Ershad Photo---------27.04.2014

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ বলেছেন,১৯৯০ সালে ক্ষমতা ছাড়ার পর থেকে কখনোই মুক্ত রাজনীতিবিদ ছিলাম না। এখনো নই। পেছনের যে দিনগুলো গেছে,সেই দিনগুলো জাতীয় পার্টির জন্যও অনুকূল ছিল না। জাতীয় পার্টি প্রতিকূল অবস্থার মধ্যে দিন কাটিয়েছে।

রোববার বেলা ১১টায় রাজধানীর স্পেক্ট্রা কনভেনশন সেন্টারে জাতীয় পার্টির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও এমপিদের যৌথসভার উদ্বোধনী বক্তব্যে এরশাদ এসব কথা বলেন। সভায় বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ ও দলের নতুন মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহম্মেদ বাবলু সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দেন। প্রায় পাঁচ মাস পর জাতীয় পার্টির সভাপতিমণ্ডলীর সভা অনুষ্ঠিত হয়। এ সভায় সভাপতিমণ্ডলীর বেশির ভাগ সদস্য ও সাংসদেরা উপস্থিত ছিলেন। যাঁরা নির্বাচনে গিয়েছিলেন এবং যাঁরা যাননি সভায় তাঁদের সবারই প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন। তবে সাবেক বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী জি এম কাদেরকে দেখা যায়নি।

প্রসঙ্গত, এর আগে কয়েক দফা উদ্যোগ নিয়ে এই বৈঠকটি করতে পারেননি এরশাদ। প্রায় পাঁচ মাস পর জাতীয় পার্টি প্রেসিডিয়াম বৈঠকে বসলো। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রেসিডিয়াম সদস্যদের মধ্যে বৈঠক হয়েছিল। সেসময় মনোনয়ন দেয়াকে কেন্দ্র করে দলটির নেতা কর্মীদের মধ্যে অসন্তোষ তৈরি হয়। এই বৈঠকে সেই সব অসন্তোষ দূর কারার চেষ্টা করা হবে বলেও ধারণা করা হচ্ছে। কিছুদিন আগেই দলটির মহাসচিব পদে পরিবর্তন আনা হয়েছে। রুহুল আমীন হাওলাদারের পরিবর্তে জিয়াউদ্দীন বাবলুকে মহাসচিব করা হয়। এই পরিবর্তনের পর এটিই জাতীয় পার্টির প্রথম প্রেসিডিয়াম বৈঠক। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, জাতীয় পার্টিতে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের একটি পদ সৃষ্টি করা হতে পারে।

এইচ এম এরশাদজাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ বলেন, এত দিন তিনি একাই দলের বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। কিন্তু এখন দলকে সুসংগঠিত করতে অন্যের সহযোগিতা প্রয়োজন।

এরশাদ বলেন, ১৯৯০ সালে ক্ষমতা ছাড়ার পর তাঁর বিরুদ্ধে ৭৪টি মামলা দেওয়া হয়েছিল। এখনো সব মামলা থেকে তিনি অব্যাহতি পাননি। কিন্তু বরাবরই জাতীয় পার্টি নির্বাচনে অংশ নিয়েছে, ভবিষ্যতেও সব নির্বাচনে অংশ নেবে।জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান আরও বলেন, তিনি কখনো মুক্ত রাজনীতিবিদ ছিলেন না, এখনো নন। পেছনের যে দিনগুলো গেছে, সেই দিনগুলো জাতীয় পার্টির জন্য অনুকূল ছিল না। আজ তিনি সবার কথা শুনবেন বলেও উল্লেখ করেন।জাতীয় পার্টিতে কোনো বিভক্তি নেই জানিয়ে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান জানান সাবেক এই রাষ্ট্রপতি।

এরশাদ বলেন, এত দিন তিনি একাই দলের বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। কিন্তু এখন দলকে সুসংগঠিত করতে অন্যের সহযোগিতা প্রয়োজন। আজ তিনি সবার কথা শুনবেন বলেও উল্লেখ করেন।সভার বিরতিতে সাংবাদিকদের সাথে কথা বলেন জাতীয় পার্টির মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহম্মেদ বাবলু । তিনি বলেছেন, জাতীয় পার্টির গণতন্ত্রের পথে নতুন যাত্রা আজ থেকে শুরু হয়েছে।

