1দৈনিক বার্তা– আগাম নির্বাচন নিয়ে প্রতিনিয়ত চাপে আছে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার। গুম-খুন, বিচার বহির্ভূত হত্যাকান্ডের  ঘটনায় বিভিন্ন বৈদেশিক সংস্থা প্রশ্ন তুলছে সরকারের যোগ্যতা নিয়ে। উদ্ভূত পরিস্থিতি কাজে লাগাতে, তুমুল আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল। এমন একটি পরিস্থিতিতে নারায়ণগঞ্জের সাত খুনের মতো দেশ কাঁপান ঘটনার নেপথ্যে খল নায়ক হিসেবে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা-ত্রাণমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়ার নাম স্পষ্ট হয়ে উঠেছে দিন দিন। একারণেই, আওয়ামী লীগের ভেতরে-বাইরে আশঙ্কা জেগেছে, মায়ার টানে ডুবতে চলেছে আওয়ামী লীগের নৌকা। প্রশ্ন উঠছে, আওয়ামী লীগ কেন ও কতদিন বিনা প্রশ্নে এই সমালোচনা বহন করবে?
সাত খুনের ঘটনায় মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়ার নাম এতটাই স্পষ্টভাবে প্রকাশ পেয়েছে যে, কোনভাবেই আড়াল করা যাবে না তাকে। এরই মধ্যে মায়ার জামাতা লেফটেনেন্ট কর্নেল তারেক সাঈদ মাহমুদকে চাকরীচ্যুত করা হয়েছে। সাধারণ মানুষ বলাবলি শুরু করেছে যে, কান টানলে যেমন মাথা আসে তেমনি কান কাটলে কি আর মাথা বাঁচান যায়? আবার, সাতখুনের ঘটনাটিকে কোণঠাসা রাজনৈতিক দলগুলোও বারবার তুলে আনবে জনগণের সামনে।
সরকারের সাথে ঘনিষ্ট যোগাযোগ আছে এমন একটি সূত্রের মতে, সরকারের ইমেজকে প্রশ্নবিদ্ধ করায় স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়ার উপর নাখোশ। এমতাবস্থায় সাত খুনের সাথে যুক্ত থাকার অভিযোগ মাথায় নিয়ে যেকোন সময় সরে দাঁড়াতে হতে পারে মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়াকে।
নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিলর ও প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলামসহ সাত খুনের সাথে যুক্ত থাকার অভিযোগে এরই মধ্যে চাকরিচ্যুত হয়েছেন র‌্যাবের তিন কর্মকর্তা। চাকরিচ্যুত তিন র‌্যাব কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তারে ব্যবস্থা নিতে স্বরাষ্ট্র সচিবকে নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। নিহত পরিবারের সদস্যদের অভিযোগ, মায়ার জামাতা নিজে এই খুনের ঘটনায় নেতৃত্ব দিয়েছেন। আর এই কাজের জন্য তিনি নাসিকের অপর কাউন্সিলর নূর হোসেনের কাছ থেকে ৬ কোটি টাকা নিয়েছেন বলে অভিযোগ নজরুল ইসলামের শ্বশুরের। তদন্তকারীরা খুনের সাথে নূর হোসেন ও মায়ার জামাতার সম্পৃক্ততা খুঁজে পেয়েছে। র‌্যাবের চলমান তদন্তেও তাদের অফিসারদের হত্যাকান্ডে সংশ্লিষ্টতার পক্ষে প্রমাণ মিলেছে।
এদিকে সাত খুনের প্রধান আসামী নূর হোসেনের সাথে একাত্ম ঘনিষ্ট সম্পর্ক রয়েছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রীর। মন্ত্রী ছাড়াও নূর হোসেনের সাথে মন্ত্রীর ছেলের সাথে ভালো সম্পর্ক রয়েছে। কারণ দু’জনেই ব্যবসায়িক অংশীদার।
নিহতদের পরিবারের দাবি, মন্ত্রী স্বয়ং নূর হোসেনের পলায়ন ও আত্মগোপনে সহযোগিতা করেছেন। খুনের ঘটনার পর অপরাধীদের নিরাপদে বিদেশে পাঠিয়ে দেয়ার পরেই রেড এলার্ট জারি করা হয়েছে ও এই কাজে স্বয়ং মন্ত্রী জড়িত বলেই অভিযোগ উঠেছে নিহতের পরিবার থেকে।
