2দৈনিক বার্তা: ব্যাংকগুলোকে সামাজিক দায়বদ্ধতার (সিএসআর) পরিসীমা বাড়ানোর আহ্বান জানিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নর ড. আতিউর রহমান বলেছেন,  যে সমাজ  থেকে লাভ নিচ্ছেন  সে সমাজে কিছু  ফেরত  দেবেন সেটাই কাম্য। ড. আতিউর রহমান বলেন, ব্যাংক ব্যবসা অন্য দশটি ব্যবসার মত নয়। বড় বড় ডিপোজিটরদের আস্থার জায়গা। এখানে মানুষ অর্থ জমা রাখেন। যে সমাজ  থেকে লাভ নিচ্ছেন সামাজিক দায়বদ্ধতা  থেকে  সে সমাজের জন্য কিছু করতে হবে।

শনিবার রাজধানীতে অনুষ্ঠিত ব্যাংকিংখাতে সামাজিক দায়বদ্ধতা (সিএসআর) সংক্রান্ত নীতি সমর্থনের ওপর এক  গোলিটেবিল আলোচনায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নর একথা বলেন।মিরপুরে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্ট (বিআইবিএম) মিলনায়তনে এ আলোচনায় বাংলাদেশ ব্যাংক ছাড়াও বিভিন্ন ব্যাংকের নির্বাহী, ব্যাংকিং  সেক্টরের সংশি¬ষ্ট ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।

ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড রিসার্স  ডেভেলপমেন্ট ইনিশিয়েটিভ (এমআরডিআই) আয়োজিত আলোচনায় মূল প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের  ডেপুটি গভর্নর এস কে সুর চৌধুরী।ড. আতিউর রহমান বলেন, বর্তমানে কর  রেয়াত সুবিধা  পেতে  বেশ কঠিন কিছু শর্ত পরিপালন করতে হয়। এসব শর্ত সহজ করা হলে ব্যাংকগুলো সিএসআর খাতে অর্থব্যয়ে আরও আগ্রহী হবে।তাই আয়কর  রেয়াত পাওয়ার অন্য শর্তগুলোও আরও সহজ করার জন্য জাতীয় রাজস্ব  বোর্ডসহ সংশি¬ষ্ট সব পক্ষের কাছে দাবি জানান গভর্নর।

গভর্নর বলেন, সিএসআর খাতে  কোনো  কোম্পানির ব্যয়িত প্রকৃত অর্থের ওপর ১০ শতাংশ পর্যন্ত আয়কর রেয়াত সুবিধা রয়েছে। তবে, এ আয়কর রেয়াতের সুবিধা  পেতে  বেশকিছু শর্ত আরোপ করা হয়েছে। একটি শর্ত হচ্ছে কোম্পানির  মোট আয়ের ২০ শতাংশ বা ৮  কোটি টাকা এর মধ্যে  যেটি কম, তার অধিক ব্যয়িত অর্থের ক্ষেত্রে আয়কর  রেয়াত প্রযোজ্য হবে না। সিএসআর ব্যয়ের খাতগুলো সরকার অনুমোদিত হতে হবে প্রভৃতি।

ট্যাক্স রিবেট সুবিধা পাওয়ার জন্যে সিএসআর ব্যয়ের ন্যূনতম সীমা ৮ কোটি টাকার বেশি হওয়া উচিৎ বলে তিনি মনে করেন। কেননা,কোনো কোনো ব্যাংক এখন এর চেয়ে অনেক  বেশি পরিমাণে সিএসআর ব্যয় করছে বলে তিনি জানান।

তিনি বলেন, সামাজিক দায়বদ্ধতা সমাজের মই। এ মই বেয়ে যারা ওপরে ওঠবে তারাই একদিন সমাজের দায়িত্ব  নেবে। সামাজিক দায়বদ্ধতার ফলে বিভিন্ন সম্ভাবনা তৈরি হচ্ছে। আমরা  সেই বৃহত্তর দৃষ্টিভঙ্গী  থেকে কাজ করছি।

আতিউর রহমান বলেন, আমাদের নিজস্ব প্রডাক্ট এবং নিজস্ব ব্র্যান্ড থাকতে হবে। এজন্য গবেষণা কাজে প্রয়োজনে ট্যাক্স ফ্রি গবেষণা হতে পারে।

গার্মেন্টসকে ‘লাইফ লাইন’ উলে¬খ করে এক্ষেত্রে কমপ¬ায়েন্সের জন্য ব্যাংকগুলোকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান গভর্নর। এজন্য যত রকমের সহায়তা দেওয়া যায় দেওয়া হবে, বলেন গভর্নর।

অন্যান্য ব্যাংকগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়ে গভর্নর বলেন, আপনারা আমরা মিলে একটা তহবিল  তৈরি করতে পারলে ভালো হবে।বাংলাদেশ ব্যাংকসহ অন্যান্য ব্যাংকের কৃষি ঋণ বিতরণ, মোবাইল ব্যাংকিং, বর্গাচাষি ও পথশিশুদের ব্যাংক হিসাব  খোলাকে সিএসআরের অংশ উলে¬খ করে তিনি বলেন, এসব কাজ অব্যাহত রাখতে হবে।

