2দৈনিক বার্তা : দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান  মো: বদিউজ্জামান  দেশে দুর্নীতি বিস্তারে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, জনগণের রক্তের সঙ্গে দুর্নীতি মিশে  গেছে। তিনি বলেন, দুর্নীতি শুধু বাংলাদেশে নয়, সারা বিশ্বে মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়েছে। আমরা এটাকে গুরুত্বের সঙ্গে দেখছি। দুর্নীতি সমূলে নির্মূল করা সম্ভব নয়। এটা আমাদের সবার জানা। তবে সকলের সহযোগিতা নিয়ে কমিয়ে আনা সম্ভব।

মঙ্গলবার দুপুরে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন সম্মেলন কক্ষে বিভাগীয় ও জেলা পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে দুর্নীতি প্রতিরোধে প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগ গ্রহণ বিষয়ে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এই কথা বলেন।

সভায় দুদক চেয়ারম্যান আরও বলেন, আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি, তবে আজও মুক্তি পাইনি। ১৯৪৭ সনে আমরা এক প্রকার স্বাধীনতা অর্জন করি। এর পর পার্শ্ববর্তী অনেক  দেশ স্বাধীনতা অর্জন করে। আজ তারা অর্থনৈতিক উন্নতির শিখরে অবস্থান করছে বলে দুদক চেয়ারম্যান জানান।

এক সময়কার দুর্নীতি দমন ব্যুরো এখন দুর্নীতি দমন কমিশন নাম করণ করা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, দুদুকের আগেকার আইনগুলো এখন আর কভার করছে না। নতুনভাবে আইন করতে হবে।

সোনালী ব্যাংকের হলমার্ক কেলেঙ্কারির বিষয়ে বলেন, মানুষ তার সামান্য পুঁজিটুকু ব্যাংকে জমা রাখে নিরাপত্তার জন্য। সেই অর্থ ব্যাংক সংশ্লিষ্টরা নিজেদের   পৈত্রিক সম্পত্তি মনে করে যা ইচ্ছা তাই করবেন, এটা চলতে পারে না।

দুদকের জনবল সংকটের কথা তুলে ধরে  চেয়ারম্যান বলেন, এখন মানুষ এক  দেড় লাখ টাকার সম্পত্তি  থেকে শুরু করে পাঁচ,দশ এমন কি কোটি টাকার অনিয়মের ব্যাপারে অভিযোগ করে। ছোট ছোট দুর্নীতির অভিযোগের ব্যাপারে মাঝে মাঝে নাখোশও হই। তবে আমাদের করার কিছু নেই। কারণ জনবল সংকট। প্রতিটি অভিযোগের ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হয় না।

দুদক  চেয়ারম্যান আক্ষেপ করে বলেন, এক সময় আমরা  দেখেছি, মালয়েশিয়া  থেকে অনেক শিক্ষার্থী আমাদের দেশে এসে পড়ালেখা করতো।সময়ের ব্যবধানে আমাদের সন্তানরা আজ মালয়েশিয়ায় পড়ালেখা করতে যাচ্ছে। এমন কি যুবকরা এখন সাম্পান নিয়ে মালয়েশিয়া যাওয়ার জন্য সমুদ্র পাড়ি দিচ্ছে। এর কারণ ওদেশে দুর্নীতি  নেই, দেশপ্রেম আছে। আর আমাদের দেশে জনগণের রক্তের সঙ্গে দুর্নীতি মিশে গেছে।ক্ষমতাসীন দলের বেশ কয়েকজন রাজনীতিকের নির্বাচনী হলফনামা পর্যালোচনা করে দুর্নীতির তথ্য পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান  মো.বদিউজ্জামান।

চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এ সভায় দুদক চেয়ারম্যান বলেন, কয়েকজন রাজনীতিবিদ যারা ক্ষমতায় ছিলেন কিংবা এখনও আছেন,তাদের নির্বাচনী হলফনামা নিয়ে আমরা অনুসন্ধান করছি। তদন্তে কিছু কিছু দুর্নীতির তথ্য আমরা  পেয়েছি। এ বিষয়ে অনুসন্ধান অব্যাহত আছে।

ক্ষমতাও দুর্নীতির অন্যতম কারণ মন্তব্য করে তিনি বলেন, অনেক সময় পদ পেলে যা খুশি তা-ই করে। ক্ষমতায় বসে যদি  কেউ যা খুশি তা-ই করে তাহলে দুর্নীতি বিস্তার লাভ করে। তখন দেশে দুর্যোগ হয়।
তিনি বলেন, ব্যাংকি সেক্টরে দুর্নীতির সঙ্গে অনেক ক্ষেত্রে কর্মকর্তারাও জড়িত।  দেশের অর্থনীতিকে পঙ্গু করে দিচ্ছে দুর্নীতি।

দুদক পলিসি পরিবর্তন করছে জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা এখন সবকিছুতে একসঙ্গে হাত দেবনা। বড় বড় কিছু ঘটনা অনুসন্ধান করে সুনির্দিষ্ট কিছু মামলা দিয়ে শাস্তি নিশ্চিত করব। এক্ষেত্রে আমাদের পলিসিতে আমরা কিছুটা পরিবর্তন আনছি।

তিনি বলেন,সরকার ৪২০,৪৬৭ কিংবা ৪৬৮ ধারায় প্রতারণার অভিযোগ তদন্তের ক্ষমতা দুদককে দিয়েছে। এক্ষেত্রে আমরা প্রতারণায় যদি সরকারী স্বার্থ জড়িত থাকে  সেটা তদন্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। যদি সরকারী স্বার্থ না থাকে সেক্ষেত্রে পুলিশ আগের মত তদন্ত করবে। এ বিষয়ে খুব শিঘ্রই দুদক বিধি সংশোধন করা হবে।

সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দুর্নীতি না করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আপনারা দুর্নীতি করবেন না। দুর্নীতিকে প্রশ্রয়  দেবেন না। তাহলে আমাদের কষ্ট কম হবে।

চট্টগ্রামের  জেলা প্রশাসক  মেজবাহ উদ্দিনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় সিডিএ  চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম,নগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (অপরাধ ও অভিযান)বনজ কুমার মজুমদার, চট্টগ্রামের পুলিশ সুপার একেএম হাফিজ আক্তার, জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রবীন্দ্র শ্রী বড়ুয়া, আয়কর কর্মকর্তা  সৈয়দ দাউদ হায়দার, সিভিল সার্জন ডা.সরফরাজ খান বাবুল, চমেক অধ্যক্ষ ডা. সেলিম  মোহাম্মদ জাহাঙ্গীরসহ বিভিন্ন সরকারী সংস্থার কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।