1নাজিম হাসান/দৈনিক বার্তা : রাজশাহীর দুর্গাপুরে শিল্পপতি স্বামীর বিরুদ্ধে পরকিয়ার অভিযোগ তোলায় ও নিজের কন্যাকে আতœহত্যার প্ররোচনার অভিযোগে মামলা করায় স্বামীর ঘর ছাড়তে হয়েছে স্ত্রী মরিয়ম বেগমকে। মামলাটি বর্তমানে রাজশাহী মহানগরীর বোয়ালিয়া থানা পুলিশ তদন্ত করছে।
এদিকে, মামলাটি আমলে নিয়ে আদালতে বাদীনির পক্ষে লড়াই করছেন বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড এন্ড সার্ভিসেস ট্রাষ্ট (ব¬াষ্ট) রাজশাহী ইউনিট।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, দুর্গাপুরের শিল্পপতি হিসেবে পরিচিত নুরুন নবীর সাথে তার স্ত্রী মরিয়ম বেগমের ১৯৮৫ সালের ২৪ নভেম্বর বিয়ে হয়। এরপর তাদের সংসারে এক কন্যা সন্তান ও এক পুত্র সন্তানের জন্ম হয়। শিল্পপতি নুরুন নবী তার শালঘরিয়া নিজ গ্রামে নিগার কোল্ড স্টোরেজ নামে একটি আেল্ড স্টোরেজ গড়ে তোলেন। ওই সময় উপজেলার তিওরকুড়ি গ্রামে টিস্যু কালচারের চাষাবাদ করতে গিয়ে একই গ্রামের মফিজ উদ্দিনের স্ত্রী শাহিনা বেগমের সাথে পরকিয়ার সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। তারপর কৌশলে শিল্পপতি নুরুন নবী তার পরকিয়ার পথ পরিষ্কার করতে নিজ খরচে শাহিনার স্বামী মফিজ উদ্দিনকে বিদেশে পাঠিয়ে দেন। এরপর থেকে মফিজ উদ্দিন মালয়েশিয়াতে রয়েছেন। পরিকয়িার বিষয়টি এলাকায় জানাজানি হয়ে পড়লে এলাকাবাসীর চাপের মুখে দেলুয়াবাড়ি গ্রাম থেকে শাহিনাকে নিয়ে তিনি রাজশাহী শহরের সাগর পাড়ায় একটি  ভাড়া বাড়িতে উঠেন। বিষয়টি শিল্পপতি নুরুন নবীর স্ত্রী মরিয়ম বেগম জেনে ফেললে নুরুন নবী তার কথিত প্রেমিকা শাহিনাকে নিয়ে উপশহরের নিজ বাড়িতে উঠেন। এ সময় মরিয়ম বেগম ও তার রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের এমবিএ’র শেষ বর্ষের ছাত্রী নাজমুন নাহার মেরিন ও পুত্র মোবাস্বির হোসেন মবিন নুরুন নবীকে বাড়িতে ঢুকতে বাঁধা প্রদান করলে নুরুন নবী স্ত্রী ও সন্তানদের নির্য়াতন চালায় ও অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকে। এ সময় নুরুন নবী স্ত্রী সন্তানদের বলেন, আমার বাড়িতে আমি মদ খাবো, জুয়া খেলবো এবং মেয়ে নিয়ে ফুর্তি করবো। এটা আমার একান্ত ব্যাক্তিগত বিষয়। এতকিছুর পরও নুরুন নবী তার কথিত প্রেমিকাকে নিয়ে ওই বাড়িতেই অবস্থান করেন।
