1দৈনিক বার্তা : রাজধানীতে কালো গ্লাসের গাড়ির বিরুদ্ধে রোববার থেকে শুরু হচ্ছে অভিযান।কালো গ্লাসওয়ালা গাড়ি দেখামাত্র পুলিশ গাড়ি আটক করবে। এ  জন্য ট্রাফিক সার্জেন্টদের প্রয়োজনীয় নির্দেশনাও দেয়া হয়েছে।ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের মিডিয়া সেন্টারের উপ-পুলিশ কমিশনার মাসুদুর রহমান শনিবার সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।তিনি বলেন, রাস্তায় কালোগ্লাসের মাইক্রোবাস দেখামাত্রই ট্রাফিক পুলিশ সেগুলো আটক করবে এবং নির্দেশনা না মানার জন্য প্রয়োজনীয় যে ব্যবস্থা নেওয়া দরকার নেবে।

তিনি বলেন,ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ব্যবহৃত কালোগ্লাসের গাড়িগুলোও এরইমধ্যে সাদা করা হয়েছে।তিনি আরও বলেন, যারা এখনো কালোগ্লাসের গাড়ি সাদা করেন নি তারা শনিবার (১০ মে) এর মধ্যেই সব সাদা করে নেবেন। অন্যথায় রাস্তায় নামলে জরিমানা গুণতে হবে।

সম্প্রতি  দেশে অপহরণের ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় কালোগ্লাসের গাড়িগুলোকে সাদা করার পরামর্শ দেয়। একই সঙ্গে যারা এই নির্দেশ মানবেনা তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা  নেওয়া হবে বলেও জানিয়ে দেয়া হয়। আর এজন্য সময়  বেঁধে  দেয়া হয় ১০ মে।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের এই নির্দেশের পর  খোদ পুলিশের মহাপরিদর্শক হাসান মাহমুদ খন্দকার বিভিন্ন সভায় কালো গ্লাসের গাড়ি সাদা গ্লাসে পরিণত করার তাগিদ দেন।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক দক্ষিণ) খান  মো: রিজোয়ান বলেন, সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী ১১  মে  থেকে কালো গ্লাসের গাড়ির বিরুদ্ধে আমরা অভিযান পরিচালনা করবো। এ জন্য মাঠ পর্যায়ের ট্রাফিক সার্জেন্টদের নির্দেশনা  দেয়া হয়েছে।

এদিকে, মাইক্রোবাসসহ সব ধরনের যানবাহন  থেকে কালো কাচ অপসারণের বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনার পর হঠাৎ বেড়ে গেছে স্বচ্ছ কাচের দাম। গ্রাহকদের কাছে কয়েক গুণ বেশি দাম চাইছেন বিক্রেতারা। তারা বলছেন, বাজারে স্বচ্ছ কাচের সংকট দেখা  দেয়ায় দাম বেড়েছে।

অপহরণের ঘটনায় কালো কাচের মাইক্রোবাস ব্যবহারের কারণে ওই নির্দেশনা দেয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। নির্দেশনা অনুযায়ী আগামীকালের মধ্যে সব ধরনের যানবাহন থেকে কালো কাচ অপসারণ করতে হবে।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) হিসাব অনুযায়ী, রাজধানীতে নিবন্ধিত গাড়ির সংখ্যা প্রায় ৮ লাখ। এর ৬০ শতাংশ প্রাইভেট কার ও মাইক্রোবাস। এছাড়া প্রতিদিন ১২০টি করে মাইক্রোবাস ও প্রাইভেট কার নতুন করে রাস্তায় নামছে। এসব গাড়ির বড় অংশই কালো কাচ ব্যবহার করে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনার পর এসব কালো কাচ সরানোর হিড়িক পড়েছে।

রাজধানীর রাজারবাগ পুলিশ লাইনসংলগ্ন আউটার সার্কুলার রোডের পাশে একটি মাইক্রোবাস থেকে কাচ অপসারণ করছিলেন দোকান কর্মচারী ইমরান হোসেন। তিনি বলেন, সকাল  থেকে ২৫টি গাড়ির কালো কাচ অপসারণের পর স্বচ্ছ কাচ লাগানো হয়েছে। ইমরানের পাশাপাশি কাচ অপসারণে ব্যস্ত দেখা যায় ওই এলাকার আরো ১০-১২ জন কর্মচারীকে।কালো কাচ অপসাররণ করে স্বচ্ছ কাচ লাগানোর জন্য রাজারবাগ এসেছিলেন মাইক্রোবাসের মালিক নাজমুল হাসান। তিনি বলেন, একটি স্বচ্ছ কাচের দাম ছিল আগে ১ হাজার ২০০ থেকে দেড় হাজার টাকা। তিনি চারটি কাচ ২৫ হাজার টাকায় পরিবর্তন করেন। যদিও চারটি কাচের দাম হওয়ার কথা সর্বোচ্চ ৬ হাজার টাকা।

