মনির/দৈনিক বার্তা : ফরিদপুরের গ্রামগুলোতে এখন আর শোনা যায় না তাঁত যন্ত্রের সেই খটখটানি শব্দ। সুতার মূল্য বৃদ্ধি ও দুস্প্রাপ্যতাসহ বিদেশে রপ্তানি বন্ধ ও উৎপাদিত পন্যের চাহিদা কমে যাওয়ার মুখ থুবড়ে পড়েছে ফরিদপুরের ঐতিহ্যবাহী তাত শিল্প। বংশ পরম্পরায় চলে আসা ঐতিহ্যবাহী এ শিল্পের সাথে সম্পৃক্ত হাজারো মানুষের জীবিকা নির্বাহের সুযোগ সৃষ্টি করে আসলেও আজ নানা কারনে বাপ-দাদার এ পেশা ছাড়তে বাধ্য হচ্ছেন ফরিদপুরের তাঁত শিল্পের সাথে জড়িতরা।
ফরিদপুর জেলা শহর থেকে ৪০ কিলোমিটার দূরে সদরপুর উপজেলার ছায়াসুনিবিড় গ্রাম দক্ষিণ আটরশি। ১০ বছর আগেও এ গ্রামটি ছিল তাঁত যন্ত্রের খটখটানির শব্দে মুখরিত। দক্ষিণ আটরশি গ্রামে আগে শতাধিক পরিবার তাঁত বস্ত্র তৈরীর সাথে জড়িত ছিল। দিনরাত মিলিয়ে কাজ করে চাহিদা মেটাতে ব্যস্ত সময় কাটতো তাদের। এক সময় আটরশি গ্রামের কারিগরদের তৈরী লুঙ্গি দেশের গন্ডি পেরিয়ে চলে যেতো বিদেশেও আর আজ দেশেও অবহেলিত। এখন সেসব শুধুই স্মৃতি। অধিকাংশই তাঁতযন্ত্র গুলো এখন অচল হয়ে রয়েছে। জমেছে ধুলো ময়লা, বাসা বেঁধেছে মাকড়সা। এছাড়া আধুকতার নগ্ন থাবা আর কালের পরিক্রমায় এখানকার তাঁত শিল্প আজ বিলুপ্তির পথে। অধিকাংশরা জীবিকার তাগিদে অন্য পেশায় চলে গেলেও কয়েকটি পরিবার এখনো ধরে রেখেছে এখানকার তাতশিল্পকে। আর তাঁত শিল্পের দৈন্যতার কারণ হিসেবে পাদনের প্রধান উপকরণ সূতার দাম বৃদ্ধি ও দুস্প্রাপ্যতাসহ দেশে তাঁতের তৈরী পণ্যের চাহিদা কমে যাওয়া এবং উৎপাদিত পন্য বিদেশে রপ্তানি বন্ধ হয়ে যাওয়াকে দায়ী করেছেন তাঁত শিল্পীরা।
এই গ্রামের কয়েকজন তাঁত শিল্পী পুরোনো স্মৃতি হাতড়ে জানালেন তাঁত শিল্পের সেই সুদিনের কথা। এক সময় তাঁদের তৈরী তাঁত বস্ত্র রপ্তানি হতো সৌদি আরব, ওমানসহ নানা দেশে। তখন চাহিদাও ছিল বেশ। মহাজনরা আগাম টাকা দিয়ে তাঁত বস্ত্র নেওয়ার জন্য ধরণা দিতেন তাঁত শিল্পিদের বাড়িতে বাড়িতে। তারা জানান, এরই মধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে জেলার বিভিন্ন এলাকার কয়েকহাজার তাঁত। আর কর্মহীন হয়ে পড়েছে হাজারো কর্মের হাত। বাকি তাঁতগুলো বন্ধ হয়ে গেলে কর্মহীন হাতের মিছিল আরো দীর্ঘ হবে।
তাদের মতে, সুতার দাম বেড়ে যাওয়ায় বেড়ে গেছে উৎপাদন খরচ। কিন্তু সে হিসেবে বাড়েনি পন্যের মূল্য। তাই এ ব্যবসায় সুবিধা করতে পারছেনা তাঁতিরা। ফলে প্রতিনিয়িত কমিয়ে ফেলা হচ্ছে তাঁতের সংখ্যা।
নারী কারিগরেরা জানান, বাবার বাড়ি থেকে কাজ শিখে এসে স্বামী সংসারের উন্নয়নে উৎসাহ যুগিয়েছেন অনেক গৃহিনী। সে সময়ে ব্যস্ত সময় পার করলেও এখন আর সেই ব্যস্ততা নেই। তাঁতের সংখ্যা কমে যাওয়ায় এসকল নারীরাও উপার্জনহীন হয়ে পড়ছেন।
অপরদিকে বাংলাদেশ কুঠির শিল্প (বিসিক) এর উপ পরিচালক মো. আব্দুস সালাম মোল্লা তাঁত শিল্পের উন্নয়নে সকল ধরণের সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন।
দেশের ঐহিত্যবাহী এ শিল্পকে বাঁচাতে এখনই সরকারিভাবে যথাযথ উদ্যোগ গ্রহনের প্রয়োজন বলে মনে করছেন সুশিল সমাজ। সুতার দাম কমানো, সুদ বিহীন ঋণ প্রদান, উৎপাদিত পন্যের চাহিদা তৈরীসহ বিদেশে রপ্তানির উদ্যোগ নিলে এ শিল্পকে টিকিয়ে সচল করা সম্ভব অচল হয়ে পড়া কয়েক হাজার নারী পুরুষের হাত। এতে উন্নয়ন ঘটবে অর্থনীতির।