1দৈনিক বার্তা : মুক্তিযুদ্ধের মহৎকীর্তি এবং বীরত্বগাঁথা, চলচ্চিত্রের মাধ্যমে তুলে ধরতে নির্মাতাদের আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।তরুণ সমাজকে বিপথে  ঠেলে দিতে পারে এমন চলচ্চিত্র নির্মাণ না করার জন্য নির্মাতাদের প্রতি আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, এটি ডিজিটাল যুগ, এই যুগের উপযোগী করে ডিজিটাল চলচ্চিত্র নির্মাণের দক্ষতা ও  যোগ্যতা অর্জন করতে হবে।

শনিবার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন  কেন্দ্রে ২০১২ সালের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্তদের পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে তিনি এ আশা ব্যক্ত করেন।সারাদেশে একের পর এক বন্ধ হয়ে যাওয়া   প্রেক্ষাগৃহগুলো সরকারি সহযোগিতায় সচল হতে পারে বলে আশা প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী  শেখ হাসিনা।এ সময় একই অনুষ্ঠানে উপস্থিত তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ারও নির্দেশ দেন তিনি।

চলচ্চিত্র নির্মাণে ডিজিটাল পদ্ধতির ব্যবহার জরুরি বলে মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, চলচ্চিত্র সমাজের কথা বলে, মানুষের কথা বলে। তাই চলচ্চিত্রের গুরুত্ব বুঝেই এর উন্নয়নে আওয়ামী লীগ অনেক উদ্যোগ নিয়েছে।চলচ্চিত্রকে শিল্পের সকল শাখার সম্মিলন বলে উল্লেখ করে  শেখ হাসিনা বলেন, চলচ্চিত্র মানুষের জীবনযাত্রায় প্রভাব  ফেলে, পরিবর্তন এনে দেয়। একটি জাতি গঠন, শিক্ষার বিস্তার এসব কিছুতেই চলচ্চিত্রের প্রভাব থাকে।

চিত্ত বিনোদনের অন্যতম উৎস হিসেবে চলচ্চিত্রের ভূমিকার কথা উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, পরিবারের সকল সদস্যকে নিয়ে  দেখা যাবে এমন সিনেমা  বেশি বেশি তৈরি হলে পারিবারিকভাবে চিত্ত বিনোদনের জন্য চলচ্চিত্রের প্রতি মানুষের আগ্রহ বাড়বে। শিশুদের জন্য উপযোগী চলচ্চিত্র বেশি  বেশি নির্মাণের পরামর্শ  দেন তিনি।প্রধানমন্ত্রী বলেন, চলচ্চিত্র এমন একটি মাধ্যম  সেখানে মানুষ একাত্ম হয়ে  যেতে পারে কারণ তার  দৈনন্দিন জীবনের ঘটনা প্রবাহ নিয়েই চলচ্চিত্র তৈরি হয়।

প্রধানমন্ত্রী এসময় চলচ্চিত্রের  গোড়ার দিনগুলোর কথা স্মরণ করে বলেন, সর্বকালের সেরা বাঙালি, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু  শেখ মুজিবুর রহমানের বিশেষ উৎসাহেই বাংলাদেশে চলচ্চিত্রের যাত্রা শুরু হয়। ১৯৫৬ সালে তৎকালীণ আওয়ামী লীগ সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় বাংলা চলচ্চিত্রের যাত্রার কথাও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। দেশের ইতিহাস ও ঐতিহ্যকে চলচ্চিত্রের মাধ্যমে তুলে ধরার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যা কিছু মঙ্গলময় তা চলচ্চিত্রে ফুটিয়ে তুলতে হবে, আর যা কিছু ক্ষতিকর ও খারাপ তার প্রতি মানুষের অনীহা সৃষ্টি করতে এর ভয়াবহ পরিণতির দিকগুলো তুলে ধরতে হবে।

