11দৈনিক বার্তা : সকাল সাড়ে ১০টা। জাতিসংঘের অভিবাসন সংস্থার (আইওএম) এক গাড়িচালককে পিটিয়ে জখম করেছেন সচিবালয়ের উপসহকারী পুলিশ কমিশনার (এডিসি নিরাপত্তা) মোঃ মশিউর রহমান। এ ঘটনার প্রতিবাদ এবং এডিসির শাস্তির দাবিতে সচিবালয়ের ভেতরেই মিছিল করতে থাকে দুই শতাধিক গাড়িচালক। তাদের দাবি এডিসি এর আগে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, ভূমি মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারীকে শারীরিক নির্যাতন করেছেন।

ওই সময় সচিবালয়ের ৬নং ভবনে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ে অফিস করছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। চালককে পেটানোর ঘটনায় সৃষ্ট উত্তেজনা সামাল দিতে মুহূর্তেই এসএসএফ, ডিজিএফআই, এনএসআই, সিআইডি, র‌্যাব, এপিবিএন এসবিসহ অন্য গোয়েন্দা সংস্থার পদস্থ কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন। প্রায় ঘণ্টাখানেক চলে তুমুল হৈচৈ। চার পাশে জমায়েত সহস্রাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী। এ সময় অতিরিক্ত সচিব ইব্রাহিম হোসেন খান, যুগ্ম সচিব মোশাররফ হোসেনসহ উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারাও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করেন। এ ঘটনায় সব শ্রেণীর কর্মকর্তা-কর্মচারী ছিঃ ছিঃ করতে থাকেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা ও হামলার শিকার গাড়িচালক জিয়াউল হক জানান, অন্য দিনের মতো তিনি সচিবালয়ের চার ও পাঁচ নং ভবনের মাঝখানের নির্দিষ্ট স্থানে গাড়ি পার্কিং করে গাড়িতেই বসা ছিলেন। গরমের কারণে এসি চালু রেখেই গাড়িতে অবস্থান করেন। তার গাড়ির সামনে ও পেছনে অন্য গাড়ি পার্কিং করা ছিল। এ সময় এডিসি গাড়িটি সরিয়ে নেয়ার জন্য কাকে নির্দেশ দেন। চালক গাড়ির ভেতরে এডিসির কথা শুনতে পাননি। দরজা খুললে এডিসি ফের গাড়ি সরিয়ে নেয়ার নির্দেশ দিলে চালক বলেন, ‘বাবা কোথায় নেব। সব খানেই তো গাড়ি’। একথা বলতেই কে তোর বাপ বলে চালককে কিল, ঘুষি এবং পড়ে গেলে লাথি মেরে রক্তাক্ত করেন এডিসি।

এডিসি মশিউর রহমান দৈনিক বার্তাকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী সচিবালয়ে অফিস করায় জাতিসংঘের আইওএম সংস্থার (অজ-১৪-০০৫) গাড়িটি অন্যত্র সরিয়ে নেয়ার জন্য বলেছেন তিনি। চালক তাকে পাত্তা না দিয়ে উল্টো তর্ক করেন। গাড়ি থেকে নেমে আসার সময় দরজার সঙ্গে ধাক্কা লেগে অথবা পকেটের কলমের খোঁচায় রক্ত বের হয়েছে। গাড়িটি সচিবালয়ে প্রবেশের পাস ছিল না বলে তিনি দাবি করেন।

একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী জানান, জানুয়ারিতে ভূমি মন্ত্রণালয়ের কম্পিউটার সেলের প্রোগ্রামার ইলিয়াস হোসেনকে সচিবালয়ে প্রবেশের সময় কিল, ঘুষি ও লাথি মারেন এডিসি মশিউর। একই মন্ত্রণালয়ের গাড়িচালক আকতার হোসেনকে (অতিরিক্ত সচিব ইব্রাহিম হোসেন খানের গাড়িচালক) ফেব্রুয়ারিতে এডিসি কক্ষে ডেকে নিয়ে ৩ ঘণ্টা আটকে রেখেছেন। তার অপরাধ সে এডিসির কথামতো গাড়ি পার্কিং করেনি। এক সচিবের গানম্যান নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, স্যান্ডেল পরে অফিসে আসায় তাকে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করেছেন এডিস মশিউর। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক প্রশাসনিক কর্মকর্তাকে মেরেছেন তিনি। পরে তিনি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের কাছে ক্ষমা চেয়ে এ ধরনের অপরাধ না করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তিনি।

সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানান, পুলিশ মন্ত্রণালয় হওয়ায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তাকে মারার ঘটনায় এডিসি ক্ষমা চেয়েছেন। অন্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের শারীরিক নির্যাতন করার ঘটনা স্বরাষ্ট্র সচিবকে লিখিতভাবে অবহিত করার পরও প্রতিকার পাওয়া যায়নি। অতিরিক্ত সচিব পদমর্যাদার এক কর্মকর্তার প্রশ্ন_ গাড়িচালক এডিসিকে মারলে তাকে গ্রেফতার করে সরকারি কাজে বাধা দেয়ার অপরাধে রিমান্ডে পাঠানো হতো। কিন্তু ৫৯ বছর বয়সী এক চালককে মেরে রক্তাক্ত করার পরও এডিসির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেয়া অশুভ লক্ষণ।