এজাহারে আরো উলে¬খ করা হয় যে, পিতার পরকিয়ার বিষয়কে কেন্দ্র করে নির্যাতিত হয়ে ঘটনার দিন ২০১৩ সালের ১২ জুলাই নুরুন নবীর মেয়ে নাজমুন নাহার মেরিন পিতার সামনেই আতœহত্যার জন্য ঘরে প্রবেশ করে এবং ছোট ভাই মবিনকেও একই পথ বেছে নিতে বলেন। তারপর ঘটনার দিন দুপুর ২ টার দিকে পিতার অমানুষিক নির্যাতনের শিকার মেরিন গলায় দড়ি দিয়ে আতœহত্যা করেন। পিতার প্ররোচনার শিকার হয়ে মেরিন আতœহত্যা করলে নুরুন নবী সুকৌশলে অভিভাবক দেখিয়ে স্ত্রী মরিয়ম বেগমের স্বাক্ষর নিয়ে ব্যাক্তিগত লোক দারা নগরীর বোয়ালিয়া থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা দায়ের করেন। যার নম্বর ১৭/১৩। এ ঘটনার পরদিন দুর্গাপুর উপজেলা পরিষদ মাঠে মেয়ের জানাযায় আসা লোকজনদের উদ্দেশ্যে মাইকে নুরুন নবী বলেন, আমি কুলাঙ্গার, আমার মেয়ে পর্দাশীল, আমার মেয়ের মুত্যুর জন্য আমিই দায়ী।
মামলার বাদী মরিয়ম বেগম বলেন, তার মেয়ে মেরিনের নামে ইসলামী ব্যাংক বাণেশ্বর শাখায় দেড় কোটি টাকা ঋণ নিয়ে আতœসাত করেছে নুরুন নবী। এ কারণে প্রায় তার মেয়েকে আতœহত্যার কথা বলতো। যাতে করে মেয়েটি মারা গেলে তার নামে নুরুন নবীর উত্তোলনকৃত ঋণ পরিশোধ না করা লাগে।
এ ঘটনার পর মরিয়ম বেগম তার স্বামী নুরুন নবী ও তার কথিত প্রেমিকা শাহিনা বেগমকে আসামী করে রাজশাহীর সিএমএম (ক) অঞ্চলের আদালতে ২০১৩ সালের ৪ ডিসেম্বর মেয়েকে আতœহত্যার প্ররোচনার অভিযোগে একটি মামলা দায়ের করেন। যার নম্বর- ১০০পি/১৩, জিআর ৩৩/১৪।
মরিয়ম বেগম আরো অভিযোগ করে বলেন, তার নামে দুর্গাপুর সদরে মেরিন ফ্লাওয়ার মিলে ৬ শতাংশ জমি রয়েছে। ওই জমি দখল করতে তাকে রোজ নির্যাতন করা হতো। তাছাড়া মেয়েকে আতœহত্যার প্ররোচনা বিচার চেয়ে আদালতে মামলা দায়েরের পর থেকে তার স্বামী নুরুন নবী তাকে মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত করতে বাড়িতে একেক দিন একেকটি মেয়ে নিয়ে আসতেন। তিনি এগুলোর প্রতিবাদ করলেই তাকে শারীরিক ভাবে নির্যাতন চালানো হতো। এক পর্যায়ে তাকে জোর পূর্বক বাড়ি থেকে বের করে দেয়া হয়। এরপর থেকে মরিয়ম বেগম বাবার বাড়িতেই অবস্থান করছেন। নুরুন নবী প্রভাশালী হওয়ার সুবাদে বিভিন্ন সময় মামলা গুলো তুলে নিতে তাকে হুমকীও দেয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
এ ব্যাপারে বোয়ালিয়া থানার এস আই ও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা গোলাম রাব্বানী বলেন, মামলাটি নিবিড় ভাবে তদন্ত করা হচ্ছে।
বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড এন্ড সার্ভিসেস ট্রাষ্ট (ব¬াষ্ট) রাজশাহী ইউনিটের চেয়ারম্যান নাজমুল শাহাদতের সাথে কথা বলা হলে তিনি বলেন, পুলিশ মামলাটি তদন্ত করতে সময় ক্ষেপন করায় মামলাটির কোন অগ্রগতি হচ্ছে না। তবে মামলাটি আমাদের কয়েকজন আইনজীবি দারা পরিচালিত হচ্ছে।