1দৈনিক বার্তা :  বর্তমান সরকারের বিদায় অনেক  বেশি  বেদনাদায়ক হবে বলেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এম কে আনোয়ার।তিনি বলেন, অন্যায়ভাবে ক্ষমতা দখল করে জনগণের ওপর দুঃশাসন চালিয়েছে তারা। এটি বন্ধ না হলে ভবিষ্যতে এর ফলাফল আপনাদের (আওয়ামী লীগ) ওপর পড়বে।

শুক্রবার জাতীয়  প্রেসক্লাবে স্বাধীনতা  ফোরাম  কেন্দ্রীয় সংসদের উদ্যোগে আয়োজিত এক  সেমিনারে এম কে আনোয়ার এ সব কথা বলেন।নিরাপত্তা সংকটে নাগরিক জীবন: উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক  সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি আবু নাসের  মো.রহমত উল্লাহ।

সেমিনারে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন- বিএনপির কেন্দ্রীয় সহসভাপতি মেজর (অব.) হাফিজ, বিচরপতি আবদুর রউফ, অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহ, যুবদল সভাপতি  মোয়াজ্জেম  হোসেন আলাল প্রমুখ।

এম  কে আনোয়ার বলেন, নারায়ণগঞ্জের ঘটনায় বিএনপি জড়িত থাকলে  গ্রেফতার করুন। কারণ, এর সঙ্গে বিএনপি নয়, আওয়ামী লীগ, যুবলীগের  লোকেরাই জড়িত।  দেশে এখন হত্যা, গুম, খুন ছাড়া আর কিছু  নেই।  যেভাবে বাকশাল করা হয়েছিল,  সে ভাবেই ৫ জানুয়ারির নির্বাচন করা হয়েছে।

নারায়ণগঞ্জের গুম-খুনের ঘটনায় বিএনপির  কেউ জড়িত থাকলে তাকে  গ্রেফতার করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য এমকে আনোয়ার।

গুম-খুনের ঘটনায় বিএনপি জড়িত থাকতে পারে’ স্বাস্থ্যমন্ত্রীর এমন বক্তব্যের প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, একজন অনেক কষ্টে মন্ত্রী হয়েছেন তিনি বলছেন নারায়ণগঞ্জের ঘটনায় বিএনপি জড়িত। বিএনপি নয়, আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগ জড়িত। বিএনপির  কেউ জড়িত থাকলে  গ্রেফতার করুন।

এমকে আনোয়ার বলেন,দেশ এখন একটি মৃত্যু উপত্যকায় পরিণত হয়েছে।এরজন্য সরকারের পাশাপাশি সবচেয়ে  বেশি দায়ি একজন বিচারপতি (সাবেক প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক)। যিনি একটি রায়ের মাধ্যমে সংবিধানকে ছিন্নভিন্ন করে মানুষের  মৌলিক ও ভোটের অধিকার হরণ করেছেন। এ সংবিধান যতদিন থাকবে ততদিন দেশে উন্নতি ও উন্নয়ন কিছুই হবে না। তাই এ সংবিধানকে আস্তাকুড়ে ফেলে দিতে হবে।

তিনি বলেন, দেশের বিচার বিভাগ স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারছে না। ওএসডির ভারে প্রশাসন ভেঙ্গে পড়েছে। সরকার যাদেরকে দুর্নীতি মুক্ত হিসেবে  দেখতে চায় তাদের সার্টিফিকেট দিচ্ছে দুদক। এভাবে করে সরকার রাষ্ট্রের  মৌলিক স্তম্ভগুলোকে  ভেঙ্গে  ফেলেছে। এভাবে চলতে পারে না।

নেতাকর্মীদের নিরাশ না হওয়ার আহ্বান জানিয়ে সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, জানি না কতদিন বাঁচবো। তবে আশা করি  দেশের মানুষ একদিন সোজা হয়ে দাঁড়াতে চাইলে কেউ তাদেরকে দমিয়ে রাখতে পারবে না। তাই নিরাশ হওয়া যাবে না। সামনে এগিয়ে যেতে হবে।

প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে এমকে আনোয়ার বলেন, আপনাদের বিদায় নিতেই হবে। তাই শিগগিরই অবৈধভাবে দখল করা ক্ষমতা ত্যাগ করুন। অন্যথায় বিদায় হবে  বেদনাদায়ক। আর এজন্য আপনাকেই  খেসারত দিতে হবে।

সাবেক মন্ত্রী এম কে আনোয়ার রাষ্ট্রের সব  মৌলিক স্তম্ভকে ধ্বংস করার জন্য সরকারকে দায়ী করে বলেন, এ সরকারের আমলে রাষ্ট্রের সবকিছু ধ্বংস করে দেওয়া হচ্ছে। বিচার বিভাগ স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারছে না। ওএসডি করা হচ্ছে। সরকার যাকে চায়, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তাকে দুর্নীতিমুক্ত সনদ দিচ্ছে।