পাশাপাশি সিএসআরে অর্থ  যেন ভালোভাবে ব্যয় হয় সে ব্যাপারে নজর রাখা হচ্ছে জানিয়ে গভর্নর বলেন, যারা ভালো করছে তাদের পদকের ব্যবস্থাও করা যেতে পারে।আমাদের দৃষ্টিতে সব ব্যাংকই সমান। সবাইকে সমান  রেগুলেট করা হয়। প্রতিটি ব্যাংককে প্রতিনিয়িত তথ্য দিতে হয়।

সিএসআর আন্তর্জাতিকভাবেই স্বীকৃত জানিয়ে তিনি বলেন, বিশ্বব্যাংকের গে¬াবাল ফিনডেক্স সূচক অনুযায়ী দক্ষিণ এশিয়ার ফাইন্যান্সিয়াল ইনক্লুশনে বাংলাদেশের অবস্থান দ্বিতীয়; ক্ষুদ্র ঋণ, দশ টাকার হিসাব,  মোবাইল ব্যাংকিং যুক্ত করলে আমরাই প্রথম হবো।

যে ব্যাংকগুলো সিএসআরের শর্তপূরণ করতে পারছে তারা আয়কর রেয়াত সুবিধা নিতে পারছে জানিয়ে আতিউর রহমান বলেন, ট্যাক্স রিটে সুবিধা পাওয়ার জন্য সিএসআর ব্যয়ের ন্যূনতম সুবিধা আট  কোটি টাকার বেশি হওয়া উচিত। কেননা কোনো কোনো ব্যাংক আট কোটি টাকার বেশি ব্যয় করছে। এ বিষয়ে এনবিআরকে বলা হবে বলে জানান গভর্নর।

কৃষি ব্যাংকের সাবেক  চেয়ারম্যান খন্দকার ইব্রাহীম খালেদ বলেন, সিএসআর ভোক্তাদের অধিকার। যাদের নতুন টাকা-পয়সা হয়েছে তাদের সিএসআরে উৎসাহিত করার জন্য জাতীয়ভাবে কিংবা ইনস্টিটিউশনালি অ্যাওয়ার্ড দেওয়া যায় কি না- সে ব্যাপারে ভাবতে হবে। প্রতি বছর ১০২ কোটি টাকা শিক্ষাবৃত্তির কাজে ব্যয় করে সিএসআরের ভূমিকার জন্য ডাচ-বাংলা ব্যাংকের প্রশংসা করেন ইব্রাহীম খালেদ।

এনবিআরের সদস্য  সৈয়দ আমিনুল করিম বলেন, সিএসআর-এর জন্য কোন সমন্বিত নীতিমালা নেই। এ কারণে আমাদের রাজস্ব বোর্ডের নীতিমালা অনুযায়িই কাজ করতে হয়। এর ফলে রেয়াতি ট্যাক্স হার বেশি হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু বর্তমানে সিএসআর একটি বড় বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। বর্তমানে সব করপোরেট প্রতিষ্ঠানই এ কাজের সাথে যুক্ত। তাই সবাইকে সমন্বিত ভাবে কাজ করতে হবে।’ পাশাপাশি এ সংশি¬ষ্ট সমন্বিত নীতিমালা প্রস্তুত করতে হবে বলে জানান তিনি।এবারের নীতিমালায় রাজস্ব  বোর্ড  থেকে নতুন করে অনুমোদন না নিতে হয় তার ব্যবস্থা করার আশ্বাস দেন তিনি।

অনুষ্ঠানে বক্তারা একটি সমন্বিত সিএসআর ফান্ড গঠন করার আহ্বান জানান। পাশাপাশি একটি সমন্বিত নীতিমালা এবং এর জন্য প্রতিষ্ঠানগুলোকে পুরস্কৃত করার ব্যবস্থা করতে সংশি¬ষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে অনুরোধ করেন।

অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের  ডেপুটি গভর্নর জনাব এস. কে সুর  চৌধুরী, বিআইবিএম’র মহাপরিচালক ড.  তৌফিক আহমদ চৌধুরী, এমআরডিআই-এর নির্বাহী পরিচালক হাসিবুর রহমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজনেস স্টাডিজ বিভাগের ডিন শিবলী  রোবায়েতুল ইসলাম, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খন্দকার ইব্রাহিম খালেদ প্রমুখ।

এছাড়া বিভিন্ন ব্যাংকের শীর্ষ নির্বাহীবৃন্দ, বাংলাদেশ ব্যাংক, এনবিআর, এমআডিআই ও বিআইবিএম এর কর্মকর্তাবৃন্দও উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন ফাইন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেস পত্রিকার সম্পাদক মোয়াজ্জেম হোসেন।