1দৈনিক বার্তা : সিদ্ধিরগঞ্জের শিমরাইল ট্রাকস্ট্যান্ডে নূর হোসেনের পাঁচটি দোকানে অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ মাদক ও অস্ত্র উদ্ধার করেছে পুলিশ।কাউন্সিলর নজরুল ইসলামসহ সাতজনকে অপহরণ ও হত্যা মামলার প্রধান আসামি নূর হোসেনের দোকানে শুক্রবার বিকাল ৪টা  থেকে তল্লাশি শুরু হয় বলে  জেলা পুলিশের বিশেষ শাখার পরিদর্শক মইনুর রহমান জানান।

নারায়ণগঞ্জের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি নূর  হোসেন আন্তঃজেলা ট্রাক চালক ইউনিয়নের সিদ্ধিরগঞ্জ শাখারও সভাপতি। শিমরাইল ট্রাকস্ট্যান্ডে তার আধিপত্য ছিল বলে এলাকাবাসী জানান।পরিদর্শক মইনুর বলেন, নূর  হোসেনের  দোকানগুলো  থেকে বিভিন্ন ধারালো অস্ত্র, বিপুল পরিমাণ ফেনসিডিল ও বিদেশি মদ উদ্ধার করা হয়েছে।তবে এসময় কাউকে আটক করতে পারেনি পুলিশ।

শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৩টা  থেকে নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ( হেডকোয়াটার) মোহাম্মদ জাকারিয়ার  নেতৃত্বে এ অভিযান পরিচালিত হয়।মোহাম্মদ জাকারিয়া জানান, ট্রাক স্ট্যান্ডে নূর  হোসেনের মাদক সাম্রাজ্যে বিপুল পরিমাণ মাদক মজুদ রয়েছে, এমন তথ্যের ভিত্তিতে সেখানে অভিযান চালানো হয়। এসময় সেখান  থেকে ২হাজার ৮২৪ বোতল  ফেনসিডিল, বিপুল সংখ্যক ইয়াবা ট্যাবলেট, ৩৭ কেইস হ্যানিকেন বিয়ার, দুটি বড় ছোরা এবং ৩টি রামদা উদ্ধার করা হয়।

অভিযানের সময় ট্রাক স্ট্যান্ড এলাকার আশপাশে উপস্থিত স্থানীয় লোকজন বলেন, অপরহণের পর নূর হোসেন পালিয়ে  গেছে। পুলিশ এখন পর্যন্ত নূর  হোসেনের কোনো হদিস বের করতে পারেনি। তাই সাধারণ মানুষ ও মিডিয়ার দৃষ্টি অন্যদিকে ঘুরাতেই এমন উদ্ধার অভিযান চালানো হচ্ছে।

এর আগে ৩  মে নূর হোসেনের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে সেখান  থেকে রক্তমাখা একটি কালো রঙের হাইএইস (ঢাকা মেট্রো-চ ১৫-০৫১০) গাড়ি জব্দ করেছে পুলিশ। এ সময় মোট ১২ জনকে আটক করা হয়েছে।আটকদের মধ্যে নূর হোসেনের বডিগার্ড, বাড়ির দারোয়ান ও কাজের লোক রয়েছে বলে  পুলিশের একটি সূত্র থেকে জানা যায়।তবে গডফাদার নূর হোসেন, তার  ছোট ভাই জজ মিয়া, ভাতিজা কাউন্সিলর শাহজালাল বাদলসহ তার সহযোগীদের কাউকেই  গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ।

এদিকে, নারায়ণগঞ্জে আলোচিত ৭ হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্ত ও দোষীদের শাস্তি না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার  ঘোষণা দিয়েছেন বিএনপি সমর্থিত সম্মিলিত  পেশাজীবী সংগঠনের  নেতৃবৃন্দরা। ওই ঘটনায় নিহত আইনজীবী চন্দন সরকার ও প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলামের পরিবারের সদস্যদের সমবেদনা জানাতে গিয়ে শুক্রবার তারা এ ঘোষণা দেন।এক্ষেত্রে কোন রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ  থেকে আন্দোলন করা হবে না বলেও নিহতদের পরিবারের সদস্যদের আশ্বস্ত করেন তারা।

এসময় সম্মিলিত  পেশাজীবী পরিষদের ভারপ্রাপ্ত আহবায়ক রুহুল আমিন গাজী, সদস্য সচিব ড্যাবের ডা. এ  জেড এম জাহিদ হোসেন, বিশিষ্ট চলচ্চিত্র পরিচালক চাষী নজরুল ইসলাম,  মোঃ রফিকুল ইসলাম, ঢাকা বারের  নেতা অ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়া, বিএফইউজে’র সভাপতি শওকত মাহমুদ, মহাসচিব এম এ আজিজ, কবি সেলিম বালা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

স্থানীয়দের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত  হোসেন খান, ড্যাব নেতা ডা. ফেরদৌস, নগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এটিএম কামাল, জেলা কৃষক দলের সাধারণ সম্পাদক ও ৮নং ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি উজ্জল হোসেন, সিদ্ধিরগঞ্জ থানা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক মোঃ জুয়েল প্রধান, যুবদল নেতা মোঃ পিন্টু, প্রমুখ।