অশ্লীলতা, ধুম ধারাক্কা  থেকে চলচ্চিত্রকে মুক্ত করতে ১৯৯৬ সালে গঠিত তার সরকারের ভূমিকার কথাও স্মরণ করেন প্রধানমন্ত্রী।জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার প্রাপ্ত শিল্পী কলাকুশলীদের অভিনন্দন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী আশা প্রকাশ করেন, এই পুরস্কার একটি সুস্থ্য ধারার চলচ্চিত্র নির্মাণে অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করবে।

তরুণ প্রজন্মের হাতে নতুন নতুন চলচ্চিত্র নির্মিত হচ্ছে, দর্শক হলে গিয়ে সিনেমা  দেখছে, এর প্রশংসা করে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, তাদের হাতে ডিজিটাল যুগের উপযোগী আরও সুন্দর সুন্দর চলচ্চিত্র নির্মিত হবে এটাই প্রত্যাশা।প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রবীণরা পথ  দেখাবে নবীনরা এগিয়ে যাবে এই হোক সকলের চেতনা।প্রধানমন্ত্রী বলেন, সুস্থ ধারার চলচ্চিত্র নির্মাণে সরকারি সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে। চলচ্চিত্রে ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার করতে নির্মাতাদের তাগিদ দেন  শেখ হাসিনা। এছাড়া সারাদেশের  প্রেক্ষাগৃহগুলোকে সংস্কার ও আধুনিক করে তুলতে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দিতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে নির্দেশনাও দেন প্রধানমন্ত্রী।

চলচ্চিত্র অভিনেতা খলিলউল্লাহ খানকে আজীবন সম্মাননা দেয়ার পাশাপাশি তার চিকিৎসার দায়িত্ব নেন প্রধানমন্ত্রী। আর  শ্রেষ্ঠ অভিনেতা হিসেবে অভিনেতা শাকিব খান ও অভিনেত্রী জয়া আহসান জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার  পেয়েছেন।প্রবীণ অভিনেতা একসময়ের পর্দা কাপানো খলনায়ক খলিলের চিকিৎসার সকল ভার নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে এই ঘোষণা দিয়েছেন তিনি।

এই অনুষ্ঠানে চলচ্চিত্রে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ আজীবন সম্মাননায় ভূষিত করা হয় অভিনেতা খলিলকে।প্রধানমন্ত্রী বলেন, খলিল তার সারা জীবন আমাদের অনেক কিছু দিয়েছেন এবার সময় এসেছে আমাদের কিছু দেওয়ার।তার আজীবন চিকিৎসার ভার আমি নিলাম, বলেন প্রধানমন্ত্রী।

প্রায় বছর দুই যাবত শ্বাসকষ্ট ও ফুসফুসজনিত সমস্যায় ভুগছেন অভিনেতা খলিল।প্রধানমন্ত্রী তার বক্তৃতায় আরও বলেন, অনেক শিল্পী-কলাকুশলীই তাদের জীবনের  শেষভাগে এসে রোগ  শোকে  ভোগেন। যারা আমাদের জীবনের হাসি-কান্নার নানা দিক তুলে ধরে জীবনকে বিলিয়ে দেন তাদের জীবনের হাসি-কান্নার দিকগুলোও আমাদের দেখতে হবে।এ লক্ষ্যে অসুস্থ শিল্পী-কলাকুশলীদের চিকিৎসার জন্য গঠিত ট্রাস্টের কথা উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।

এদিকে, সর্বশেষ এ্যাপোলো হাসপাতালে ভর্তি করা হয় বর্ষীয়ান অভিনতা খলিলকে।তার বড়  ছেলে মুসা জানান, ডা. ডাকওয়ালের তত্ত্বাবধানে তার চিকিৎসা এ্যাপোলো হাসাপাতালে করা হয়। আগের  চেয়ে একটু ভালো আছেন।

