3দৈনিক বার্তা:  একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তির (ফাঁসি) দাবিতে গড়ে ওঠা গণজাগরণ মঞ্চে বিরোধ তৈরি হওয়ার জন্য মঞ্চের মুখপাত্র ডা. ইমরান এইচ সরকারকে দায়ী করেছে মঞ্চের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট পাঁচটি বামপন্থী ছাত্র সংগঠন।

 তারা বলছে- ২০১৩ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি আন্দোলন শুরু পর একপর্যায়ে মঞ্চের মুখপাত্র ডা. ইমরানের অগণতান্ত্রিক ও একতরফা সিদ্ধান্তের কারণে মঞ্চে অংশগ্রহণকারী বিভিন্ন পক্ষের  মধ্যে ক্ষোভ, অসন্তোষ ও হতাশা সৃষ্টি হয়। এতে আন্দোলনের মূল উদ্দেশ্য ব্যাহত হয়; সৃষ্টি হয় গতিহীনতা।
গণজাগরণ মঞ্চকে রাজনৈতিক দলে রূপ দেওয়া নিয়ে মুখপাত্র ডা. ইমরান যে বক্তব্য দিয়েছেন তার সঙ্গেও একমত নয় সংগঠন পাঁচটি।
মঙ্গলবার দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে এক সংবাদ সম্মেলনে নিজেদের এই অবস্থান তুলে ধরে তারা। বামপন্থী সংগঠন পাঁচটি হলো- বাংলাদেশ ছাত্রমৈত্রী, জাসদ ছাত্রলীগ, বাংলাদেশ ছাত্র আন্দোলন, ছাত্র ঐক্য ফোরাম ও বাংলাদেশ ছাত্র সমিতি।
প্রসঙ্গত, শাহবাগ আন্দোলনের স্থায়িত্বের কারণে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে সোমবার ডা. ইমরান বলেন, ‘গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলন একটি রাজনৈতিক ও সামাজিক আন্দোলন। জনগণই এ আন্দোলনের অভিভাবক। তাই জনগণই সিদ্ধান্ত নেবে, গণজাগরণ মঞ্চ রাজনৈতিক দল হবে কি হবে না।’
এ বিষয়ে বক্তব্য দিতে এবং গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলন কীভাবে আরও সামনের দিকে নিয়ে যাওয়া যায় সে বিষয়ে বক্তব্য তুলে ধরতে মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন মঞ্চের অন্যতম সংগঠক ও ছাত্রমৈত্রীর সভাপতি বাপ্পদিত্য বসু।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘গণজাগরণ মঞ্চকে রাজনৈতিক দলে রূপান্তরের যে বক্তব্য ডা.ইমরান দিচ্ছেন সেটা কোনোভাবে হতে পারে না। কারণ, মঞ্চ অরাজনৈতিক আন্দোলন; ডা. ইমরান যদি এটাকে রাজনৈতিক সংগঠন করতে চান তা হলে ভুল করবেন।’
লিখিত বক্তব্যে বাপ্পদিত্য বসু বলেন, ‘আমরা কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠী স্বার্থের কাছে গণজাগরণ মঞ্চের মহতী সংগ্রামকে জলাঞ্জলি দিতে একবিন্দু রাজি নই। প্রয়োজন হলে আমাদের সবার চোখের মণি গণজাগরণ মঞ্চকে রক্ষা করতে বিবদমান দুইপক্ষ এবং মুক্তিযুদ্ধ ও গণজাগরণ মঞ্চের সহযোগী সকল রাজনৈতিক সামাজিক, সাংস্কৃতিক ব্যক্তি ও সংগঠনকে নিয়ে আলোচনা করে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবো।’
একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তিসহ ৬ দফা দাবি আদায়ে গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলন অব্যাহত থাকবে জানিয়ে বাপ্পাদিত্য বসু বলেন, ‘কেউ যদি ভিন্ন কোনো উচ্চাভিলাসী স্বপ্ন দেখে থাকেন তবে সেটা গণজাগরণ মঞ্চের ভেতরে থেকে নয়। বরং মঞ্চ থেকে বাইরে গিয়ে সেই স্বপ্ন তাকে দেখতে হবে।’
গণজাগরণ মঞ্চে বিরোধ তৈরি হওয়ার কারণ সম্পর্কে লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘সকলের সম্মিলিত মতামতের ভিত্তিতে গৃহীত সিদ্ধান্ত ও কর্মসূচি উপস্থাপনের দায়িত্ব দেওয়া হয় ইমরানের ওপর। শুরু থেকে সেভাবেই চলে আসছিল। কিন্তু পরবর্তী সময়ে মুখপাত্রের অগণতান্ত্রিক ও একতরফা সিদ্ধান্তের কারণে মঞ্চে অংশগ্রহণকারী বিভিন্ন পক্ষের  মধ্যে ক্ষোভ, অসন্তোষ ও হতাশা সৃষ্টি হয়। এতে আন্দোলনের মূল উদ্দেশ্য ব্যাহত হয়; সৃষ্টি হয় গতিহীনতা।’
সংবাদ সম্মেলনে জাসদ ছাত্রলীগের সভাপতি শামসুল ইসলাম সুমন, বাংলাদেশ ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক মঞ্জুর রহমান মিঠু, ছাত্র ঐক্য ফোরামের আহ্বায়ক সোহান সোবহান, বাংলাদেশ ছাত্র সমিতির জাহিদুর রহমান খান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।