টিপু সুলতান/দৈনিক বার্তা : ঝিনাইদহ জেলা বাস-মিনিবাস শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল গাফ্ফার বিশ্বাসকে (৫০) কুপিয়ে হত্যা করেছে দুবৃর্ত্তরা। সোমবার ভোর ৪টার দিকে জেলা শহরের আরাপপুরের উকিলপাড়ায় এ হত্যাকা-ের ঘটনা ঘটে। নিহত গাফফার কালীগঞ্জ উপজেলার নিয়ামতপুর গ্রামের মৃত বাবর আলী বিশ্বাসের ছেলে। তিনি ঝিনাইদহ জেলা বাস-মিনিবাস শ্রমিক লীগেরও সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। পরিবার নিয়ে তিনি ঝিনাইদহ শহরের আলহেরাপাড়ায় বসবাস করতেন। জেলা বাস-মিনিবাস শ্রমিক ইউনিয়নের কমিটি নিয়ে বিরোধের জের ধরে তাকে হত্যা করা হতে পারে বলে পুলিশের ধারণা।
নিহত শ্রমিক নেতার মেয়ে রূপনা খাতুন জানান, রোববার রাত ১০টার দিকে তিনি কয়েক জন শ্রমিকের সাথে বাসা থেকে বের হন। রাতে বাড়ি ফেরেন না। ভোরে তারা বাবার খুনের খবর পান।
ঝিনাইদহ সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শাহাবুদ্দিন আজাদ জানান, তাকে রাত ১২টার দিকে শহরের চুয়াডাঙ্গা বাসস্ট্যা-ে হাফিজ নামে এক শ্রমিকের সাথে একটি চায়ের দোকানে চা খেতে দেখা যায়। ভোর ৪টার দিকে আরাপপুর উকিলপাড়া মোড়ে তাকে কুপিয়ে মারাত্মক জখম করে ফেলে যায় দুর্বৃত্তরা। তখনও তিনি জীবিত ছিলেন। পথচারীদের সহায়তায় টহল পুলিশ তাকে উদ্ধার করে জেলা সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মোজাম্মেল হক তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। নিহতের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। তবে এ ঘটনায় পুলিশ কাউকে আটক করতে পারেনি। ঘটনার তদন্ত চলছে।
নিহতের স্ত্রী রোকসানা খাতুন অভিযোগ করেন, ঝিনাইদহ পৌর মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক সাইদুল করিম মিন্টুর সাথে ঠিকাদারি কাজের বিরোধ নিয়ে তাকে হত্যা করা হয়েছে। পৌর বাস টার্মিনালের কাজের জন্য তার স্বামী মেয়রের নিকট ২৮ লাখ ৫৬ হাজার টাকা পাবেন। মেয়রের ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসীরা তার স্বামীকে হত্যা করেছে বলে তিনি অভিযোগ করেন। শ্রমিক ইউনিয়নের নেতা রিজু বল সাইদ, অলিয়ার ও বজলু তার স্বামীকে হত্যার জন্য সন্ত্রাসীদের লেলিয়ে দিয়েছিল। তাদের ভয়ে গাফফার শশ্মানঘাটে পালিয়ে থাকতেন। সেখানে থেকেও সন্ত্রাসীরা প্রতিমাসে ১৫ হাজার টাকা চাঁদা আদায় করতো।
ঝিনাইদহের সহকারী পুলিশ সুপার মোঃ নজরুল ইসলাম বলেন, বাস-মিনিবাস শ্রমিক ইউনিয়নের মধ্যে দ্বন্দ চলছে। এ কারণে এ হত্যাকা- ঘটতে পারে বলে ধারণা করা যাচ্ছে। আবার শ্রমিক ইউনিয়নের মধ্যে বিরোধের সুযোগে তৃতীয় পক্ষ ঘটনা ঘটাতে পারে বলেও তিনি ধারণা করেন। এ ঘটনায় সদর থানায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।
শ্রমিকদের একটি সূত্র জানায়, রোববার রাত ১০টার দিকে এক শ্রমিক গাফ্ফারকে মোটরসাইকেলে করে আরাপপুর উকিলপাড়ায় নামিয়ে দিয়ে আসে। এরপর ভোরে তাকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। ঝিনাইদহ বাস-মিনিবাস শ্রমিক ইউনিয়নের নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক ছিলেন আবদুল গাফ্ফার বিশ্বাস। নেতৃত্ব নিয়ে দ্বন্দের কারণে তিনি সাময়িক ভাবে বহিস্কৃত হন। রোববার প্রশাসনের সহায়তায় দুই পক্ষের মধ্যে শ্রমিক সমঝোতার মাধ্যমে গাফ্ফার গ্রুপ ইউনিয়ন অফিসের কতৃত্ব ফিরে পান।
এদিকে এদিকে এই নির্মম হত্যাকা-ের ঘটনায় শ্রমিক সংগঠনগুলোর মধ্যে চরম অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। শ্রমিক নেতা আব্দুল গাফফার বিশ্বাস হত্যার প্রতিবাদে অনির্দিষ্টকালের পরিবহন ধর্মঘট পালন করছে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা। এতে করে ঝিনাইদহের সাথে সব রুটের যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে দূর দূরান্তের যাত্রীরা ঝিনাইদহ শহরে আটকা পড়ে দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন।
সোমবার সকাল ৯টা থেকে অনির্দিষ্টকালের পরিবহন ধর্মঘট ডেকে শ্রমিকরা রাস্তায় শুয়ে বিক্ষোভ শুরু করে। এসমসয় দুটি বাস ও চারটি ইজিবাইক ভাঙচুর করে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা। এদিকে হত্যাকারীদের গ্রেফতার না করা পর্যন্ত সব রুটে যান চলাচল বন্ধ থাকবে বলে বাস-মিনিবাস শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি উজ্জল বিশ্বাস জানিয়েছেন। আব্দুল গাফফার বিশ্বাস হত্যার জের ধরে ঝিনাইদহে বিবদমান বাস শ্রমিকদের দুটি গ্রুপের মধ্যে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে শহরে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
টিপু সুলতান