নূর হোসেনের সাথে মন্ত্রীর ঘনিষ্ট সম্পর্ক ও নূর হোসেনের কাছ থেকে খুনের জন্য মন্ত্রীর জামাতার টাকা নেওয়ার অভিযোগ এই খুনের সাথে মন্ত্রীর সরাসরি সম্পৃক্ততার বিষয়টিকে সামনে তুলে ধরেছে। যা বর্তমান সরকারের ইমেজকে চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্থ করেছে। একইভাবে সরকারের গ্রহণযোগ্যতা নিয়েও প্রশ্ন তোলার মোক্ষম অস্ত্র পেয়েছে বৈদেশিক শক্তিগুলো।
এমন পরিস্থিতিতে নারায়ণগঞ্জের সাত খুনের সাথে নিজের বা পরিবারের অন্য কারো যুক্ত না থাকার বিষয়টি নিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন মন্ত্রী। বিবৃতিতে বিচার ব্যবস্থাকে প্রভাবিত না করার বিষয়টি উল্লেখ করে মন্ত্রী তার পরিবারের সদস্যরা কেউ এই হত্যার সাথে যুক্ত নয় বলে দাবি করেন।
মন্ত্রী বিবৃতিতে জানান, গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে তার পরিবারকে হত্যাকা-ের সঙ্গে যুক্ত করায় তিনি গভীরভাবে বেদনাহত। সেগুলো তার এবং তার পরিবারের মানহানি ঘটিয়েছে। একইভাবে তার পরিবারের সদস্য ও জামাতাকে নিদোর্ষ দাবি করে মন্ত্রী বিচার ব্যবস্থাকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করেছেন বলেই অভিযোগ বিভিন্ন মহলের।
তবে মন্ত্রী মায়ার বিরুদ্ধে অভিযোগই এবারই প্রথম নয়। এর আগেও তার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে। ১৯৯৬-২০০১ আওয়ামী লীগের সরকারের আমলে প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন তিনি। সে সময় তার ও তার বেপরোয়া পুত্রদের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ থাকার পরও ক্ষমতার দাপটে তিনি পার পেয়ে গিয়েছিলেন বলে অভিযোগ তার নিজ দলে। একইভাবে বর্তমানেও তিনি নিজের জামাতাকে নারায়ণগঞ্জের সাত খুনের মামলা থেকে প্রভাব খাটিয়ে বাঁচাতে চাচ্ছেন বলেই দাবি বিভিন্ন মহলের। এছাড়া খুনের সাথে তার নিজের সম্পৃক্ততার বিষয়টিকেও ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছেন এমনও গুঞ্জন আছে খোদ মন্ত্রীসভায়।
দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির অংশ না নেওয়া, আওয়ামী লীগের সরকার গঠন ও আগাম নির্বাচন নিয়ে এমনিতেই নানামুখী চাপের সম্মুখীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এমন পরিস্থিতি মন্ত্রীর পরিবারের সদস্যদের অপরাধপ্রবণতা ও অপরাধীদের বাঁচাতে মন্ত্রীর তৎপরতা প্রধানমন্ত্রীকে হতাশ ও ক্ষুদ্ধ করেছে বলেই আওয়ামী লীগের বিভিন্ন ‍সূত্রের দাবি।
মায়ার পরিবারের এমন কাজের দায়ভার কোনভাবেই বর্তমান সরকার নিতে রাজি নয়। ফলে মায়ার পরিবারের খুনের সাথে যুক্ত থাকার বিষয়টিতে যাতে সরকারের ভাবমূর্তি কোনভাবেই ক্ষতিগ্রস্থ না হয় সেই চেষ্টাই করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আর তাই, সরকারের ভাবমূর্তি ও নিজের ব্যক্তিগত ইমেজ বজায় রাখতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাত খুনের ঘটনায় সম্পৃক্ততার কারণে যেকোন সময় মায়াকে মন্ত্রীসভা থেকে সরিয়ে দিতে পারেন বলেই সূত্রগুলো জানিয়েছে।