এ বছরের ডিসেম্বরে তৃণমূল থেকে কেন্দ্রীয় পর্যায় পর্যন্ত দলটির কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হবে। কাউন্সিলদের প্রত্যক্ষ ভোটের মাধ্যমে নতুন নেতা নির্বাচিত হবেন। তবে এ প্রক্রিয়ায় চেয়ারম্যান পদে কোনো পরিবর্তন আসবে কি না, সে প্রশ্নের সরাসরি জবাব তিনি দেননি।

জাতীয় পার্টির মহাসচিব বলেন, ১৯৯১ সালের পর থেকে একটি সংসদও কার্যকর ছিল না। এবারই প্রথম সংসদ কার্যকরভাবে পরিচালিত হচ্ছে। তার কারণ আওয়ামী লীগ যখন বিরোধী দলে ছিল, তখন আওয়ামী লীগ সংসদে যায়নি। বিএনপি যখন বিরোধী দলে ছিল, তখন তারাও সংসদে যায়নি। তিনি বলেন, জাতীয় পার্টি সংসদের ভেতরে ও বাইরে মানুষের পক্ষে কথা বলছে, বলবে।

জাতীয় পার্টি কি তাহলে আগে গণতান্ত্রিক দল ছিল না—সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে জিয়াউদ্দিন আহম্মেদ বাবলু বলেন, গঠনতন্ত্রের ৩৯ (ক)ধারায় চেয়ারম্যানকে যেকোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা কাউন্সিলররাই দিয়েছেন। কাজেই এ ধারাটিকে অগণতান্ত্রিক বলা ঠিক হবে না।

নতুন করে গণতন্ত্রের পথে যাত্রা শুরু হলে এ ধারাটি অব্যাহত থাকবে কি না এ ব্যাপারেও তিনি পরিষ্কারভাবে কিছু বলেননি।

গত ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার পর আজই প্রথম জাতীয় পার্টির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাংসদদের সভা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এ সভায় অনেক অপ্রিয় কথাও উত্থাপিত হয়েছে বলে মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহম্মেদ বাবলু জানান।তিনি বলেন, দেশে এতদিন সত্যিকারের কোনো বিরোধী দল ছিলো না। এবারই প্রথম দেশে সত্যিকারের বিরোধী দল প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এতদিন সংসদ ছিলো বিরোধীদল বিহীন। বিরোধী দল হিসেবে এবারই প্রথম জাপা সংসদীয় গণতন্ত্রকে কার্যকর করেছে।

জাপা বিরোধী দল হিসেবে সংসদ এবং সংসদের বাইরে সোচ্চার থাকবে বলেও দাবি করেন জিয়াউদ্দিন বাবলু। বৈঠকে জাপার সর্বস্তরে গণতন্ত্রের চর্চার বিষয়টি কঠোরভাবে অনুসরণের সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে সাংবাদিকদের জানান জাপা মহাসচিব।এছাড়া চলতি বছরের মধ্যেই যেসব জেলা ও উপজেলায় কমিটি নেই সেখানে কমিটি করার কথা জানান জাপা মহাসচিব।

এদিকে জাপার সভায় তিস্তার পানি প্রবাহ কমে যাওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশের পাশাপাশি অবিলম্বে তিস্তা সহ অভিন্ন ৫৪ নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা আদায়ে সরকারের কাছে দাবি জানানো হয়েছে।খাদ্যে ভেজাল রোধেও সরকারের কাছে কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে বৈঠকে।এছাড়া বৈঠক থেকে অবিলম্বে দেশের সকল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছাত্রসংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।

বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন জাপার চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ, সিনিয়র প্রেসিডিয়াম সদস্য রওশন এরশাদ, ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও বিরোধী দলীয় চিফ হুইপ তাজুল ইসলাম চৌধুরী সহ জাপার প্রেসিডিয়াম কমিটি ও সংসদীয় দলের সদস্যরা।