এদিকে সরকারের এ ঘোষণায় বিপাকে পড়েছেন অনেক ব্যবসায়ী। বিপুল পরিমাণ কালো কাচের মজুদ নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন তারা। গাড়ির কাচ আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান প্রাইম মোটরসের তানভীন আহমেদ জানান,  দেশের অধিকাংশ কার ও মাইক্রোবাসে কালো কাচ ব্যবহার হয়ে আসছে। এজন্য তাদের আমদানি করা কাচের ৯৫ শতাংশই কালো। স্বচ্ছ কাচ রয়েছে মাত্র ৫ শতাংশ। হঠাৎ সরকারের ঘোষণায় কালো কাচ নিয়ে বিপাকে পড়েছেন তারা। স্বচ্ছ কাচের চাহিদা থাকায় যে দাম চাওয়া হচ্ছে, তাতেই মালিকরা কিনছেন।

গত মঙ্গলবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গাড়িতে আলাদাভাবে লাগানো রঙিন, কালো, মার্কারি, অস্বচ্ছ ফিল্ম, পলিথিন ও প্লাস্টিকজাতীয় কৃত্রিম আবরণ অপসারণ করতে হবে। এ নির্দেশ অমান্য করা হলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে যেসব গাড়ির সামনের উইন্ডশিল্ড, দুই পাশের জানালা ও পেছনের কাচ ফ্যাক্টরিতে নির্মিত অবস্থায় সংযোজিত (বিল্ট-ইন), সেগুলোর ক্ষেত্রে এ আদেশ প্রযোজ্য হবে না।

বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়, দেশে অপহরণসহ বিভিন্ন অপরাধে সন্ত্রাসীরা গাড়িতে কালো, রঙিন, মার্কারি ও অস্বচ্ছ কাচযুক্ত গাড়ি ব্যবহার করছে। এতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও গোয়েন্দাদের পক্ষে গাড়ির  ভেতরের লোকজন অথবা পরিবহনকৃত বস্তু শনাক্ত করা ও গাড়ি ব্যবহারকারী অপরাধীদের গতিবিধির ওপর নজর রাখতে সমস্যা হচ্ছে।স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওই নির্দেশনার পরই যানবাহন  থেকে কালো কাচ অপসারণ শুরু হয়। নারায়ণগঞ্জের একটি  রেন্ট-এ-কার প্রতিষ্ঠানের চালক শাহেদ আহমেদ বলেন, নারায়ণগঞ্জে তিন শতাধিক মাইক্রোবাস ভাড়ায় চলে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনার পর কালো কাচ অপসারণ করতে গিয়ে বিপাকে পড়েছেন মালিকরা।

বাংলাদেশ কেমিস্ট অ্যান্ড ড্রাগিস্ট সমিতির ভাইস  প্রেসিডেন্ট আবদুল হাই জানান, দুইদিন আগে একটি স্বচ্ছ কাচের দাম ছিল ১৫ হাজার টাকা। গতকাল একই কাচের দাম চাওয়া হয় ৬০ হাজার টাকা। কাচ অপসারণে অন্তত তিন মাস সময় দেয়া উচিত।

সরকারি যানবাহন অধিদপ্তরকে দেয়া জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, উপমন্ত্রী, সচিবসহ বিভিন্ন স্তরের সরকারি কর্মকর্তাদের গাড়ির কালো ও অস্বচ্ছ গ্লাস অপসারণের সময়সীমা ছিল শনিবার। এর মধ্যে অপসারণ করতে হবে গাড়ির কালো, রঙিন, মার্কারি গ্লাস এবং অস্বচ্ছ ফিল্ম, পলিথিন ও প্লাস্টিক।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারির দুই দিন পর সরকারি গাড়ি থেকে এসব অপসারণে নির্দেশনা  দেয় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। বাংলাদেশে অপহরণসহ বিভিন্ন ধরনের অপরাধের ঘটনার  প্রেক্ষাপটে গাড়ি  থেকে অস্বচ্ছ গ্লাস অপসারণে গত ৩০ এপ্রিল আদেশ জারি করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

বৃহস্পতিবার বিকালে নিজ দপ্তরে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের  জ্যেষ্ঠ সচিব কামাল আবদুল নাসের  চৌধুরী বলেন, ১০ মের মধ্যে সরকারি যানবাহন অধিদপ্তরের আওতাধীন সব গাড়ির অস্বচ্ছ গ্লাস অপসারণ করতে বলা হয়েছে। অস্বচ্ছ গ্লাস অপসারণে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জারি করা নির্দেশনা অনুসরণ করতেও বলা হয়েছে বলে জানান সচিব।

মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, উপমন্ত্রী, সচিব, জেলা প্রশাসক (ডিসি), ইউএনওসহ বিভিন্ন স্তরের সরকারি কর্মকর্তাদের গাড়ি সরকারি যানবাহন অধিদপ্তর  থেকে সরবারহ করা হয়।

সরকারি যানবাহন অধিদপ্তরের কমিশনার  মো. রিয়াজ আহমেদ জানান, সরকারি যানবাহন অধিদপ্তরের অধীনে সারা  দেশে দুই হাজার গাড়ি রয়েছে। এর মধ্যে মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, উপমন্ত্রী, সচিব, জেলা প্রশাসক (ডিসি), ইউএনওসহ বিভিন্ন স্তরের সরকারি কর্মকর্তাদের গাড়ির কালো গ্লাস অপসারণের জন্য বলা হয়েছে।স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্শেশনা অনুযায়ী,  যেসব গাড়ির উইন্ডশিল্ড, দুই পাশের জানালা ও  পেছনের কাচ নির্মিত (বিল্ট-ইন) অবস্থায় সংযোজিত ওই সব বস্তু অপসারণ করতে হবে না।