দৈনিক বার্তা:  3পশ্চিমবঙ্গের সাত আমলাকে শাস্তিমূলক বদলির যে নির্দেশ নির্বাচন কমিশন দিয়েছে তা রাজ্য সরকার না মানলে নির্বাচন কমিশন কঠোর পদক্ষেপ নিতে পারে বলে জানা গেছে। এই পদক্ষেপের মধ্যে রয়েছে সংশ্লিষ্ট জেলার নির্বাচন বাতিল কিংবা সংশ্লিষ্ট জেলাগুলির নির্বাচন পিছিয়ে দেয়া কিংবা পরবর্তী সময়ে উপনির্বাচনের ব্যবস্থা করা । নির্বাচন কমিশন রাজ্য সরকার ২৪ ঘন্টার মধ্যে কি পদক্ষেপ নেয় তা দেখেই ব্যবস্থা নেবে বলে জানানো হয়েছে।  গত সোমবারই নির্বাচন কমিশন পক্ষপাতমূলক আচরণের অভিযোগে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা হিসেবে রাজ্যের চার জেলার পুলিশ সুপারকে নির্বাচনের কাজ থেকে সরিয়ে দিয়েছে। একজন পুলিশ সুপারকে অবশ্য অন্য জেলায় বদলি করা হয়েছে। এছাড়া দুই জেলার এডিএমকে এবং এক জেলাশাসককে নির্বাচনের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের এই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী  মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এতটাই ক্ষুব্ধ হয়েছেন যে, তিনি বলেছেনÑ কোন অফিসারকে তিনি বদলি হতে দেবেন না। নির্বাচন কমিশনকে সরাসরি চ্যালেঞ্জ জানিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, আমি যতক্ষণ দায়িত্বে রয়েছি ততক্ষণ নির্বাচন কমিশন একজনকেও বদলি করে দেখুক। বদলি মানবেন না বলে মন্তব্য করে তিনি বলেছেন, নির্বাচন কমিশন কংগ্রেস, বিজেপি ও সিপিআইএমের দালালে পরিণত হয়েছে। তার প্রশ্ন, কেন কংগ্রেস বা বিজেপি শাসিত রাজ্যে এধরনের বদলি হচ্ছে না। গত রবিবার দেশের মুখ্য নির্বাচন কমিশনার  ভিএস সম্পত কলকাতায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের কাছ থেকে অভিযোগ শোনেন। বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলির পক্ষ থেকে রাজ্যের বেশ কয়েকজন শীর্ষ পুলিশ কর্তা এবং প্রশাসনিক আধিকারিকের বিরুদ্ধে পক্ষপাতের অভিযোগ করেন। সেই সময়ই মুখ্য নির্বাচনী কমিশনার অভিযোগ খতিয়ে দেখে দ্রুত ব্যবস্থা নেবার কথা জানিযেছিলেন। পরে দিনের শেষে এক সাংবাদিক বৈঠকে সম্পদ বলেন যে, কমিশনের কাছে সব তথ্য রয়েছে সেগুলি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। আর তার পরই সোমবার  নির্বাচন কমিশন মালদহ, বীরভূম, বর্ধমান, মুর্শিদাবাদ এবং পশ্চিম মেদিনীপুরের পুলিশ সুপারকে বদলির নির্দেশ দিয়েছে। একই সঙ্গে বদলির নির্দেশ  দেয়া হয়েছে উত্তর চব্বিশ পরগনার জেলাশাসককে সঞ্জয় বনশাল এবং পশ্চিম মেদিনীপুরের এডিএম অরিন্দম দত্ত এবং দক্ষিণ ২৪ পরগণার এডিএম অলোকেশ প্রসাদ রায়কে। কিন্তু এই নির্দেশকে সরাসরি মুখ্যমন্ত্রী চ্যালেঞ্জ জানানোয় সাংাবিধানিক সঙ্কট তৈরি হওয়ার পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। ভারতের উপ-নির্বাচন কমিশনার স্পষ্ট করে জানিয়েছেন, নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণা হওয়ার পর থেকে রাজ্যগুলির প্রশাসন নির্বাচন কমিশনের আওতায় চলে আসে। সংবিধানের ৩২৪(১) ধারায় বলা হয়েছে লোকসভা, বিধানসভা,  প্রেসিডেন্ট, ও ভাইস পেসিডেন্ট নির্বাচনের ভোটার তালিকা তৈরি থেকে নির্বাচন পরিচালনা পর্যন্ত যাবতীয় কাজের তত্ত্বাবধান, পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব পুরোপুরি নির্বাচন কমিশনের। নির্বাচন কমিশনের কাজে প্রশাসন কোনভাবেই হস্তক্ষেপ করতে পাওে না। কিন্তু মমতা যেভাষায় নির্বাচন কমিশনের নির্দেশের সমালোচনা করেছেন তা সংবিধান বিরোধী কাজ বলে অনেক সংবিধান বিশেষজ্ঞ মনে করছেন। তবে নির্বাচন কমিশন রাজ্যে স্বরাষ্ট্র বা মুখ্যসচিবের চিঠি পাওয়ার পরই পরিস্থিত বিচেনায় বৈঠকে বসেবেন বলে জানা গেছে।  পশ্চিমবঙ্গে আগামী ১৭ই এপ্রিল থেকে ৫ ধাপে নির্বাচন হবে।