তিনি বলেন, যেদিন  থেকে দুই কোটি টাকা পর্যন্ত  কোনো কাজে দরপত্র বন্ধ করে  দেওয়া হয়েছে,  সেদিন  থেকেই দুর্নীতির সূত্রপাত।

বিএনপির কেন্দ্রীয় সহসভাপতি মেজর (অব.) হাফিজ বলেন,আমরা সবাই অপেক্ষা করছি কবে সরকারের ওপর গজব নামবে। আবারও রাজপথে নেমে সরকারের বিরুদ্ধে এই গজব তরান্বিত করতে হবে।  হাফিজ বলেন, এমন একটি নির্বাচনী ব্যবস্থা খুঁজে নিতে হবে, যাতে করে প্রকৃত রাজনীতিবিদরা জাতীয় সংসদে আসীন হতে পারেন। নির্বাচন কমিশনকে কলঙ্কমুক্ত করতে হলে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন জরুরি। যারা দলনিরপেক্ষ ব্যক্তি হবেন, তাদেরই কমিশনে নিয়োগ দিতে হবে। এজন্য চাই ভারতের মতো শক্ত নির্বাচন কমিশন। রাষ্ট্র পরিচালনার মতো  যোগ্য ব্যক্তিদের নির্বাচনে অংশ  নেওয়ার সুযোগ দেবে কমিশন।

তিনি বলেন, রাজনীতি এখন আতঙ্কের বিষয়বস্তু। রাজনীতিবিদ শুনলে মানুষের মনে আতঙ্ক তৈরি হয়। আগামী দিনে ভুল  থেকে শিক্ষা নিয়ে আন্দোলনে নামতে হবে।

অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার বিচারপতি আবদুর রউফ সরকারের উদ্দেশ্যে বলেন,দেশ চালান আপত্তি  নেই। তবে উচ্ছৃঙ্খলভাবে চালানোর চেষ্টা করবেন না। তাহলে এর ফল আপনাদের ঘাড়েই পড়বে। আর জনগণ আপনাদের লুকোচুরি বুঝে  গেছে।

রাজনীতিবিদদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আগে নিজেরা সুশৃঙ্খল হন। তাহলে আগামী প্রজন্মও সুশৃঙ্খল হবে।

অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহ বলেন, এখন শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষ ও  লেক্সাস গাড়ি ছাড়া রাজনীতি হয় না। অত্যাচারীদের হাত অনেক লম্বা। কাজটি এত সহজ নয়। ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) কিংবা যুক্তরাষ্ট্র এসে কাজটি করে  দেবে, তা সম্ভব নয়।কাজটি নিজেদেরই করতে হবে। তিনি ব্যঙ্গ করে বলেন, পিপলস রিপাবলিক অব বাংলাদেশ  নেই, এটি এখন পিপলস রিপাবলিক অব ফিয়ার-এ পরিণত হয়েছে।

যুবদল সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে সশস্ত্র বিপ্লবের ডাক দিয়েছেন।

মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, ৭২ সালেও দেশের পরিস্থিতি এতটা খারাপ ছিল না। তখন একতরফা কিছু ছিল না। একদিকে রক্ষীবাহিনী  যেমন ছিল, অন্যদিকে সিরাজ শিকদারের বাহিনীও ছিল। সিরাজ শিকদারের বাহিনীর কারো লাশ পড়লে, আওয়ামী লীগের কর্মীদের লাশও পাওয়া  যেত। কিন্তু, এখন সবকিছু একতরফা হচ্ছে।

রাষ্ট্রীয় বাহিনী দিয়ে সন্ত্রাস চালানো হচ্ছে। এদের রুখতে সশস্ত্র বিপ্লব সংগঠনের আহ্বান জানান তিনি।

তিনি বলেন, যেহেতু, এই সরকার অবৈধ,তাই আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ব্যবহার করা হচ্ছে। বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালে ইচ্ছা করলে এ সব করতে পারতো না। কিন্তু, বিএনপি উদার গণতান্ত্রিক দল। তাই, এসবে বিশ্বাস করে না।

যুবদল সভাপতি বলেন, যারা মুক্তিযুদ্ধের  ক্রেস্ট নিয়ে দুর্নীতি করেছে, তাদের বিরুদ্ধে খালি হাতে লড়াই করা উচিত নয়।  সেনাবাহিনী  থেকে কমান্ডো বাহিনী পাঠিয়ে র‌্যাবের-১১ কার্যালয়  ঘেরাও করে তল্লাশি চালালে আরো অনেক কিছুই পাওয়া যাবে।তিনি বলেন, রাষ্ট্রীয় কৌশল নির্ধারণে বিএনপি তাৎক্ষণিক কিছু ভুল করেছে।  সেটি স্বীকার করি। তবে হতাশ হওয়ার কিছু নেই। এদের হঠাতে হলে দরকার জনগণের শক্তি।