খোদার পরে মা সিনেমায় অনবদ্য অভিনয়ের জন্য  শ্রেষ্ঠ অভিনেতা হিসেবে ২০১২ সালের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন শাকিব খান। চোরাবালি চলচ্চিত্রের জন্য দ্বিতীয়বারের মতো  শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী হয়েছেন জয়া আহসান।আর  ঘেটু পুত্র কমলা চলচ্চিত্রের জন্য  শ্রেষ্ঠ পরিচালক ও শ্রেষ্ঠ চিত্রনাট্যকারের পুরস্কার  পেয়েছেন প্রয়াত চলচ্চিত্রকার ও কালজয়ী কথা সাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ।অনুষ্ঠানে পুরস্কার জয়ী ব্যক্তিত্ব বা তাদের প্রতিনিধিদের হাতে পুরস্কার তুলে দিয়েছেন।

২০১২ সালে চলচ্চিত্রশিল্পে অবদান রাখার জন্য এবার ২৪ জনকে পুরস্কৃত করা হয়েছে।এছাড়া  চোরাবালি সিনেমায় পার্শ্ব চরিত্রে অভিনয়ের জন্য এটিএম শামসুজ্জামান শ্রেষ্ঠ অভিনেতার পুরস্কার  পেয়েছেন।  শ্রেষ্ঠ খলনায়কের পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন শহিদুজ্জামান  সেলিম।

ঘেটু পুত্র কমলা ছবির জন্য  শ্রেষ্ঠ সঙ্গীত পরিচালক এবং পিতা ছবিতে  আেয়না  রে ও আমার আয়না গানের জন্য  শ্রেষ্ঠ সুরকারের পুরস্কার  পেয়েছেন ইমন সাহা।  চোরাবালি সিনেমার জন্য  শ্রেষ্ঠ রচয়িতার পুরস্কার  পেয়েছেন রেদওয়ান রনি।

সিনেমা খোদার পরে মার জন্য  শ্রেষ্ঠ গায়কের পুরস্কার  পেয়েছেন পলাশ এবং তুমি আসবে বলে গানটির জন্য  শ্রেষ্ঠ গায়িকার পুরস্কার  রেপয়েছেন রুনা লায়লা। মা তুমি আমার আগে গানটির জন্য শ্রেষ্ঠ গীতিকারের পুরস্কার  পেয়েছেন মিলন খন্দকার।

উত্তরের সূর সিনেমার জন্য  শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র প্রযোজকের পুরস্কার  পেয়েছেন ফরিদুর  রেজা সাগর। একই ছবিতে পার্শ্ব চরিত্রে অভিনয়ের জন্য পুরস্কার  পেয়েছেন লুসি তৃপ্তি  গোমেস,  শ্রেষ্ঠ কাহিনীকারের পুরস্কার  পেয়েছেন শাহনেওয়াজ কাকলী, শিশু শিল্পী শাখায় বিশেষ পুরস্কার  পেয়েছেন মেঘলা। ঘেটু পুত্র কমলা সিনেমার জন্য  শ্রেষ্ঠ শিশু শিল্পীর পুরস্কার  পেয়েছেন মানুন।ঘেটু পুত্র কমলার জন্য  শ্রেষ্ঠ চিত্রগ্রাহকের পুরস্কার  পেয়েছেন মাহফুজুর রহমান এবং  শ্রেষ্ঠ সম্পাদকের পুরস্কার  পেয়েছেন ছলিউল্লাহ ছলি।  চোরাবালি’ ছবিতে  শ্রেষ্ঠ শব্দগ্রাহকের পুরস্কার  পেয়েছেন রিপন নাথ।

রাজা সুর্য খা সিনেমার জন্য শ্রেষ্ঠ শিল্প নির্দেশকের পুরস্কার  পেয়েছেন দু’জন। একজন কমলতর অন্যজন উত্তম গুহ।  ঘেটু পুত্র কমলা ছবির জন্য  শ্রেষ্ঠ  মেকআপম্যানের পুরস্কার  পেয়েছেন খলিলুর রহমান। একই ছবিতে শ্রেষ্ঠ  পোশাক ও সাজসজ্জার পুরস্কার  পেয়েছেন এসএম মাইনুদ্দিন ফুয়াদ।