1 দৈনিক বার্তা: রাজধানী ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে দুবাই  থেকে আসা বাংলাদেশ বিমানের একটি উড়োজাহাজের টয়লেট থেকে ৯৩৬টি  সোনার বার উদ্ধার করা হয়েছে। বারগুলোর ওজন ১০৬ কেজি। উদ্ধার করা  সোনার বাজারমূল্য ৪৬  কোটি ৮০ লাখ টাকা।এই  সোনা পাচারে জড়িত সন্দেহে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের মো. আনিসুজ্জামানকে  নামে এক কর্মীকে  গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে শুল্ক  গোয়েন্দা বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

শুল্ক কর্মকর্তারা জানান, দুপুর  সোয়া ২টার দিকে ০৫২ ফ্লাইটের টয়লেট  থেকে এসব  সোনার বার উদ্ধার করা হয়। উড়োজাহাজটি স্থানীয় সময় সকাল ৯টায় ঢাকায় অবতরণ করে। যাত্রীরা  নেমে যাবার পর তল্লাশি চালিয়ে টয়লেটের মধ্য  থেকে ৯৩৬টি  সোনার বার উদ্ধার করা হয়। উদ্ধার করা  সোনার বাজার মূল্য ৪৬ কোটি ৮০ লাখ টাকা।পরে বিকালে সংবাদ সম্মেলন করেন শুল্ক অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা। সংবাদ সম্মেলনে তারা বলেন, বিভিন্ন সময়ে আটককৃত স্বর্ণের বারগুলোর  বেশির ভাগই বিদেশি।

তারা বলেন,  দেশে শুল্ক-হারের আকাশপাতাল তারতম্যের কারণেই  চোরাচালান বেশি হচ্ছে। প্রতিবেশী  দেশ ভারতে যেখানে স্বর্ণের শুল্কহার শতকরা ১০ শতাংশ  সেখানে বাংলাদেশে মাত্র ১ শতাংশ বা তার  চেয়েও কম। এসব কারণেই ভারতের  চোরা চালানকারীরা স্বর্ণের একটি রুট হিসেবে বাংলাদেশকে ব্যবহার করছে।

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর  থেকে ১০৬  কেজি  সোনাসহ বাংলাদেশ বিমানের এক ইঞ্জিনিয়ারকে আটক করেছে শুল্ক গোয়েন্দা।শনিবার দুপুর ২টায় বিমান বাংলাদেশের ফ্লাইট বিজি-০৫২ এর টয়লেটে কাপড়ে মোড়ানো অবস্থায় সোনার বারগুলো উদ্ধার করা হয়।বিমানবন্দর আর্মড ব্যাটালিয়ানের (এপিবিএন) সিনিয়র এএসপি আলমগীর হোসেন শিমুল এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

তিনি বলেন, সকাল ৯টায় সন্দেহভাজনভাবে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের এক ইঞ্জিনিয়ারকে আটক করে এপিবিএন। তার  মোবাইলের এসএমএস  থেকে বিমানের দুবাইয়ের ফ্লাইটে  সোনা আসছে বলে আমরা তথ্য পাই। পরে দুপুরে দুবাইয়ের ফ্লাইটটির টয়লেটে তল্লাশি চালিয়ে  সোনাগুলো উদ্ধার করা হয়।

বিমানবন্দর শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগের  ডেপুটি ডিরেক্টর  মোস্তাফিজুর রহমান বলেন,  গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বিমানের টয়লেটের কাপড়ে মোড়ানো অবস্থায় সোনাগুলো উদ্ধার করা হয়েছে। গত কিছুদিন ধরে ঢাকার শাহজালাল এবং চট্টগ্রাম শাহ আমানত বিমানবন্দরে  চোরাই সোনা আটক হচ্ছে। এর মধ্যেই শনিবার ১০৬ কেজি  সোনা আটক হল।

শুল্ক  গোয়েন্দা বিভাগের উপপরিচালক মুস্তাফিজুর রহমান বলেন,  বেলা  সোয়া ২টার দিকে বিমানের ০৫২ ফ্লাইটের টয়লেটে ৯৩৬টি সোনার বার পাওয়া যায়। এর ওজন ১০৬ কেজি। এই উড়োজাহাজটি সকাল ৯টায় ঢাকায় নেমেছিল। যাত্রীরা  নেমে যাওয়ার পর তল্লাশি চালিয়ে  সোনার বারগুলো পাওয়া যায়।এই  সোনা  চোরাচালানে জড়িত সন্দেহে বিমানের  মেকানিক্যাল অ্যাসিটেন্ট  মো. আনিসুজ্জামানকে  গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে মুস্তাফিজুর জানান।তিনি বলেন, এই বিমানকর্মীর  মোবাইল ফোনের কললিস্ট পরীক্ষা করে সন্দেহজনক ব্যক্তিদের যোগাযোগের তথ্য পাওয়া গেছে। সে চোরাচালানে জড়িত থাকার কথা স্বীকারও করেছে।

শুল্ক  গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মইনুল খান জানান,  শনিবার বেলা আড়াইটার দিকে এসব সোনা উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় আনিসউদ্দিন ভূঁইয়া নামের বিমানের এক মেকানিক অ্যাসিসটেন্টকে আটক করা হয়েছে। এ ব্যাপারে বিমানবন্দরে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান গোলাম হোসেন জানান, বাংলাদেশ বিমানের ওই উড়োজাহাজের সাতটি টয়লেটে  সোনার বারগুলো ভাগ করে রাখা হয়েছিল। বিভিন্ন কৌশলে ওই বারগুলো সেখানে রাখা হয়।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে এনবিআরের  চেয়ারম্যান  গোলাম হোসেন আরও বলেন, বিমানের  ভেতর যেসব কর্মী রয়েছেন, তাঁদের মধ্যেই  কেউ এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকতে পারেন। তিনি আরও বলেন, সাম্প্রতিককালে  সোনা বেশি ধরা পড়ছে। কিন্তু তার মানে এই নয় যে,  সোনার  চোরাচালান বেড়েছে। বরং সোনার  চোরাচালান বেশি ধরা পড়ছে।

কারা সোনা  বেশি চোরাচালান করছেন, জানতে চাইলে এনবিআরের  চেয়ারম্যান আরও বলেন, ভারত সোনা আমদানির  ক্ষেত্রে কিছু বিধিনিষেধ জারি করেছে। আমদানি শুল্ক বেড়েছে। এ কারণে ভারত থেকে সোনার চোরাচালান বেড়েছে। তবে  বৈধ উপায়ে সোনার আমদানিও বাড়ছে বলে জানিয়েছেন এনবিআর চেয়ারম্যান।

তিনি জানান, একজন যাত্রী ২০০ গ্রাম পর্যন্ত  সোনা আমদানি করতে পারেন। সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যানের পাশে শুল্ক  গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মইনুল খান উপস্থিত ছিলেন। গত কিছুদিন ধরে ঢাকার শাহজালাল এবং চট্টগ্রাম শাহ আমানত বিমানবন্দরে আটক করা হচ্ছে স্বর্ণের বার। শনিবারের এ চালান এ যাবৎকালের সর্বোচ্চ বলে জানায় শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কর্মকর্তারা। এর আগে গত ২৫ মার্চ চট্টগ্রামের শাহ আমানত বিমান বন্দর  থেকে ১০৫  কেজি ওজনের ৯০৭ টি স্বর্ণের বার আটক করা হয়েছিলো।