2দৈনিক বার্তা: ভারতের কংগ্রেস দলের ভাইস প্রেসিডেন্ট রাহুল গান্ধী বলেছেন, নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে বিজেপির আদর্শ এক ‘ ভয়ঙ্কর রূপ লাভ করেছে। ফলে চলমান নির্বাচন কিছুটা শালীনতা হারিয়েছে যা জাতীয় দলগুলোর মধ্যে ঐতিহাসিকভাবে বিরাজমান ছিল।রাহুল গান্ধী ভারতের ইংরেজি দৈনিক দ্য হিন্দুকে দেয়া এক একান্ত সাক্ষাতকারে এ কথা বলেন।

রাহুল তার ব্যক্তিত্ব ও রাজনৈতিক আদর্শকে মোদির তুলনায় চরিত্রগতভাবে এবং মৌলিকভাবে আলাদা করে তুলে ধরে বলেন, মোদির নেতৃত্বে বিজেপি ঔদ্ধত্য, আক্রোশ ও বিভাজনের রাজনীতি করছে।
রাহুল গান্ধী বলেন, কিন্তু আমার সংকল্প সুদৃঢ় এবং এই ধারার রাজনীতি এবং যারা ওর চর্চা করে তাদের প্রতি এক বিখ্যাত উক্তি উদ্ধৃত করে বলতে চাই, তোমরা তোমাদের সবচেয়ে খারাপটা করো আমরা আমাদের সবচেয়ে ভালেটাা করবো।

মোদির শেহজাদা (রাজপুত্র) বলে বিদ্রƒপের জবাবে রাহুল বলেন, মোদিজি আমাকে যা বলতে চান, আমার দিকে যেসব কটুকথা ছুঁড়ে দিতে চান তার সঙ্গে আমার সম্পর্ক নাই। ওসবের সঙ্গে তারই সম্পর্ক রয়েছে। মোদিজি আমাকে যেসব উপহার দিতে চাচ্ছেন আমি তার কোনোটি গ্রহণ করার কোনো প্রয়োজন দেখছি না। তিনি তা নিজের কাছেই রেখে দিতে পারেন।রাহুল বলেন, বিদ্রƒপ তাকে রাগান্বিত করে না।

রাহুল বিজেপির বিরুদ্ধে একটি কঠোর সাম্প্রদায়িক ও কেন্দ্রীকরণ প্রবণতা লালন করার অভিযোগ করে বলেন, এটি গরীব ও সুবিধাবঞ্চিত মানুষদের কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে উঠে দাঁড়ানো অসম্ভব করে তুলবে।তিনি বলেন, মনে হচ্ছে তাদের চিন্তা-ধারায় সহিষ্ণুতার স্থান খুবই কম।

তার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার প্রত্যাশা প্রসঙ্গে রাহুল গান্ধী বলেন, তার রাজনীতি প্রতি অনুরাগ কোনো নির্দিষ্ট পদের ঊর্ধ্বে। তবে প্রয়োজন দেখা দিলে তিনি পিছ পা হবেন না।

রাহুল বলেন, যদি এই উচ্চাশা (সাধারণ নাগরিকদের কণ্ঠস্বর তুলে ধরা) অর্জনের জন্য আমার কোনো পদ গ্রহণের প্রয়োজন দেখা দেয় তাহলে আমি পিছ পা হবো না।

মোদি বিকেন্দ্রীকরণ এবং গরীবদের ক্ষমতায়নের কথাও বলছেন এ বিষয়টির দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে রাহুল বলেন, মোদির যদি এখন এসবে বিশ্বাস হয় তাহলে আমি আমাদের নিজেদের প্রচারণাকে অভিনন্দন জানাবো। নিশ্চয় লড়াইয়ে আমরাই জিতবো।

রাহুল গান্ধী বলেন, ‘তিনি ধীরে ধীরে আদভানীজি ও সুষমা স্বরাজজি থেকে মুরালি মনোহর যোশিজি পর্যন্ত সকল জ্যেষ্ঠ বিজেপি নেতাকে কোনঠাসা করে ফেলেছেন। এসব কি ১২৫ কোটি জনগণকে সঙ্গে নিয়ে কাজ করার উদাহরণ?

