1দৈনিক বার্তা–  মুক্তিযুদ্ধকালে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ার জাতীয় পার্টির সাবেক সাংসদ মো.আবদুল জব্বারের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে।

রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে  সোমবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এই পরোয়ানা জারি করেন।রোববার রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি জাহিদ ইমাম ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রারের কার্যালয়ে জব্বারের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করেন।জব্বারের বিরুদ্ধে গণহত্যা, হত্যা, নির্যাতনসহ পাঁচ ধরনের মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে। গত মাসে তদন্ত সংস্থা জব্বারের বিরুদ্ধে তদন্ত শেষ করে।

বিচারপতি ইনায়েতুর রহিমের নেতৃত্বে তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ  সোমবার  ওই অভিযোগ উপস্থাপন করেন রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি জাহিদ ইমাম।রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনে অভিযোগ আমলে নিয়ে জব্বারের বিরুদ্ধে  গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন ট্রাইব্যুনাল।

আদেশ  দেয়ার সময় যাদের বিরুদ্ধে আগে পরোয়ানা জারি করা হয়েছে তাদের গ্রেপ্তারে কোনো দৃশ্যমান অগ্রগতি না হওয়ায় অসন্তোষ প্রকাশ করে ট্রাইব্যুনাল।রোববার ট্রাইব্যুনালের নিবন্ধক একেএম নাসিরউদ্দিন মাহমুদের কাছে আব্দুল জব্বারের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করেন প্রসিকিউটর  মোখলেছুর রহমান বাদলসহ অন্যরা।

একাত্তরে গণহত্যাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের পাঁচটি  অভিযোগ আনা হয়েছে সাবেক সংসদ সদস্য জব্বারের বিরুদ্ধে। এসব অভিযোগের মধ্যে হত্যা ছাড়াও ধর্মান্তরকরণ এবং বাড়িঘরে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের মতো অপরাধ রয়েছে।গত ২৯ এপ্রিল তার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের তদন্ত প্রতিবেদন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন কার্যালয়ে জমা দেন তদন্ত সংস্থার সদস্য ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা  হেলাল উদ্দিন।

প্রতিবেদনে গণহত্যা ছাড়াও জব্বারের বিরুদ্ধে ৩৬ জনকে হত্যা, ২০০ জনকে ধর্মান্তর, ৫৫৭ বাড়িঘরে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করার অভিযোগ আনা হয়েছে।

এতে বলা হয়,ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল জব্বারের শ্বশুর ছিলেন স্থানীয় মুসলীম লীগ নেতা। জব্বার নিজে ছিলেন পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া থানা শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান।তদন্ত সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, আনুমানিক ৮০ বছর বয়সী এই প্রকৌশলী বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের  ফ্লোরিডা প্রবাসী।

তদন্ত কর্মকর্তা হেলাল উদ্দিন জানান, মূল ৯৯ পৃষ্ঠাসহ  মোট এক হাজার ৯০০ পৃষ্ঠার তদন্ত প্রতিবেদন চূড়ান্ত করা হয়েছে। জব্বারের বিরুদ্ধে ৪৬ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে, যার মধ্যে ৪০ জন বিভিন্ন ঘটনার এবং ছয় জন জব্দ তালিকার সাক্ষী রয়েছেন।

প্রথম অভিযোগ: ইঞ্জিনিয়ার জব্বার ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ার ফুঝুড়িতে দুইজন মুক্তিযোদ্ধাকে হত্যা করেন। এছাড়া নাথপাড়া ও কুলুপাড়ার শতাধিক বাড়িতে লুট করেন এবং অগ্নিসংযোগ করে।দ্বিতীয় অভিযোগ: মুক্তিযুদ্ধের সময় জব্বার ফুলঝুড়িতে একজনকে হত্যা করেন এবং ৩৬০টি বাড়িঘরে লুটপাট চালান এবং অগ্নিসংযোগ করে।তৃতীয় অভিযোগ: নলীতে ১১ জনকে হত্যা ছাড়াও ৬০টি বাড়ির মালামাল লুণ্ঠন করেন এবং অগ্নিসংযোগ করেন জব্বার।চতুর্থ অভিযোগ: ফুলঝুড়িতে প্রায় দু’শ নিরস্ত্র হিন্দু সম্প্রদায়ের লোককে  জোরপূর্বক ধর্মান্তরিত করেন জব্বার।

পঞ্চম অভিযোগ: আঙ্গুলকাটা এবং মঠবাড়ীয়া  থেকে ৩৭ জনকে আটক, মালামাল লুণ্ঠন, অপহরণ, নির্যাতন, ১৫ জনকে গুরুতর জখম এবং ২২ জনকে হত্যার করেন জব্বার।গত বছরের ১৯ মে আব্দুল জব্বারের বিরুদ্ধে অভিযোগের তদন্ত শুরু হয়।