1দৈনিক বার্তা — জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ বলেছেন, সরকারের প্ররোচনায় সারাদেশে গডফাদার সৃষ্টি হচ্ছে। ওরা যা খুশি করতে পারে। কিন্তু তাদের কিছুই হয় না। এ কারণে আরো গডফাদার  তৈরি হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় পার্টির  চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ।

সোমবার রাজধানীর বনানীতে জাতীয় পার্টির কার্যালয়ে এক যোগদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।জাসদ ছাত্রলীগ (রব) সভাপতি-সম্পাদকসহ অর্ধ শতাধিক কর্মী এসময় জাতীয় ছাত্র সমাজে যোগ দান করেন।

এরশাদ বলেন, আওয়ামী লীগ হিটলার মুসোলিনির মতো  দেশ চালাচ্ছে। তাদের জনপ্রিয়তা কমেছে। মানুষ শান্তিতে ঘুমাতে পারে না। এটা কেমন  দেশ! জিয়া হত্যা নিয়ে  ব্লেম  গেম চলছে উল্লেখ করে এরশাদ বলেন, আমি জানি জিয়া হত্যার সময় তার রুমের পাশে  কে ছিলেন। তাদের নিয়ে খালেদা জিয়া ২০ বছর রাজনীতি করছেন। উনি ক্ষমতায় ছিলেন বিচার  কেন করলেন না? বিচারপতি আবদুস সাত্তার ক্ষমতায় ছিলেন। বিদ্রোহ দমনের জন্য আমাকে ধন্যবাদ জানিয়েছিলেন।

এরশাদ বলেন, আমি এর আগে একদিন বক্তব্য রেখেছিলাম, জিয়া যেদিন খুন হন তার পাশের রুমে বিএনপির এক নেতা ছিলেন। আমি কারও নাম উল্লেখ করিনি। কিন্তু বদরুদ্দোজা চৌধুরী কেন প্রতিক্রিয়া  দেখালেন আমি বুঝতে পারি না।

এ কথা উল্লেখ করে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উদ্দেশে এরশাদ আরও বলেন, জিয়ার পাশের রুমে কারা ছিল,আপনিই  খোঁজ নিয়ে জানতে পারবেন। যারা জিয়ার খুনি তাদের সঙ্গে নিয়েই আপনি রাজনীতি করছেন। এভাবে অন্যকে আর  দোষারোপ করবেন না।খালেদা জিয়ার উদ্দেশে এরশাদ বলেন, খালেদা জিয়ার এক বক্তব্য প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তিনি আমাকে জিয়ার খুনি বলেছেন। এটা এতদিন পর  কীভাবে তার মনে পড়ল। তিনি তো দু-দুবার ক্ষমতায়  থেকেছেন। আমার বিচার কেন করেননি।

রাজনৈতিকভাবে বিএনপির  কোনো অস্তিত্ব  নেই বলে মন্তব্য করে জাপার চেয়ারম্যান বলেন, বিএনপি বর্তমানে ব্লেমের (দোষারোপ) রাজনীতি করছে।বিএনপির  কোনো রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ  নেই। তারা কিছুই করতে পারবে না বলেও দাবি করেন এরশাদ। দেশে  কোনো গণতন্ত্র  নেই বলে মন্তব্য করে এরশাদ বলেন, গণতন্ত্রের কথা শুধু সরকারের মুখেই শুনি। দেশে গণতন্ত্র  তো নেই-ই শুধু নিখোঁজ মানুষের লাশ  ভেসে উঠতে দেখা যাচ্ছে।

সরকার পরিবর্তনে বিএনপি’র  কোনো শক্তি  নেই বলে মন্তব্য করেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ।এরশাদ বলেন,‘বিএনপি আর রাজনীতিতে নেই। তারা সংসদে নেই। রাজপথেও  নেই। তাদের রাজনীতি বলতে কিছুই  নেই। সরকার পরিবর্তনে কোনো শক্তিই নেই বিএনপির।’

