1দৈনিক বার্তা : ভারতের জাতীয় রাজনীতিতে বিগত প্রায় পঁচিশ বছর ধরে বিরাট গুরুত্ব পেয়ে আসছেন তিনজন নেত্রী– তামিলনাড়ুর জয়ললিতা, উত্তরপ্রদেশের মায়াবতী ও পশ্চিমবঙ্গের মমতা ব্যানার্জী। এই তিনজনের রাজনৈতিক প্রতিপত্তি মূলত নিজেদের রাজ্যে সীমাবদ্ধ থাকলেও জাতীয় স্তরে দুই প্রধান দলই নানা সময়ে তাদের পাশে পেতে চেয়েছে। বর্তমানে দিল্লির মসনদের চাবিও এই তিন নেত্রীর হাতে। বিবিসি বাংলায় এনিয়ে শুক্রবার একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
ব্যক্তিগত জীবনে তিনজনই অবিবাহিত, তাদের মেজাজমর্জিও খুব শান্তশিষ্ট এমন কোনও প্রচার নেই। রাজনৈতিক কেরিয়ারে তারা তিনজনেই কখনও বিজেপি, কখনও কংগ্রেসের হাত ধরতে দ্বিধা করেননি। কিন্তু তিনজনের মিল বোধহয় এখানেই শেষ!
প্রায় দেড়শো দক্ষিণী ছবির নায়িকা ৬৬ বছর বয়স্ক জয়রাম জয়ললিতা। অন্তত ছটা ভাষায় অনর্গল কথা বলতে পারেন, ভক্তরা ডাকে আম্মা বা পুরাচ্চি থালাইভি, অর্থাৎ বিপ্লবী নেত্রী নামে। রাজনীতিতে এসে দারুণ সফল, তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন চার-চারবার।
বয়সে জয়ললিতার চেয়ে প্রায় আট বছরের ছোট কুমারী মায়াবতী। ভারতে দলিত রাজনীতির পুরোধা– মায়াবতীও উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন চারবার। দেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী পি ভি নরসিমহা রাও একবার বলেছিলেন, মায়াবতী হলেন গণতন্ত্রের মির‍্যাকল! ছোটবড় সবার কাছে তিনি অবশ্য প্রিয় বহেনজি!
মায়াবতীরই প্রায় সমবয়সী মমতা ব্যানার্জি– পশ্চিমবঙ্গ তথা সারা দেশে যার পরিচয় দিদি নামে। লড়াকু, অগ্নিকন্যা ইত্যাদি অনেক বিশেষণ আছে তার, এবং যেভাবে পশ্চিমবঙ্গে চৌত্রিশ বছরের বামপন্থী শাসনের অবসান ঘটিয়ে তিনি মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন, সেটা প্রায় ভারতীয় রাজনীতির লোকগাথার অংশ হয়ে গেছে!
এবং এই তিনজন মহিলা রাজনীতিককেই বরাবর দিল্লি ভীষণ সমীহের চোখে দেখে এসেছে – জাতীয় দলগুলোর কাছে তারা অপরিসীম গুরুত্ব পেয়ে এসেছেন! দিল্লিতে দ্য টেলিগ্রাফ পত্রিকার রাজনৈতিক সম্পাদক মানিনী চ্যাটার্জি মনে করেন এই তিনজন নেত্রী এমন তিনটে রাজ্যে রাজনীতি করেন যা পার্লামেন্টে প্রচুর আসন দেয়– ফলে তাদের কদরও আলাদা। তামিলনাড়ু ও পন্ডিচেরী মিলে আসন মোট চল্লিশটা, পশ্চিমবঙ্গে বিয়াল্লিশটা, আর উত্তরপ্রদেশে সবচেয়ে বেশি– আশিটা। আর এই কারণেই এই তিনজন নেত্রীর গুরুত্ব ওড়িশার নবীন পটনায়ক বা কাশ্মীরের ওমর আবদুল্লার চেয়ে বেশি।
দিল্লিতে গত তিন দশকে এই তিনজনের রাজনৈতিক উত্থানের প্রত্যক্ষদর্শী সাংবাদিক জয়ন্ত ঘোষাল বলেন, জয়ললিতা যদি কংগ্রেস-বিরোধী দ্রাবিড় রাজনীতির প্রতিভূ হন, মমতা ব্যানার্জির রাজনৈতিক জিন কিন্তু কংগ্রেস ঘরানারই! আর মায়াবতী – যিনি ভারতে দলিত রাজনীতির ধ্যানধারণাই সম্পূর্ণ পাল্টে দিয়েছেন– তিনি কিন্তু হাজার রাজনৈতিক টানাপোড়েনেও নিজের দলিত ভোটব্যাঙ্ককে আগাগোড়া সংহত রাখতে পেরেছেন।
ভারতের জটিল রাজনীতির ক্যানভাসে এই তিনজন নেত্রী– এক নি:শ্বাসে যাদের অনেকেই জয়া-মায়া-মমতা বলে সম্বোধন করে থাকেন, তারা গত আড়াই দশক ধরে এক বিশেষ ধারার রাজনীতির প্রতিনিধিত্ব করে এসেছেন, আর এই ২০১৪ সালে এসে তার ব্যতিক্রম হওয়ার কোনও কারণ নেই। সেই রাজনীতি রুথলেস ও কঠোর বাস্তবতাসম্পন্ন, দয়া-মায়া-মমতার অন্তত তাতে কোনও ঠাঁই নেই!