ভারতের লোকসভা নির্বাচনের ষষ্ঠ দফায় ১১টি রাজ্যে ১১৭ আসনে বৃহস্পতিবার সকাল  থেকে  ভোট গ্রহন হয়েছে। এই দফায় প্রায় ১৮ কোটি ভোটার ভাগ্য নির্ধারণ করবেন ২০৭৬ জন প্রার্থীর। প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং এবং তার স্ত্রী আসামের  গৌহাঠিতে ভোট  দেন।পশ্চিমবঙ্গের ৬টি আসনের ১৪টি, বিহারের ৪০টি, ছত্তীশগড়ের ১১ টি, ঝাড়খণ্ডের ১৪টি, উত্তর প্রদেশের ৮০টি, মধ্য প্রদেশের ২৯টি, রাজস্থানের ২৫টি, মহারাষ্ট্রের ৪৮টি, তামিলনাডুর ৩৯টি, জম্মু-কাশ্মীরের ৬টি এবং কেন্দ্র শাসিত অঞ্চল পুদুচেরির একটি আসনে চলছে ভোট গ্রহণ।

এই দফায় ভোট ময়দানে নিজেদের ভাগ্য পরীক্ষায় নেমেছেন বেশ কিছু হেভিওয়েট প্রার্থী। এদের মধ্যে রয়েছেন বিজেপির সুষমা স্বরাজ, সমাজবাদী দলের মুলায়ম সিং যাদব, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা কংগ্রেস নেতা সালমন খুরশিদ, কংগ্রেসের মোহাম্মদ আজহারউদ্দিন ও হেমা মালিনী।

এ দিন সকাল সকাল ভোট দিলেন দেশের বিভিন্ন প্রান্তের সেলিব্রিটিরা। সুপার স্টার রজনীকান্ত  থেকে শুরু করে সস্ত্রীক আমির খান, সানি দেওল, রেখা, সোনম কাপুরের মতো তারকারা। পরিবারের সঙ্গে সকাল সকাল ভোট দিয়েছেন অভিনেত্রী বিদ্যা বালান।

তিনি ভোট দিয়ে বেরিয়ে তার প্রাথমিক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ভোট দেয়া গণতান্ত্রিক অধিকার, তাই হাজারো ব্যস্ততা থাকলেও গুরুত্বপূর্ণ এই কাজের জন্য সময় বের করতে কারো সমস্যা হওয়া উচিত নয়।’জন্মদিনের সকালে নিজের ভোটাধিকার প্রয়োগ করলেন শচীন টেন্ডুলকর। মুম্বাইয়ে  ভোট  কেন্দ্রে সপরিবারে ভোট দেন শিল্পপতি অনিল আম্বানি।

এদিকে ক্রিকেটার ও ভারতের রাজ্য সভার সদস্য শচীন টেন্ডুলকার তার ফেসবুকে ভোটাধিকার প্রয়োগের জন্যে দেশের সকল নাগরিকের প্রতি আহবান জানিয়েছেন।

গত ১৭ এপ্রিল পশ্চিমবঙ্গে প্রথম পর্বে অনুষ্ঠিত হয় চারটি আসনে নির্বাচন। আসনগুলো হলো দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ার ও কুচবিহার।

আজ নির্বাচন হচ্ছে, রায়গঞ্জ, বালুরঘাট, মালদহ (উত্তর), মালদহ (দক্ষিণ), জঙ্গিপুর এবং মুর্শিদাবাদ এই ছয়টি আসনে। সব আসনেই তৃণমূল কংগ্রেস, জাতীয় কংগ্রেস, বামফ্রন্ট এবং বিজেপির প্রার্থী রয়েছেন। মোট প্রার্থী ৭৮ জন। এর মধ্যে নারী প্রার্থী মাত্র চারজন।

পশ্চিমবঙ্গে  মূলত নির্বাচন হয় কংগ্রেস ঘাঁটিতে। এই ছয়টি আসনের মধ্যে ২০০৯ সালের নির্বাচনে পাঁচটি আসনে জিতেছিল কংগ্রেস, আর একটিতে বামফ্রন্ট।