1দৈনিক বার্তা: নারায়ণগঞ্জের সাত খুনের ঘটনা তদন্তে গঠিত কমিটি এক সপ্তাহের কাজের অগ্রগতির একটি প্রতিবেদন হাই কোর্টে দিলেও পুরো কাজ শেষ করতে এক মাস সময়  চেয়েছে।তদন্তের অগ্রগতি জানিয়ে একটি প্রতিবেদন সরকারপক্ষের আইনজীবীর কাছে বুধবার দুপুরে জমা দিয়ে আইন মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব ও ওই কমিটির সদস্য মিজানুর রহমান খান সাংবাদিকদের এ কথা জানান।

তিনি বলেন, হাই কোর্টের আদেশে আমাদের কমিটি গঠিত হয়েছিল। আমরা একটি অগ্রগতি প্রতিবেদন আদালতে দিয়েছি।এটা পূর্ণাঙ্গ করতে আরো চার সপ্তাহ সময় প্রয়োজন,সেটা আমরা চেয়েছি। নারায়ণগঞ্জে  সেভেন মার্ডার এর ঘটনায় হাইকোর্টের নির্দেশে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়-গঠিত তদন্ত কমিটি তদন্তের অগ্রগতি প্রতিবেদন হাইকোর্টে জমা দিয়েছেন। বৃহস্পতিবার এ অগ্রগতি প্রতিবেদন নিয়ে শুনানি হবে সংশ্লিষ্ট হাইকোর্ট  বেঞ্চে।তদন্ত কমিটির সদস্য আইন মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব মিজানুর রহমান খান বুধবার দুপুরে  ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এএসএম নাজমুল হকের কাছে এ প্রতিবেদন জমা দেন। তার সঙ্গে ছিলেন  ডেপুটি সলিসিটর (রিট) অঞ্জন কুমার সাহা।

জনপ্রশাসন ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পুলিশের মহাপরিদর্শক, র‌্যাবের মহাপরিচালক, সিআইডির প্রধান এবং সাত সদস্যের তদন্ত কমিটির পক্ষে আলাদা করে  মোট ৬টি ফাইল জমা দেওয়া হয়।পরে মিজানুর রহমান খান সাংবাদিকদের বলেন, তদন্তের ৩ পৃষ্ঠার অগ্রগতিমূলক প্রতিবেদন জমা দিয়েছি। এখন পর্যন্ত আমাদের কাজের ব্যাপারে আমরা সন্তুষ্ট। তদন্তে কি  পেয়েছেন?- সাংবাদিকদের এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিচ্ছিন্নভাবে আমি কিছু বলবো না।তদন্তের জন্য আরও ৪ সপ্তাহের সময় চাওয়া হবে বলেও জানান উপ-সচিব মিজানুর রহমান খান।

গত ৭ মে গঠিত এই প্রশাসনিক কমিটি নারায়ণগঞ্জ গিয়ে অপহরণের এবং লাশ উদ্ধারের স্থান পর্যবেক্ষণের পর নিহত সাতজনের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেছে।এরপর এক দফায় গণশুনানিতে ছয়জনের বক্তব্য শুনেছেন তদন্ত কমিটির সদস্যরা। বৃহস্পতিবারও গণশুনানি  নেবেন তারা।বহুল আলোচিত এই এই হত্যাকাণ্ডের তদন্তে এই পর্যন্ত কাজের মূল্যায়ন জানতে চাইলে মিজানুর রহমান বলেন, এই পর্যন্ত যে তদন্ত হয়েছে তাতে আমরা সন্তুষ্ট।এই হত্যাকাণ্ডে র‌্যাব-১১ এ থাকা তিন কর্মকর্তার সম্পৃক্ততার অভিযোগ উঠেছে, যাদের  গ্রেপ্তারের জন্য আদালতের আদেশও রয়েছে।

সামরিক বাহিনী  থেকে অবসরে পাঠানো ওই তিন কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করবেন কি না- প্রশ্ন করা হলে তদন্ত কমিটির সদস্য মিজানুর বলেন,প্রয়োজন হলে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। তবে এখন পর্যন্ত  সে ধরনের কোনো উদ্যোগ  নেই।

তদন্তের অগ্রগতির প্রতিবেদন বুঝে নিয়ে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এএসএম নাজমুল হক সাংবাদিকদের বলেন,আগামীকাল বিষয়টি কার‌্যতালিকায় (আদালতের) থাকবে। আশা করি, সেখানে দাখিল করতে পারব।

