1দৈনিক বার্তা: তিস্তা চুক্তি করতে সরকার সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। আজ বেলা সাড়ে ১১টায় টাঙ্গাইলের বাইপাস মোড়ে লংমার্চের তৃতীয় পথসভায় তিনি এ মন্তব্য করেন। মির্জা আলমগীর বলেন, আমাদের লংমার্চের উদ্দেশ্য হলো জনগণকে সচেতন করে পানির ন্যায্য হিস্যার দাবি আদায়ের আন্দোলনে সম্পৃক্ত করা। পানির ন্যায্য হিস্যার দাবি আদায়ের উদ্যোগ নিতে সরকারকে বাধ্য করা। এটি আমাদের জীবন-মরণের সমস্যা। তিনি বলেন, ২০০৮ সালে ৯ম জাতীয়  নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগ অঙ্গীকার করেছিলÑ তারা ক্ষমতায় গেলে ভারতের সঙ্গে তিস্তাচুক্তি করবে। কিন্তু গত ৫ বছরে তারা এই চুক্তি করতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। উল্টো দিনের পর দিন মানুষ পানির ন্যায্য দাবি থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি বলে দিয়েছেনÑ তিস্তাচুক্তি হবে না। মির্জা আলমগীর বলেন, দেশ আজ ঘোর বিপদগ্রস্ত। ৫৪টি অভিন্ন নদীর পানি ভারত একতরফাভাবে প্রত্যাহার করে নিচ্ছে। তাই এখন আর বসে থাকার সুযোগ নেই। আমাদের আন্দোলন করবে। ন্যায্য অধিকারের দাবি আদায়ে আমাদের সোচ্চার হতে হবে। এই লংমার্চের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে পৌঁছে দিতে হবে। বর্তমান সরকারকে ব্যর্থ ও নির্যাতিত আখ্যায়িত করে মির্জা আলমগীর বলেন, টাঙ্গাইল জেলাবাসীর প্রাণপ্রিয় নেতা আবদুস সালাম পিন্টুকে অন্যায়ভাবে অর্ধযুগের বেশি সময় ধরে কারারুদ্ধ করে রেখেছে। আমরা তার মুক্তি দাবি করছি। সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, আইয়ুব খান, শেখ মুজিবুর রহমান ও স্বৈরশাসক এরশাদও পারেনি। আপনারা পারবেন না। তাই অতিদ্রুত নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের আয়োজন করুন।
এর আগে পানির ন্যায্য হিস্যার দাবিতে তিস্তা অভিমুখে আজ সকাল ৯টায় রাজধানীর আজমপুরের আমীর কমপ্লেক্সের সামনে থেকে পথসভার মধ্য দিয়ে বিএনপির লংমার্চের যাত্রা শুরু হয়। লংমার্চের উদ্বোধনী পথসভায় বক্তব্য রাখেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, আমাদের এই লংমার্চ সরকারের বিরুদ্ধেও নয়, ভারতের বিরুদ্ধেও নয়। এই লংমার্চ বাংলাদেশের মানুষের পক্ষে। বাংলাদেশের মানুষের অধিকার রক্ষায় এই কর্মসূচি। তিনি বলেন, আগে তিস্তা অববাহিকায় ২৫০০ কিউসেক পানি পাওয়া যেত, আর এখন নদীর উজানে বিভিন্ন পয়েন্টে ভারতের অব্যাহত পানি প্রত্যাহারের কারণে তা ৪০০ কিউসেকে নেমে এসেছে। এখন দেশের উত্তরাঞ্চলের কৃষি ব্যবস্থা ধ্বংসের মুখোমুখি। রীতিমতো মরুকরণ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে  সেখানে।  দুর্যোগ নেমে এসেছে কৃষকের জীবনে।  মির্জা আলমগীর বলেন, বিএনপি আয়োজিত লংমার্চের যাত্রাপথের প্রতিটি জেলা উপজেলাসহ দুটি বিভাগের বিএনপি নেতাকর্মীদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষ অংশ নেবে। এই কর্মসূচি শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি। এসময় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, ভাইস  চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক খায়রুল কবির খোকন, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক আসাদুজ্জামান রিপন, নাজিমউদ্দিন আলম, ঢাকা মহানগরের সদস্য সচিব আবদুস সালাম, ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক শহীদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, ছাত্রদলের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল হক নাসিরসহ অঙ্গদলের সিনিয়র নেতারা উপস্থিত ছিলেন। পথসভায়  ঢাকা মহানগর ও পাশ্ব্র্বর্তী জেলা মুন্সীগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী থেকে তিন শতাধিক গাড়ি লংমার্চের বহরে অংশ নিয়েছে। এদিকে লংমার্চে যাওয়ার পথে গাজীপুরের কালিয়াকৈর, টাঙ্গাইল বাইপাস মোড, সিরাজগঞ্জের কড্ডার মোড় ও বগুড়ার মাটিডালি মোড়, গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ ও  পলাশবাড়ীতে পথসভা হবে। রংপুরে রাতযাপন শেষে আগামীকাল সকালে সেখানে একটি পথসভা হবে। ডালিয়ায় তিস্তা ব্যারেজের কাছে সমাবেশের মধ্য দিয়ে দুদিনের লংমার্চ শেষ হবে। ওদিকে লংমার্চে ব্যারেজের সমাবেশে বিপুলসংখ্যক লোকসমাগম ঘটাতে বিশেষ প্রস্তুতি নিয়েছে রংপুর বিভাগের আট জেলা বিএনপি। রংপুর বিভাগের নীলফামারী, লালমনিরহাট, রংপুর, কুড়িগ্রাম, পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, দিনাজপুর ও গাইবান্ধা থেকে কমপক্ষে চার লাখ মানুষের সমাবেশ করতে চায় দলটি। এরই মধ্যে তিস্তা অভিমুখে লংমার্চ কর্মসূচি শেষ করেছে বামপন্থি দল সিপিবি ও বাসদ।
এদিকে লংমার্চ সকাল সাড়ে নটায় গাজীপুরের ভোগড়া  বাইপাস মোড় অতিক্রম করেছে। এ এসময় যুবদল জেলা সভাপতি এমদাদ খানের নেতৃত্বে সহস্রাধিক নেতাকর্মী লংমার্চে অংশ নেয়া নেতাদের স্বাগত জানান।