শুক্রবার  বেলা ১১টায় সিদ্ধিরগঞ্জের জালকুড়ি বৃষ্টিধারা এলাকায় চন্দন সরকারের বাসভবনে যান নেতৃবৃন্দ। পরে চন্দন সরকারের মেয়ে জামাতা ডা. বিজয় কুমার পাল,রঞ্জিত  দেবনাথ ও মেয়ে ডা. সুস্মিতা সরকারের সঙ্গে কথা বলেন তারা।

এসময় ডা. সুস্মিতা সরকার বলেন, আমার বাবা চন্দন সরকারের মৃত্যুটা আমাদের কাছে অপ্রত্যাশিত। তবে আমরা সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি আস্থা রাখতে চাই। এই ঘটনার দৃষ্টান্তমুলক বিচার হওয়া উচিৎ যাতে  কেউ ভবিষ্যতে এ ধরণের ঘটনা ঘটাতে না পারে।প্রধানমন্ত্রী তার বাবাকে হারিয়েছেন। তিনি জানেন পিতা হারানোর বেদনা। তবে বর্তমানে সন্তোষজনক পদক্ষেপ লক্ষ্য করা যাচ্ছে না বলেও অভিযোগ করেন তিনি।

জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন খান বলেন, চন্দন সরকার নিখোঁজ হওয়ার পর থেকেই আইনজীবীরা দল-মত নির্বিশেষে আন্দোলন চালিয়ে আসছেন।অ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়া বলেন, আমরা আইনজীবীরা কর্মসূচি দিলেও তা রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ  থেকে দেইনি।এরপর দুপুর  পৌনে ১২টায় নজরুল ইসলামের শ্বশুর বাড়িতে অবস্থানরত নজরুলের স্ত্রী সন্তানদের সমবেদনা জানান তারা। পরে তারা নারায়ণগঞ্জ  প্রেসক্লাবে সাংবাদিকদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।

এদিকে, নারায়নগঞ্জে র‌্যাব-১১ এর সিও হিসেবে  লে. কর্নেল আনোয়ার লতিফ খানকে নিয়োগ  দেয়া হয়েছে। শুক্রবার দুপুরে র‌্যাব সদর দফতর গণমাধ্যমে  থেকে পাঠানো এক বার্তায় এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে।নারায়নগঞ্জের প্যানেল  মেয়র নজরুল ইসলামসহ ৭ জনকে অপহরণ ও হত্যার ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগ ওঠার পর র‌্যাব-১১ অধিনায়ক লে. কর্নেল তারেক সাঈদ মাহমুদ, মেজর আরিফ হোসেন এবং লে. কমান্ডার এমএম রানাকে বাধ্যতামূলক অবসর দেয়া হয়।

নতুন দায়িত্ব পাওয়া ওই কর্মকর্তা হলেন-  লেফটেন্যান্ট কর্নেল আনোয়ার লতিফ খান। তিনি রাজশাহীতে র‌্যাব-৫ এর অধিনায়ক ছিলেন।শুক্রবার র‌্যাব সদরদপ্তরের সহকারী পরিচালক (মিডিয়া) সাদিরা খাতুন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।তিনি বলেন, গল রাতে এ সংক্রান্ত অর্ডার হয়েছিল। শুক্রবার তিনি র‌্যাব-১১  তে  যোগ দিয়েছেন।

গত ২৭ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের ২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নজরুল, আইনজীবী চন্দন কুমার সরকারসহ সাতজনকে র‌্যাব পরিচয়ে অপহরণ করা হয় বলে অপহৃতদের পরিবার অভিযোগ  তোলে।পরে র‌্যাব-১১ এর অধিনায়ক  লেফটেন্যান্ট কর্নেল তারেক সাঈদ মাহমুদ ও  সেনাবাহিনীর  মেজর আরিফ হোসেন এবং নৌবাহিনীর লেফটেন্যান্ট কমান্ডার এমএম রানাকে চাকরিচ্যুত করা হয়।তারেক সাঈদ মাহমুদ ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনামন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন  চৌধুরী মায়ার জামাতা।

তারেক সাঈদের স্থলাভিষিক্ত আনোয়ার লতিফ রাজশাহীতে র‌্যাব-৫ এর অধিনায়ক ছিলেন।নারায়ণগঞ্জে অপহরণের চাঞ্চল্যকর এই ঘটনার দুদিন পর নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার, দুটি থানার ওসির পাশাপাশি র‌্যাবের ওই তিন কর্মকর্তাকে প্রত্যাহার করা হয়।সর্বশেষ বৃহস্পতিবার পুলিশের ৮১ কর্মকর্তাকে একযোগে নারায়ণগঞ্জ থেকে বদলি করা হয়। এদের মধ্যে দুইজন পরিদর্শক, ৪০ জন উপপরিদর্শক (এসআই) এবং ৩৯ জন সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) রয়েছেন।