তদন্ত কমিটির সদস্য সচিব আবুল কাশেম মহিউদ্দিন বলেন, আমরা এতদিন কী কী কাজ করলাম, তা প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে।কাউন্সিলর নজরুল ও আইনজীবী চন্দন কুমার সরকারসহ সাতজনকে গত ২৭ এপ্রিল অপহরণ করা হয়েছিল, তিন দিন পর শীতলক্ষ্যা নদীতে তাদের লাশ ভেসে ওঠে।এরপর র‌্যাব-১১ এর কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে নজরুলের শ্বশুর শহীদুল ইসলাম অভিযোগ তুললে নারায়ণগঞ্জের ঘটনার তদন্তে ৫ মে দেয়া হাই কোর্টের নির্দেশে এই কমিটি গঠন করা হয়।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব  মো. শাহজাহান আলী মোল্লাকে চেয়ারম্যান করে সাত সদস্যের এই কমিটি হয়।এই কমিটি গণতদন্তের মাধ্যমে নারায়ণগঞ্জের অপহারণ ও হত্যার সঙ্গে প্রশাসনের কোনো সদস্য বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোনো সদস্যের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভূমিকা ও সংশ্লিষ্টতা রয়েছে কি না, তা উদঘাটন করবে।অপহৃত ব্যক্তিদের জীবিত উদ্ধারে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর কোনো অবহেলা বা ইচ্ছাকৃত গাফিলতি ছিল কি না, তাও খতিয়ে  দেখতে বলেছে আদালত।কমিটি গঠনের পর ১১ মে হাই  কোর্ট আরেক আদেশে তিন র‌্যাব কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তারের নির্দেশ দেয়। গ্রেপ্তারের আইনগত প্রক্রিয়া চলছে জানালেও ৭২ ঘণ্টায়ও তাদের  গ্রেপ্তার করা হয়নি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কমিটির এক সদস্য বাংলানিউজকে জানান, অগ্রগতি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভিক্টিম পরিবারগুলোর ২৭ জনের সাক্ষ্য নেওয়া হয়েছে। আর গণশুনানিতে সাক্ষ্য দিয়েছেন আরও ছয়জন। প্রতিবেদনে ঘটনাস্থল পরিদর্শনের কথা বলা হয়েছে। অভিযুক্ত পরিবারের সদস্যদের সাক্ষ্য নেওয়া হয়েছে বলেও প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।এ সদস্য জানান, বৃহস্পতিবার নারায়ণগঞ্জ সার্কিট হাউজে এ বিষয়ে দ্বিতীয় দফায় গণশুনানি অনুষ্ঠিত হবে।

চার সপ্তাহ সময় চাওয়ার বিষয়ে এ সদস্য জানান, গ্রহণ করা সাক্ষ্যগুলো পর্যালোচনা করা এবং কারা প্রকৃত অভিযুক্ত তাদের নির্ণয়ের জন্যই এ সময় চাওয়া হয়েছে।আরও সাক্ষ্য নেওয়া হবে বলেও প্রতিবেদনে বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে।ওই সদস্য বলেন, হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী কমিটি তাদের কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে।

নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও প্যানেল মেয়র-২ নজরুল ইসলাম ও আইনজীবী চন্দন কুমার সরকারসহ সাতজনকে অপহরণ ও খুনের ঘটনায় র‌্যাব ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যসহ অন্যদের জড়িত থাকার অভিযোগসহ সার্বিক বিষয়ে তদন্তে হাইকোর্টের নির্দেশে গত ৭  মে চ্চ পর্যায়ের প্রশাসনিক এ তদন্ত কমিটি গঠন করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।

তদন্ত কমিটির প্রধান জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব শাহজাহান আলী  মোল্লার নেতৃত্বে ৭ সদস্যের এ কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের দুই উপ-সচিব  মো. আবদুল কাইয়ুম সরকার ও আবুল কাশেম মো. মহিউদ্দিন, আইন মন্ত্রণালয়ের দুই উপ-সচিব মোস্তাফিজুর রহমান ও মিজানুর রহমান খান এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দুই উপ-সচিব শফিকুর রহমান ও সাঈদ মাহমুদ বেলাল হায়দার।

বিচারপতি মো.রেজাউল হক ও বিচারপতি গোবিন্দ চন্দ্র ঠাকুরের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে গত ৫ মে অপহরণ, গুম, হত্যার ঘটনায় প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কোনো গাফিলতি আছে কিনা এবং র‌্যাব ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যসহ অন্যদের জড়িত থাকার অভিযোগসহ সার্বিক বিষয়ে তদন্ত করতে এ তদন্ত কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছিলেন। র‌্যাবের সহযোগিতায় সাতজনকে অপহরণের পর হত্যার ঘটনায় ৬  কোটি টাকা লেনদেনের অভিযোগ ওঠার পর হাইকোর্টের এ নির্দেশ আসে।

সাতজনকে অপহরণ ও হত্যা এবং ৬ কোটি টাকা লেনদেনের অভিযোগ বিষয়ে র‌্যাবের সম্পৃক্ততা আছে কীনা তা বিভাগীয়ভাবে তদন্ত করতে র‌্যাবের মহাপরিচালকের প্রতিও নির্দেশ  দেন হাইকোর্ট। তবে ওই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় দায়ের করা মামলা র‌্যাব তদন্ত করতে পারবে না বলে নির্দেশ  দেওয়া হয়। এছাড়া  গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) পাশাপাশি সিআইডি (অপরাধ তদন্ত বিভাগ) প্রধানকে নির্দেশ  দেওয়া হয়। এ ঘটনার সকল সাক্ষীকে নিরাপত্তা দিতে পুলিশের আইজিকে (মহাপরিদর্শক) নির্দেশ দেওয়া হয়।

আদালতের আদেশ পাওয়ার সাতদিনের মধ্যে সকল কমিটিকে কাজ শুরু করে আদেশ বাস্তবায়ন বিষয়ে অগ্রগতি প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করার নির্দেশ  দেওয়া হয়।এ আদেশ অনুযায়ী বুধবার তদন্তের অগ্রগতি প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়।