Jhenidah Lathi Khela_01টিপু সুলতান/দৈনিক বার্তা : গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী খেলাগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি খেলা হচ্ছে লাঠিখেলা। কিন্তু অতীতে এই খেলার প্রচলন নিয়মিত থাকলেও এখন খুব একটা চোখে পড়ে না এই খেলাটি। প্রয়োজনীয় পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে কালেভদ্রে অনেক গ্রামে হঠাৎ চোখে পড়ে বিলুপ্তপ্রায় এই খেলাটি। এমনই এক লাঠিখেলার আয়োজন হয়ে গেলো ঝিনাইদহের ভূটিয়ারগাতী গ্রামে।
একে একে হারিয়ে যাচ্ছে গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী সব খেলা। এর মধ্যে লাঠিখেলাও একটি। এক সময় এই লাঠি খেলা ছিল গ্রামবাংলার অন্যতম বিনোদন উপলক্ষ্য। গ্রামে গ্রামে প্রায় সব উৎসবেই আয়োজন করা হতো এ খেলার। লাঠি খেলা হয়ে উঠেছিল বাংলার ঐতিহ্যের অংশ। অথচ, সেই লাঠি খেলার আয়োজন হয় এখন কালেভদ্রে। পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে এখন আর তেমন একটা চোখে পড়ে না লাঠিখেলা। তবে ঝিনাইদহের কয়েকটি গ্রামের মানুষ এখনও সে ঐতিহ্য ধরে রেখেছে। লাঠির লড়াইয়ের এই খেলা যুগ যুগ ধরে গ্রামবাংলার পূর্বপুরুষরা ধরে রাখলেও এখন আর তেমন কেউ আগ্রহ দেখায় না এই খেলায়। তাই গ্রামের মানুষকে লাঠিখেলায় আগ্রহী করে তুলতে ঝিনাইদহের ভূটিয়ারগাতী গ্রামে পূর্বাঞ্চল স্পোর্টিং ক্লাবের প্রচেষ্টায় অনুষ্ঠিত হয়ে গেলো জাকজমকপূর্ণ এক উৎসবমূখর লাঠিখেলা। লাঠি খেলা উপলক্ষ্যে ভূটিয়ারগাতী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় চত্বরে সকাল থেকেই ছিল উৎসবের আমেজ বিরাজ। সকাল ১১টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে এই আয়োজন।
কাঠফাঁটা রোদে গরমকে উপেক্ষা করে আশেপাশের প্রায় দশগ্রামের মানুষ ভীড় করেন এই লাঠিখেলা উপভোগ করতে। বর্ণিল সাজে লাঠি হাতে ২৬ জন লাঠিয়াল অংশ নেন এই লাঠিখেলায়। ঢাকঢোল আর বাঁশির তালে আনন্দে উল্লাসে মেতে ওঠে সবাই। শিশু-কিশোর থেকে শুরু করে নানা বয়সের মানুষ রং-বেরংয়ের পোশাক পড়ে মাঠে নামেন লাঠি খেলতে। মানুষের এই উচ্ছাস প্রমাণ করে লাঠি খেলা নিয়ে মানুষের আগ্রহ আছে। কিন্তু লাঠি খেলা নতুন দল তৈরি হচ্ছে না। যে কারণে, এখন লাঠি খেলার আয়োজন হয় না নিয়মিত। তবে যারা লাঠি খেলেন, তাদের এই ঐতিহ্য ধরে রাখার আগ্রহ আছে। যে কারণে তারা প্রশিক্ষণ দেন তাদের সন্তানদের। লাঠি খেলা বাঁচাতে স্থানীয় আয়োজন দরকার বলে মত দিলন স্থানীয় খেলোয়াড়রা।


নতুন প্রজন্মকে খেলতে দেখে তাই আনন্দিত পুরাতন প্রজন্মের লাঠিয়ালদের অনেকেই। পাশাপাশি নতুনরাও চায় পূর্বপুরুষদের এই খেলাটাকে ধরে রাখতে। একজন অংশগ্রহণকারী বলেন, পূর্বপুরুষরা এ খেলা করত। আমরা সেই ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে এ খেলায় নিয়মিত অংশ নিই। এদিকে হারানো ঐতিহ্যকে ফিরিয়ে আনতেই লাঠিখেলার এমন আয়োজন বলে জানালেন স্থানীয় আয়োজকরা। ঝিনাইদহ পূর্বাঞ্চল স্পোর্টিং ক্লাবের পরিচালক শাহেদ আলী জোয়ার্দ্দার বলেন, আমাদের পুরানো ঐতিহ্যকে পুনরায় ফিরিয়ে আনতেই আমাদের এই আয়োজন।
৬০ দশক থেকে প্রচলিত এই লাঠিখেলাকে আজও গ্রামবাংলার বুকে ধরে রাখতে স্থানীয়দের পাশাপাশি সরকারকেও এগিয়ে আসার আহ্বান জানালেন সংশ্লিষ্টরা।