narayanganj--bnp--1দৈনিক বার্তা– মামলা চালানোর কারণে নিহতদের পরিবারের সদস্যদের হুমকি দেয়া হচ্ছে। এর পরিণতি শুভ হবে না বলে হুশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। মঙ্গলবার দুপুরে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ উপজেলার মিজমিজি এলাকায় অবস্থিত নিহত প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলামের বাসভবন বুকগার্ডেনে স্বজনদের সমবেদনা জানাতে গিয়ে তিনি এ মন্তব্য করেন। এসময় তিনি আবার র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) বিলুপ্তি চেয়েছেন।
খালেদা জিয়া বলেন, সরকার জনগণের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে। দেশে প্রতিদিনই গুম-খুন হচ্ছে। খুন-গুমে নেমেছে র‌্যাব। এই বাহিনী এখন জনগণের বিপক্ষে দাঁড়িয়েছে। এদের আর প্রয়োজন নেই। র‌্যাব যত দিন থাকবে, তত দিন আতঙ্ক থাকবে। শান্তি থাকবে না। তিনি বলেন, গুম-খুন ও হত্যার দায় শেখ হাসিনা এড়াতে পারেন না। অবিলম্বে খুনিদের গ্রেফতার করা না হলে নারায়ণগঞ্জবাসীকে আন্দোলনে নামার আহ্বান জানানো হবে বলেও জানান তিনি।
নারায়ণগঞ্জের ঘটনায় একজন মন্ত্রীর জামাতা জড়িত উল্লেখ করে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকা শেখ হাসিনা এই খুনের দায় এড়াতে পারেন না। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি, খুন, গুমের ঘটনার উল্লেখ করে সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, অবিলম্বে পদত্যাগ করুন। না হলে মানুষ রাস্তায় নেমে আসবে। তারাই আপনাদের পতন ঘটাবে।
ওই ঘটনায় হাইকোর্টের নির্দেশ থাকার পরও র‌্যাবের সাবেক কর্মকর্তাদের কেন গ্রেফতার করা হচ্ছে না- এই প্রশ্ন রেখে খালেদা জিয়া বলেন, তারেক সাঈদসহ ঘটনায় জড়িত র‌্যাব কর্মকর্তাদের অবলম্বে গ্রেফতার করতে হবে। নইলে কঠোর আন্দোলন করা হবে। তাদের গ্রেফতার করলে হত্যার রহস্য উদঘাটিত হবে।
এর আগে বেলা সোয়া ১১টার দিকে খালেদা জিয়া নারায়ণগঞ্জের উদ্দেশে রওনা হন। দুপুর ১২টার পর তিনি সিদ্ধিরগঞ্জ উপজেলার মিজমিজি এলাকায় অবস্থিত নিহত প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলামের বাসভবন বুকগার্ডেনে পৌঁছান। বেগম খালেদা জিয়া নিহতের পরিবারের সদস্যদের সান্ত্বনা ও সমবেদনা জানান। সেখানে নজরুল ইসলামের সঙ্গী নিহত তাজুল, লিটন, স্বপন ও জাহাঙ্গীরের পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
এরপর তিনি আইনজীবী এডভোকেট চন্দন কুমার সরকারের বাসায় গিয়ে তার পরিবারের সঙ্গে দেখা করেন। সেখানে চন্দন সরকারের গাড়িচালক ইব্রাহিমের পরিবারের সদস্যরা ছিলেন।


বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, ভাইস চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকা কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতারা ছিলেন।
নিহত ৭ জনের পরিবারকে সমবেদনা জানাতে ১৪ মে নারায়ণগঞ্জে যাওয়ার কথা ছিল বেগম খালেদা জিয়র। কিন্তু ওই দিন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে নিহতদের পরিবারকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। এ কারণে পূর্বনির্ধারিত বুধবার নারায়ণগঞ্জে না গিয়ে একদিন আগেই সেখানে যাচ্ছেন বিএনপি চেয়ারপারসন।
গত ২৭ এপ্রিল দুপুরে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোড থেকে অপহৃত হন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম, জ্যেষ্ঠ আইনজীবী চন্দন সরকারসহ ৭ জন। এর ৩ দিন পর ৩০ এপ্রিল শীতলক্ষ্যা থেকে ৬ জনের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এর পরদিন ১ মে আরো এক জনের লাশ উদ্ধার করা হয়। ছয় কোটি টাকার বিনিময়ে র‌্যাবের তিন কর্মকর্তা ওই সাতজনকে অপহরণ ও খুন করেছেন বলে নজরুলের শ্বশুর শহীদুল ইসলাম ওরফে শহীদ চেয়ারম্যান দাবি করার পর র‌্যাব কর্মকর্তাদের অবসরে পাঠানো হয়। এ ঘটনায় প্রকাশিত প্রতিবেদন বিবেচনায় নিয়ে গত ৫ মে হাইকোর্ট স্বপ্রণোদিত ঘটনা তদন্তে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বে ৭ সদস্যের কমিটি গঠনের নির্দেশ দেন। এছাড়া এ ঘটনায় করা মামলা গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) পাশাপাশি সিআইডিকে (অপরাধ তদন্ত বিভাগ) তদন্তেরও নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। এদিকে এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে রোববার র‌্যাবের চাকরিচ্যুত তিন কর্মকর্তাকে গ্রেফতারের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।