jhenidah photo 2টিপু সুলতান/দৈনিক বার্তা:একটি বৃহদাকার ডেইরী ফার্ম গড়ে তোলার স্বপ্ন ছিল সিরিয়ার নাগরিক জুমানের। কিন্তু দেশের বাইরে চাকরী করতে যাওয়ায় সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন হয়নি তার। তবে স্বপ্ন বাস্তবায়নে ছিলেন দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। খুঁজতে থাকেন একজন বিশস্থ  ও কর্মঠ মানুষ। এক সময় আবিষ্কার করেন নিজের অধীনে কর্মরত একজনকে। দীর্ঘ সময় নানাভাবে পরীক্ষিত সেই মানুষটির নাম আনোয়ার হোসেন(২৯)। আনোয়ার হোসেন বাংলাদেশের ঝিনাইদহ জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার খাঞ্জাপুর বাগডাঙ্গা গ্রামের জালাল উদ্দিনের ছেলে। দুবাইয়ের একটি কোম্পানীতে সিরিয়ার অধিবাসী জুমানের অধীনে চাকরী করতেন আনোয়ার। কাজের প্রতি আন্তরিকতা ও সততার কারণে জুমান খুব ভালোবাসতেন আনোয়ারকে। এক পর্যায়ে ডেইরী ফার্ম গড়ে তোলার লক্ষে আনোয়ারকে দেশে পাঠিয়ে দেন জুমান। প্রায় ২৫লাখ টাকা ব্যয়ে আনোয়ার গতবছর মাসে  গড়ে তোলেন জুমান ডেইরী ফার্ম। জুমান ডেইরী ফার্মের গড়ে তুলতে ব্যয় হওয়া ২৫লাখ টাকার প্রায় অধিকাংশ টাকাই সিরিয়ার অধিবাসি জুমানের।

আনোয়ার হোসেন জানান, তার পৈত্রিক বসতভিটাতে প্রায় সাড়ে তিন বিঘা জমিতে গড়ে তোলা হয়েছে জুমান ডেইরী ফার্ম। ফার্মে ছোট বড় মিলিয়ে মোট ২০টি দুগ্ধজাত গরু আছে। ফার্মের সাথেই গরুর খাবারের জন্য চাষ করেছেন নেপিয়ার ঘাস। আনোয়ার হোেেসন দুই কন্যা সন্তানের জনক। বড় মেয়ে ৫ম শ্রেণিতে পড়ে অন্যটির বয়স ১০মাস। সিরিয়া অধিবাসী জুমানের নামের সাথে মিল রেখে ছোট মেয়েটির নাম রাখা হয়েছে জোমানা। ফার্মে সকল প্রকারের সহযোগিতা করেন আনোয়ারের ছোট ভাই মনিরুল(২২), স্ত্রী আসমানী ও বাবা-মা। আনোয়ার জানান, ২০০৮সালে দুবাই যান তিনি। সেখানে পরিচয় ঘটে সিরিয়ার অধিবাসী ইঞ্জিনিয়ার জুমানের সাথে। সময়ের আর্বতে তার সাথে ঘনিষ্টতা বাড়ে। এক পর্যায়ে পরিবারের একজনের মতো করে দেখতে শুরু করে। গত বছর(২০১৩)সালের সেপ্টেম্বর মাসে আমার ছোট মেয়ের জন্ম হওয়ার সংবাদ জানতে পেরে মেয়েকে সময় দিতে ও দেশে থেকে কর্ম সংস্থানের ব্যবস্থা করে নিতে এক প্রকার জোর পূর্বক বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেন তিনি। দেশে এসে বেকার হয়ে পড়ি। জুমানের সাথে কথা হয়। জুমান দেশে থাকতে বলে। একদিন ফোন করে বলে ব্যাংকে যাও টাকা তুলে একটি পরিকিল্পিত ডেইরী ফার্ম গড়ে তোল। টাকা পেয়ে তার পরামর্শে বাড়ির আঙ্গিনায় সাড়ে তিন বিঘার ওপর ডেইরী ফার্ম গড়ে তোলেন। ফার্মের পাশেই নেপিয়ার ঘাসের চাষ করছেন। বর্তমানে ফার্মের ২০টি গরুর মধ্যে ৮টি গরু দুধ দিচ্ছে। প্রতিদিন গড়ে ৬০ কেজি কওে দুধ পাওয়া যায়। প্রতি কেজি দুধ ৩৫টাকা দরে বিক্রি করেন আনোয়ার। ফার্মে প্রতিদিন ১৫৩৯টাকা খরচ হয়। আর দুধ বিক্রি করে আয় হয় ১৮৯০টাকা। অল্প হলেও শুরুতেই লাভের মুখ দেখতে পাওয়ায় কঠোর পরিশ্রম কওে যাচ্ছেন আনোয়ার ও পরিবারের সদস্যারা। কিন্তু সরকারের সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানসহ এলাকার কিছু মানুষের অসহযোগিতায় মাঝে মাঝে হতাশায় ভোগেন। আনোয়ার জানান, খুব অল্প সময়ের মাঝে জুমান বাংলাদেশে আসবেন। তিনি ফার্ম পরিদর্শন করবেন। আনোয়ার জানান, জুমানের ইচ্ছা ডেইরীর পাশাপাশা লেয়ার ফার্ম ও মাছের খামার গড়ে তোলা। সেই লক্ষেই তিনি বাংলাদেশে আসছেন বলে আনোয়ার জানান। বাংলাদেশের একজন দরিদ্র এবং বিশস্থ মানুষ হিসেবে সম্মানজনক কর্মসংস্থান গড়ে তোলার লক্ষে একজন বিদেশি হিসেবে তিনি এই অর্থ লগ্ন করেছেন। সততার ও বিশস্থতার প্রতিক হিসেবে তিনি আমাকে দেখেছেন। সততার জায়গায় থেকে কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে একটি লাভজনক নানামূখি ও দির্ঘ মেয়াদি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার প্রত্যয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন বলে আনোয়ার জানান।