার বালাগাছিতে। শাহিনারা পাঁচ বোন ও দুই ভাই। বছর তিনেক আগে শাহিনার বিয়ে হলেও তা ভেঙে যায়। তার পর থেকেই সে বাবা-মায়ের সঙ্গে দিয়ার বালাগাছিতেই থাকত। ওই গ্রামেরই ছেলে এবাদুল শেখের সঙ্গে তাঁর প্রণয়ের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এবাদুল বিবাহিত হওয়া সত্ত্বেও শাহিনাকে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দেয়। গত বৃহস্পতিবার বিকেলে এবাদুল ও শাহিনা মোটরবাইকে করে গ্রাম থেকে পালায়। ওই দিন রাত ১১টা নাগাদ দু’জনকে সন্দেহজনক ভাবে ঘোরাফেরা করতে দেখে আটক করে বহরমপুর থানার পুলিশ। খবর যায় এবাদুলের বাড়িতে। তাদের বাড়ির লোকেরা পরের দিন অর্থাত্ শুক্রবারই হাজির হন থানায়। মেয়ের বাবা-মাকেও ডাকা হয়। দু’পক্ষই পুলিশের সঙ্গে আলোচনা করে এবাদুল ও শাহিনাকে বাড়িতে নিয়ে আসেন। বিষয়টি এখানেই থেমে থাকেনি।

শনিবার রাত্রে বিষয়টি নিয়ে গ্রামে সালিশি সভার ব্যবস্থা করা হয়। স্থানীয় এক নেতার বাড়িতে ওই সভা বসে। সেখানে এবাদুল-শাহিনা এবং তাদের বাবা-মা এবং নিকটাত্মীয়দের ডাকা হয়। সভায় শাহিনাকে গোটা বিষয়টি বর্ণনা করতে বলা হয়। এ সবের মধ্যেই শাহিনাকে বিয়ে করতে বেঁকে বসে এবাদুল। ‘মাতব্বর’রাও জরিমানার বিনিময়ে এবাদুলের পক্ষে সায় দেন। তাঁর পরিবারকে ১১ হাজার টাকা এবং শাহিনার পরিবারকে এক হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। মিলিত ১২ হাজার টাকার মধ্যে শাহিনার পরিবারকে ‘ক্ষতিপূরণ’ হিসাবে দশ হাজার টাকা দেওয়ার কথা ঘোষণা করে বিষয়টি মিটিয়ে নিতে বলেন ‘মাতব্বর’রা।
সালিশি সভায় রায় ও এবাদুলের ‘বিশ্বাসঘাতকতা’ মেনে নিতে পারেননি শাহিনা। মানসিক ভাবে তিনি এতটাই বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন যে রবিবার দুপুরে গলায় দড়ি দিয়ে আত্মঘাতী হন বলে অভিযোগ। এই ঘটনার পর পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য শাহিনার বাবা-মা’কে আটক করে। শাহিনার বাবা বলেন, “মেয়ে কেন এ রকম কাণ্ড ঘটাল জানি না।” তরুণীর কাকা সেন্টু শেখ জানিয়েছেন, শাহিনার আপত্তির বিষয়টি বুঝতে পারিনি। অশান্তির ভয়েই মেয়ের পক্ষ থেকেই বিষয়টা মেনে নেওয়া হয়েছিল। তৃণমূলের পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য কিনার হোসেন বলেন, “ আমি সালিশি সভার বাইরে ছিলাম। সম্ভবত মেয়েটি জরিমানার বিষয়টি মেনে নিতে পারেনি।”
মুর্শিদাবাদের পুলিশ সুপার হুমায়ুন কবীর বলেন, “সালিশি সভা করে কারও উপর জোর করে মত চাপিয়ে দেওয়া যায় না। জরিমানা করাটাও ঠিক হয়নি। তরুণীর বাবা মাকে জিজ্ঞাসাবাদের পর সমস্ত রকম আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” জঙ্গিপুর থানার আইসি-কে বিষয়টি নিয়ে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন পুলিশ সুপার।