1দৈনিক বার্তা : মেট্রোরেল পরিচালনায় ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ’ গঠনের বিধান রেখে মেট্রোরেল আইন, ২০১৪ খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।সোমবার সচিবালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার  বৈঠকে এ অনুমোদন  দেওয়া হয়।বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদসচিব মো.  মোশাররাফ  হোসাইন ভূইঞা সংবাদ ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান।

সচিব জানান, এ কর্তৃপক্ষে একজন নির্বাহী পরিচালক থাকবেন। তিনি হবেন কর্তৃপক্ষের প্রধান। এই আইনের আওতায় বৃহত্তর ঢাকার ছয়টি  জেলা অন্তর্ভুক্ত করা হবে। অর্থাৎ ওই সব জেলায়ও যদি এ ধরনের প্রকল্প  নেওয়া হয় তখন  সেগুলো এই কর্তৃপক্ষ  দেখবে।

এ আইনের আওতায় এ ধরনের প্রকল্প পরিচালনায় লাইসেন্স নিতে হবে। তবে সরকারি ব্যবস্থাপনায় এটি হলে তাতে ফি দিতে হবে না। এ আইনে সরকারি- বেসরকারি অংশীদারির (পিপিপি) ভিত্তিতে এ ধরনের প্রকল্প অনুমোদন দেওয়ার বিধান রাখা হয়েছে। লাইসেন্স ছাড়া এ ধরনের প্রকল্প চালালে ১০ বছরের কারাদণ্ড ও এক  কোটি টাকার জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে। এ ছাড়া দুর্ঘটনাসহ আরও কয়েকটি বিষয়ে বিভিন্ন ধরনের শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে।

মন্ত্রিপরিষদসচিব জানান, এই আইনের খসড়ার নীতিগত অনুমোদন হলো। এখন আইন মন্ত্রণালয়ের বেটিং  শেষে এটি মন্ত্রিসভায় চূড়ান্ত অনুমোদন হবে। এরপর  সেটি সংসদে উপস্থাপন করা হবে।

প্রস্তাবিত মেট্রোরেলের রুটটি হবে উত্তরা থেকে বাংলাদেশ ব্যাংক পর্যন্ত। এর মধ্যে ১৬টি  স্টেশন থাকবে। এই ১৬টি  স্টেশন হবে উত্তরা উত্তর, উত্তরা  সেন্টার, উত্তরা দক্ষিণ, পল¬বী, আইএমটি, মিরপুর-১০, কাজিপাড়া, তালতলা, আগারগাঁও, বিজয় সরণি, ফার্মগেট,  সোনারগাঁও  মোড়, জাতীয় জাদুঘর,  দোয়েল চত্বর, জাতীয় স্টেডিয়াম ও সর্বশেষ বাংলাদেশ ব্যাংক।এই কর্তৃপক্ষ একটি কমিটির মাধ্যমে ভাড়া নির্ধারণ করবে।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ  মোশাররাফ  হোসাইন ভূইঞা সাংবাদিকদের বলেন, ভূমি অধিগ্রহণের  ক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধু  সেতু এবং পদ্মাসেতু প্রকল্পের মতো বিশেষ বিধান  রেখে  মেট্রোরেল আইনের খসড়ার অনুমোদন  দেওয়া হয়েছে।সরকারের অগ্রাধিকারমূলক প্রকল্প মেট্রোরেল (এমআরটি-৬) সরকারি ম্যাস ট্রানজিট  কোম্পানি লিমিটেড দিয়ে পরিচালিত এবং ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) এর নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বে থাকবে বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব।

তিনি বলেন,  মেট্রোরেলকে পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণের জন্যই এ আইন করা হয়েছে। এ প্রকল্পে ভূমি অধিগ্রহণের জন্য বিশেষ বিধান রাখা হয়েছে।

বিশেষ বিধান সম্পর্কে জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, বঙ্গবন্ধু সেতু ও পদ্মাসেতু প্রকল্পে ভূমি অধিগ্রহণে  যে বিধান রাখা হয়েছিলো তার সাথে সামঞ্জস্য  রেখেই এ বিধান রাখা হবে।

তিনি বলেন, প্রকল্প বাস্তবায়নের পর বৃহত্তর ঢাকার ছয়টি জেলা এর আওতায় আসবে, ভবিষ্যতে এ ধরণের আরো প্রকল্প আসলে এ আইনের আওতায়ই আসবে।আইনে নয়টি অধ্যায় এবং ৪৫টি ধারা রয়েছে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ভাড়া নির্ধারণ, পরিদর্শক নিয়োগ, দুর্ঘটনা, আইনের লঙ্ঘনে শাস্তি ইত্যাদি বিষয় অন্তর্ভূক্ত রয়েছে।

ভবিষ্যতে সরকারি ছাড়া অন্য  কোনো কোম্পানি  মেট্রোরেল পরিচালনা করতে চাইলে লাইসেন্স নিতে হবে। ডিটিসিএ এর নির্বাহী পরিচালকের  নেতৃত্বে একটি কমিটি এই লাইসেন্স  দেবে।আইনে পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপের (পিপিপি) মাধ্যমে  মেট্রোরেল স্থাপনের কথাও রাখা হয়েছে।ডিটিসিএ’র কমিটির মাধ্যমে এর ভাড়া নির্ধারণ এবং পরিদর্শকও তারা নিয়োগ করবেন।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, অপরাধে সর্বোচ্চ ১০ বছর  জেল ও এক কোটি টাকা জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে। তবে চূড়ান্ত করার সময় তা প্রচলিত আইনের সাথে সামঞ্জস্য করা হবে। এর মধ্যে লাইসেন্স ছাড়া লাইন স্থাপনে ও পরিচালনায় ১০ বছর ও এক কোটি টাকা জরিমানা, পরিচালনায় বাধা সৃষ্টি করলে এক বছর  জেল ও ৫ লাখ টাকা জরিমানা, বিনা টিকেটে ভ্রমণ ইত্যাদি বিষয়ে বিভিন্ন মেয়াদে শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে।

মেট্রোরেলের রুট হবে- উত্তরা থার্ড ফেজ থেকে পল¬বী, রোকেয়া সরণি (পশ্চিম), খামারবাড়ি, ফার্মগেইট, হোটেল সোনারগাঁও, শাহবাগ, টিএসসি, দোয়েল চত্বর, তোপখানা রোড হয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ২০১২ সালে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) এ প্রকল্পের অনুমোদন  দেয়।আইন মন্ত্রণালয়ের  ভেটিং এর পর পুনরায় মন্ত্রিসভায় এ আইন চূড়ান্ত করা হবে। এছাড়া,  বৈঠকে ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ আইন-২০১৪ এর খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন অনুমোদন দেওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।

মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া বলেন, এসব ছাড়াও  বৈঠকে বাংলাদেশ ও মিসরের মধ্যে এগ্রিমেন্ট অন ইকোনমিক অ্যান্ড টেকনিক্যাল  কো-অপারেশন’ শীর্ষক চুক্তি স্বাক্ষরের প্রস্তাব অনুমোদন  দেওয়া হয়েছে।