সরকারের সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এই বিশেষ দূত বলেন, সরকার মুসোলিনী ও হিটলারের মতো দেশ চালাচ্ছে। দেশে গণতন্ত্র নেই। সাংবিধানিক ন্যূনতম অধিকার  নেই। গণতন্ত্র মানে কী? সরকার তা জানার অধিকার  থেকেও জনগণকে বঞ্চিত করেছে।

নারায়ণগঞ্জের ঘটনার সমালোচনা করে এরশাদ বলেন, নূর হোসেন কার  লোক সবাই জানে। নূর  হোসেনের অস্ত্র ও মাদক উদ্ধার করলো আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। তাকে কেন  গ্রেফতার করতে পারলো না, এ নিয়েও তিনি প্রশ্ন তুলেন। সরকার সন্ত্রাস দমনে ব্যর্থ বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

এরশাদ বলেন, যারা আমাকে স্বৈরশাসক বলে, তাদের কাছে জানতে চাই, আমি  স্বৈরশাসকের কি কাজ করেছি? আমি সারাদেশে উন্নয়নের বিপ্লব ঘটিয়েছি।সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, জিয়াকে কারা খুন করেছে তা সবাই জানে, আমি তাদের নাম বলতে চাই না। আমাকে হয়রানি করার জন্য মঞ্জুর হত্যার দায়ে ১৪ বছর ৯ মাস পরে এ মামলা  দেওয়া হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, জাতীয় পার্টি পিছিয়ে নেই,এগিয়ে যাচ্ছে। যারা আমার সমালোচনা করে তারাই ক্রমে পিছিয়ে পড়ছে।তিনি বলেন, ছাত্রলীগ  টেন্ডার বাক্স ছিনতাই করে। তারা এ সাহস পায়  কোথা  থেকে। কারণ তারা জানে, টেন্ডার বাক্স ছিনতাই করলে তাদের কিছু হবে না।

এরশাদ বলেন, রংপুর পুলিশ সুপারের (এসপি) অফিসে একটি  টেন্ডার হয়েছিল। এসপি অফিস  থেকে ছাত্রলীগ  টেন্ডার বক্স ছিনতাইয়ের প্রস্তুতি নেয়।তারা এত সাহস কোথায় পায়? কারণ তারা জানে, তাদের কিছুই হবে না।

তিনি বলেন,নূর  হোসেনের বাসস্ট্যান্ড থেকে বিপুল পরিমাণ ফেনসিডিল উদ্ধার হয়েছে।এটা কি পুলিশের অজান্তে এসেছে! পুলিশ সব জানতো, কিন্তু তাকে ছোঁয়ার ক্ষমতা নেই পুলিশের। পত্রিকায় এসেছে, একজন পুলিশ সুপারও নাকি (এসপি) ইয়াবা সম্রাট নামে পরিচিত।

মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, রাজনৈতিকভাবে জিপিএ-৫  বেড়েছে  দেখানো হচ্ছে। শিক্ষার পরিধি বাড়লেও সত্যিকার অর্থে শিক্ষার বিস্তার হয়নি। জিপিএ-৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীরাও শুদ্ধভাবে বাংলা-ইংরেজি লিখতে পারে না। তারা ইয়াবাতে আসক্ত হয়ে পড়ছে। তারা কাউকে শ্রদ্ধা করে না। বাবা-মাকে পর্যন্ত খুন করছে। সরকারের দায়িত্ব এগুলো  দেখার। কিন্তু সরকার দেখছে না।এ সময় অপরাধীদের ফাঁসি দিয়ে অপরাধ বন্ধ করে জনগণকে রক্ষা করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

জাতীয় ছাত্র সমাজ সভাপতি সৈয়দ ইফতেখার আহসান হাসানের সভাপতিত্বে  যোগদান সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন জাতীয় পার্টির মহাসচিব জিয়া উদ্দিন আহমেদ বাবলু, যুগ্ম-মহাসচিব রেজাউল ইসলাম ভুঁইয়া, জাতীয় পার্টির ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুল হামিদ ভাসানী প্রমুখ।