4দৈনিক বার্তা: বরিশাল সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ও সদর আসনের সংসদ সদস্য শওকত হোসেন হিরণ আর নেই (ইন্না লিলাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। বুধবার সকাল ৭ টায় রাজধানীর অ্যাপোলো হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন তিনি। সাংসদ শওকত হোসেন হিরনের মৃত্যুতে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। তারা শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা জানান। এদিকে হিরনের মৃত্যুর সংবাদে বরিশালের রাজনৈতিক অঙ্গনে শোকের ছায়া নেমে আসে।

সাংসদ জাহাঙ্গীর কবির নানক জানান, বিকেল ৪টায় জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় শওকত হোসেন হিরনের প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। এরপর রাতেই হেলিকপ্টার বা অ্যাম্বুলেন্সযোগে তার মরদেহ বরিশালে নিয়ে যাওয়া হবে। বরিশালের আলেকান্দার নিজ বাসভবনের পাশের পারিবারিক কবরস্থানে হিরনকে দাফনের কথা রয়েছে।
গত ২২ মার্চ রাত ১০টায় হিরণ বরিশাল ক্লাবের সামনে ব্রেইন স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে হঠাৎ পড়ে গিয়ে মাথায় গুরুতর আঘাত পান এবং অচেতন হয়ে পড়েন। তাৎক্ষণিক তাকে শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা তাকে আইসিইউতে স্থানান্তর করেন। পরে রাত সাড়ে ১২টার দিকে অবস্থার অবনতি হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকায় অ্যাপোলো হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়।
অ্যাপোলো হাসপাতালে ২৩ মার্চ হিরণের মস্তিষ্কে ‘ডিকমপ্রেসিভ ক্রানেকটমি’ নামে একটি অস্ত্রোপচার করা হয়। পরে মেডিকেল বোর্ডের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ২৪ মার্চ রাতে তাকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুর নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে ৩ এপ্রিল তাকে ঢাকায় এনে অ্যাপোলো হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে বুধবার সকাল সাতটায় তিনি ইন্তেকাল করেন।
এদিকে হিরনের মৃত্যুর সংবাদে বরিশালের রাজনৈতিক অঙ্গনে শোকের ছায়া নেমে আসে। দলমত-নির্বিশেষে সবাই কালো ব্যাজ ধারণ করেন। ইতিমধ্যে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়, বরিশালের শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ, বিএম কলেজ, হাতেম আলী কলেজ, বরিশাল কলেজ, ইসলামী কলেজ, সিটি কলেজসহ সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নির্ধারিত পরীক্ষা স্থগিত ঘোষণাসহ বিদ্যালয়গুলোতে ক্লাস স্থগিত করা হয়।
সাংসদ শওকত হোসেন হিরন স্ত্রী, এক মেয়ে ও এক ছেলেসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। কিছুদিন আগে সুইডেনে পড়াশোনারত বড় মেয়ে রোশনী হোসেন তৃণার বিয়ে দিয়েছিলেন তিনি। ছোট ছেলে সাজিদ হোসেন রাফসান ঢাকার বিএএফ শাহিন কলেজ থেকে এবার এইচএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে।
১৯৫৬ সালের ১৫ অক্টোবর পটুয়াখালীর বাউফলে জন্ম নেন শওকত হোসেন হিরন। তার বাবার নাম মৃত আবুল হাশেম মিয়া ও মা মৃত জয়নব বেগম। ১৯৭৩ সালে সক্রিয় রাজনীতিতে হাতেখড়ি হয় বরিশাল ল কলেজ থেকে এলএলবি পাস করা হিরনের। ওই বছর তিনি জাসদ ছাত্রলীগে যোগদান করেন। ১৯৭৯ সালে জাসদ ছাত্রলীগ ছেড়ে বিএনপির ছাত্ররাজনীতির সঙ্গে জড়ান তিনি।
১৯৮৬ সালে তিনি যুক্ত হন এরশাদের জাতীয় পার্টির সঙ্গে। সর্বশেষ ১৯৯৬ সালে তিনি আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে আওয়ামী লীগে যোগদান করেন। এবং তৎকালীন চিফ হুইপ আবুল হাসানাত আবদুল্লাহের হাত ধরে স্থানীয় আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে যোগ দেন। এ ছাড়া তিনি এরশাদ সরকারের আমলে বরিশাল সদর উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন। তবে পরে দুবার জাতীয় পার্টি প্রার্থী হিসেবে বরিশাল-৫ (সদর) আসন থেকে নির্বাচনে অংশ নিয়েও পরাজিত হন। ২০০৮ সালের বরিশাল সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগের সমর্থন নিয়ে মেয়র নির্বাচিত হন। তবে ২০১৩ সালের ১৫ জুন সিটি নির্বাচনে তিনি বিএনপি-সমর্থিত প্রার্থী আহসান হাবিব কামালের কাছে পরাজিত হন। পরে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে তিনি বরিশাল সদর আসন থেকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সাংসদ নির্বাচিত হন।
পেশায় ঠিকাদার ও ব্যবসায়ী শওকত হোসেন হিরন সাউথ অ্যাপোলো মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল লিমিটেড, বেলস লিমিটেড, বেলস ফার্মা ইউনানি প্রাইভেট লিমিটেড, অ্যাভান্স অ্যাসোসিয়েট প্রাইভেট লিমিটেডের চেয়ারম্যান, এইচপিএল ও এইচপিএল শিপিং এবং সাউথ বেঙ্গল পরিবহনের স্বত্বাধিকারী, সাউথ অ্যাপোলো ডায়াগনস্টিক কমপ্লেক্স প্রাইভেট লিমিটেড ও বেলভিউ মেডিকেল সার্ভিস প্রাইভেট লিমিটেডের পরিচালকসহ অন্তত ১১টি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।
হিরনের স্ত্রী জীবুন্নেছা আফরোজ একজন সমাজসেবক। নগরীর দক্ষিণ আলেকান্দার খালেদাবাদ কলোনি এলাকার ডেঙ্গু সরদার রোডের ওহাব বাড়ির ‘হিরন পয়েন্ট’ নামের বাসায় তিনি পরিবার নিয়ে বসবাস করতেন।