সবজি চাষে ভাগ্য বদল শরীয়তপুরের দিনমজুর আবু তালেবের

দৈনিক বার্তা : শরীয়তপুর, ৫ মে, ২০১৪: এক সময়ের হতদরিদ্র দিনমজুর এখন লাখপতি। নিজের কৃষি জমি না থাকায় অন্যের জমি ভাড়া নিয়ে সবজি চাষ করে ভাগ্যের চাকা ঘুরিয়েছেন তিনি। সদর উপজেলার তুলাসর ইউনিয়নের চর স্বর্ণঘোষ গ্রামের আত্মপ্রত্যয়ী এই ব্যক্তির নাম আবু তালেব সরদার।

ভূমিহীন বিত্তহীন হয়েও শুধু মনের জোর আর নিজের শ্রমের প্রতি বিশ্বাস নিয়ে এক সময়কার দিনমজুর এই আবু তালেব ২৬ বছরের ব্যবধানে বনে গেছেন লাখপতি। তিনি এখন নিজের আর্থিক স্বচ্ছলতার পাশাপাশি শরীয়তপুরে প্রতিদিন সরবরাহ করছেন বিষমুক্ত সবজি।  আবু তালেবের সাথে আলাপ করে জানা গেছে, ১৯৮৮ সালে মাত্র ৪০ শতাংশ জমি ভাড়া নিয়ে শুরু হয় তার জীবনযুদ্ধের। দিনের পর দিন পরিশ্রম আর আত্মবিশ্বাসের ফলশ্র“তিতে এখন তার সবজি চাষের জমির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২১৮ শতাংশে। শীতকালিন আগাম লাউ, টমেটো, সীম, মুলা, গাজর, কপির আবাদ করেন তিনি। শীত শেষ হতে না হতেই তার জমিতে বেড়ে ওঠে ঢেঁড়স, চিচিংগা, ধুন্দল, ঝিঙ্গা। বর্ষার সময় তিনি আবাদ করেন করল্লা, শসা, কচু, পুঁই শাকসহ অন্যান্য সবজি। সারা বছরই তার জমিতে কোন না কোন সবজি আবাদ হয়। আবু তালেবের সবজি ক্ষেত দেখলে সত্যিই প্রাণ জুড়িয়ে যায়। নদীর পাড়ের পতিত জমি ভাড়া নিয়ে তিনি গড়ে তুলেছেন সবজির বাগান। যেদিকে চোখ যায় সেদিকে দেখা যায় সবুজ সবজির সমারোহ। আবু তালেব জানান, এতে তার সকল খরচ বাদ দিয়ে বছরে ৫০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা সঞ্চয় থাকে। সবজি বিক্রির আয় দিয়ে তিনি তার ভাঙ্গা দোচালা ঘরের স্থলে নির্মাণ করেছেন পাকা টিন সেড ঘর। কিনেছেন ১৬ শতাংশ জমিও। ৪ ছেলে মেয়ের সবাই লেখাপড়া করছে। অর্থ সংকটে নিজের লেখাপড়া করতে না পারার দুঃখ তাকে বার বার নাড়া দিলেও নিজ সন্তানদের লেখাপড়া করাতে পেরে তিনি তৃপ্তি বোধ করছেন।

আবু তালেব জানান, আইপিএম পদ্ধতিতে সবজি আবাদ করার জন্য জৈব সারের চাহিদা পূরণ করতে নিজেই পালন করছেন ৪টি গাভী। নিজ পরিবারের সদস্যদের সহযোগিতায় সকল কাজ সম্পন্ন করতে না পারায় তার কৃষি কাজ ও গরু পালনের কাজে তার বাড়িতে এখন কয়েকজন শ্রমিক কাজ করে।  আবু তালেবের বড় ছেলে ইব্রাহিম সরদার শরীয়তপুর সরকারী কলেজে ¯œাতক শ্রেণীতে লেখাপড়া করছে। পড়ার ফাঁকে ফাঁকে সে ও তার ছোট ভাই সদ্য সমাপ্ত দাখিল পরীক্ষা দেয়া মামুন সরদার পিতার কাজে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়।  তালেবের এই সাফল্য দেখে আশপাশের বেকার যুবক ও নারীরাও সবজি চাষ করার পরামর্শ নিতে ছুটে আসেন তার কাছে। এমন একজন যুবক রুহুল আমিন বলেন, আমি লেখাপড়া শেষে চাকরি না পেয়ে হতাশ হয়ে গিয়েছিলাম। এখন তালেব কাকার পরামর্শে বাড়ির পাশে নিজেদের পতিত জমিতে সবজি আবাদ শুরু করেছি। এখন আমার আর্থিক উন্নতি হচ্ছে। আশা করছি ভবিষ্যতে আরও উন্নতি করতে পারব।

শরীয়তপুর সদর উপজেলার উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মনির হোসেন খান বলেন, সবজি চাষী আবু তালেব আমাদের উপজেলার একজন মডেল সবজি চাষী। সারা বছরই তিনি সবজি আবাদ করেন। প্রথমদিকে সবজিতে কীটনাশক ব্যবহার করলেও আমাদের সহযোগিতা ও পরামর্শে তিনি এখন আর রাসায়নিক সার বা কীটনাশক ব্যবহার করছেন না। এর পরিবর্তে জৈবসার ও আইপিএম পদ্ধতিতে বালাই দমন করেন। ফলে তার উৎপাদিত সবজির বাজারে যেমন চাহিদা, মূল্যও তেমন বেশী। তিনি জানান, সবজি চাষ করেই তালেব শূন্য থেকে লাখপতি হয়ে গেছেন। এতে তার জীবনের মোড় যেমন ঘুরেছে, তেমনি এসেছে আর্থিক স্বচ্ছলতা এবং বৃদ্ধি পেয়েছে সামাজিক মর্যাদাও।