2দৈনিক বার্তা  :রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের ইন্টার্ন  চিকিৎসকদের সনদপত্র না দেয়ার ঘোষণা দিলেও শেষ পর্যন্ত রাতের আঁধারে তা বিলি করা হলো।  সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে গোপনে রামেক হাসপাতালের পরিচালকের কার্যালয়ে ইন্টার্ন চিকিৎসকদের  ডেকে নিয়ে সনদপত্র বিতরণ করা হয়। ২০ জন ইন্টার্ন তাদের সনদপত্র গ্রহণ করেন।

এদিকে, উচ্চ আদালতের নির্দেশ উপেক্ষা করে এ সনদপত্র দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। গত ৮  মে উচ্চ আদালত থেকে রামেক হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসকদের সনদ না দিতে  কেন নির্দেশ নয়, তা জানতে  চেয়ে রুল জারি করেন।

এর আগে গত শনিবার ৪৯তম ব্যাচের ১১৫ জন শিক্ষার্থীর ইন্টার্ন কোর্স সম্পন্ন হয়। এরপর ওই দিনই কয়েকজন ইন্টার্ন চিকিৎসক তাদের সনদ নিতে গেলে পরিচালক তাদের বিরুদ্ধে গঠিত হওয়া তদন্ত কমিটির রিপোর্ট হাতে না পাওয়া পর্যন্ত ১৪  মে’র আগে সনদপত্র বিতরণ করা যাবে না বলে ঘোষণা দেন। কিন্তু ওই ঘোষণা দেওয়ার মাত্র একদিনের মাথায় রাতের আঁধারে তিনি সনদপত্র বিতরণ করেন।

রামেক হাসপাতালের একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে,  সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে রামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার  জেনারেল একেএম নাসির উদ্দিন রামেক ৪৯তম ব্যাচের এমবিবিএস পাস করা শিক্ষার্থীদের মধ্যে এক বছরের ইন্টার্ন কোর্স সম্পন্নকারীদের মধ্যে ২০ জনকে তিনি ডেকে নেন।এরপর রাত আটটার দিকে তাদের মঝে  গোপনে কোর্স সম্পন্নের সনদপত্র বিলি করেন। ওই সনদপত্র দিয়ে কোর্স সম্পন্নকারী ইন্টার্নরা এফসিপিএস পরীক্ষার ফরম পূরণ করবেন বলেও সূত্রগুলো নিশ্চিত করেছে।

বিষয়টি জানতে হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল একেএম নাসির উদ্দিনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি  ফোন রিসিভ করেননি।

তবে হাসপাতালের একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে, ১১৫ জনের মধ্যে এফসিপিএস পরীক্ষায় অংশ নিতে ফরম পূরণের জন্য ২০ জনকে সনদ  দেয়ার জন্য রাজশাহী মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ আবু রায়হান হাসপাতালের পরিচালকের কাছে সুপারিশ করেন। ওই সুপারিশের ভিত্তিতেই ২০ জনের মাঝে সনদপত্র বিতরণ করা হয়।

আরেকটি সূত্র নিশ্চিত করেছে, সনদ পাওয়া এই ২০ জনের মধ্যে গত ২০ এপ্রিল রাতে সাংবাদিকদের ওপর হামলার নেতৃত্বদানকারী ইন্টার্ন চিকিৎসকদের  নেতা শামীম হোসেনও রয়েছেন। তার বাইরে আরো বেশ কয়েকজন বিতর্কিত ইন্টার্ন চিকিৎসক রয়েছেন। যারা সাংবাদিক লাঞ্ছনায় জড়িত ছিলেন।

বিষয়টি নিশ্চিত করে হাসপাতালের উপ-পরিচালক আ স ম বরকতুল্লা জানান, তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত অন্যদের সনদ দেওয়া হবে না। তবে তদন্ত কমিটি গঠনের আগেই সুপারিশ আসা ২০ জন ইন্টার্ন চিকিৎসকে সনদ দেয়া হয়েছে।

রাজশাহী সাংবাদিক নির্যাতন প্রতিরোধ কমিটির আহ্বায়ক শ. ম সাজু বলেন, রাতের আঁধারে সনদপত্র বিতরণ করে উচ্চ আদালতের নির্দেশ এমনিতেই অমান্য করেছেন পরিচালক। এর ওপর সাংবাদিকদের ওপর হামলাকারী ইন্টার্ন চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে  কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে তিনি  গোপনে তাদের মাঝে সনদপত্র বিতরণ করলেন। যা তিনি কয়েকদিন পরেও করতে পারতেন।

উল্লেখ্য, গত ২  ফেব্র“য়ারি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে খবর সংগ্রহ করতে গিয়ে শিক্ষার্থীদের হামলায় রাজশাহী  থেকে প্রকাশিত একটি পত্রিকার ফটোসাংবাদিক গুলবার আলী জুয়েলের পা  ভেঙে যায়। এরপর থেকে তিনি কয়েক দফায় রামেক হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন।

সর্বশেষ গত ৪ এপ্রিল তিনি ভাঙ্গা পায়ের অপারেশনের জন্য আবারো হাসপাতালে ভর্তি হন। কিন্তু ৬ এপ্রিল ইন্টার্ন চিকিৎসকরা রামেক হাসপাতালে কোনো সাংবাদিকের চিকিৎসা করতে অস্বীকার জানান। এতে হাসপাতাল ছাড়তে বাধ্য হন জুয়েল।

এ ঘটনায় গত ৮  মে উচ্চ আদালত  থেকে ইন্টার্ন চিকিৎসকদের সনদ না দিতে কেন নির্দেশ নয়, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করা হয়। এরপর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বিষয়টি তদন্তের জন্য চার সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে। ওই কমিটিকে আজ ১৩  মে’র মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়।

এদিকে, গত ২০ এপ্রিল রাতে সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনায় ইন্টার্ন চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে পৃথক দুটি মামলা করা হয়েছে। ওই হামলায় সরাসরি অংশ নেয়া সাতজনসহ অজ্ঞাত আরো দেড় শ’ ইন্টার্ন চিকিৎসককে আসামি করা হয়েছে।

এছাড়া ঘটনাটি তদন্তে মন্ত্রণালয়  থেকে একটি কমিটিও গঠন করা হয়। ওই কমিটির তদন্ত প্রতিবেদনও এখনো জমা হয়নি মন্ত্রণালয়ে। এ প্রতিবেদন জমা হওয়ার আগেই ঘটনার সঙ্গে জড়িত ইন্টার্ন চিকিৎসকদের সনদপত্র বিতিরণ করা নিয়ে রাজশাহীর সাংবাদিক মহলের মাঝে ব্যাপক  ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

এদিকে, রাজশাহী  মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে নানা অপপ্রচার রোধে কার্যকরী ভূমিকা গ্রহণ এবং নির্বিঘ্নে সংবাদ সংগ্রহের পরিবেশ সৃষ্টির দাবিতে বুধবার সকাল ১০টায় পরিচালকের সঙ্গে দেখা করবেন সাংবাদিক নির্যাতন প্রতিরোধ কমিটির সদস্যরা। গত ২০ এপ্রিল ইন্টার্ন চিকিৎসকদের হামলার ঘটনার পরে হাসপাতালজুড়ে এ অপপ্রচার চলছে বলে অভিযোগ সাংবাদিকদের।

একই সঙ্গে সাংবাদিকদের ওপর হামলাকারী এবং সাংবাদিকদের চিকিৎসা দিতে অপারগতা প্রকাশকারী ইন্টার্ন চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিতে পরিচালকের কাছে স্মারকলিপিও  দেওয়া হবে।