5দৈনিক বার্তা: কোম্পানির উদ্যোক্তা পরিচালকদের ২ শতাংশ শেয়ার ধারণের বাধ্যবাধকতা দিয়ে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) জারি করা প্রজ্ঞাপন অবৈধ  ঘোষণা করে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট।ওই প্রজ্ঞাপনের বিরুদ্ধে করা রিট আবেদনের চূড়ান্ত শুনানি  শেষে বিচারপতি কাজী  রেজা-উল হক ও বিচারপতি এবিএম আলতাফ হোসেনের হাইকোর্ট বেঞ্চ বুধবার এ রায়  দেন।

২০১২ সালের ৮ এপ্রিল ন্যাশনাল  ক্রেডিট অ্যান্ড কমার্স ব্যাংকের (এনসিসি) উদ্যোক্তা পরিচালক  মোস্তাফিজুর রহমান রিট আবেদনটি করেন।মোস্তাফিজুর রহমানের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী শাহ  মোহাম্মদ আহসানুর রহমান।রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি  জেনারেল মাহবুবে আলম ও  ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিশ্বজিৎ রায়।

হাই কোর্টের এই রায়ের ফলে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ ক্ষুন্ন হবে বলে মনে করছেন পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের সভাপতি মিজান-উর রশীদ  চৌধুরী।তিনি বলেন, পরিচালকরা ন্যূনতম ২ শতাংশ শেয়ার ধারণ না করলে কোম্পানির প্রতি তাদের মায়া থাকে না।

তবে পুঁজিবাজারে এর  কোনো  নেতিবাচক প্রভাব পড়বে না বলে মনে করেন সম্পদ ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠান এইমস-এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ইয়াওয়ার সাঈদ।তিন বছর আগে পুঁজিবাজারে ধস নামলে বাজার স্থিতিশীল করতে সরকার বেশ কিছু পদক্ষেপ  নেয়, তাতেই পরিচালকদের ন্যূনতম ২ শতাংশ  শেয়ার ধারণের বাধ্যবাধকতা আসে।

বিএসইসির ওই আদেশের বিরুদ্ধে ন্যাশনাল  ক্রেডিট অ্যান্ড কমার্স ব্যাংকের উদ্যোক্তা পরিচালক  মোস্তাফিজুর রহমানের রিট আবেদনে ২০১২ সালের ১২ ডিসেম্বর হাই কোর্ট রুল দিয়েছিল।শাহ  মোহাম্মদ আহসানুর রহমান  বলেন, আমরা ওই  নোটিসের ডি ও ই কে চ্যালেঞ্জ করেছি। আদালত রুল দিয়েছিল। এখন রুল অনুসারে আবেদন মঞ্জুর করে রায় দিয়েছে।

পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির বিধানের ডি’তে বলা হয়েছে, উদ্যোক্তা পরিচালকদের শতকরা দুই ভাগ শেয়ার থাকতে হবে। আর ই’তে বলা হয়েছে, এরা পরিচালক পদ  ছেড়ে দিলে ৫ ভাগ আছে এমন কেউ পরিচালক হতে পারবে।

আহসানুর বলেন, আমাদের যুক্তি ছিল, এখানে দুই ধরনের বিধান রয়েছে। এটা  বৈপরিত্য সৃষ্টি করে। তাছাড়া  যে  কোম্পানির ৪০-৪৫ জন  শেয়ার হোল্ডার আছে, তারা কী করবে? কিভাবে আপনি এত  শেয়ার দেবেন? এই যুক্তিতে আদালত এই বিধান অবৈধ ঘোষণা করে রায় দিয়েছে।

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত  কোম্পানির উদ্যোক্তা পরিচালকদের ন্যূনতম শেয়ার ধারণের বিষয়ে ২০১১ সালের ২২ নভেম্বর আদেশ জারি করে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন।

এতে বলা হয়, কোম্পানির উদ্যোক্তা পরিচালকদের সম্মিলিতভাবে ওই  কোম্পানির পরিশোধিত মূলধনের ন্যূনতম ৩০ শতাংশ এবং প্রত্যেক পরিচালকের ন্যূনতম ২ শতাংশ শেয়ার থাকতে হবে।আদেশ জারির ছয় মাসের মধ্যে এ শর্ত পূরণ করতে বলা হয়, যা  শেষ হয় ২০১২ সালের ২১ মে।

২০১২ সালের ৪ জুন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ প্রকাশিত তালিকা অনুযায়ী, ২১ মে’র পরে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ২০৯টি কোম্পানির ২৩৫ জন উদ্যোক্তা, পরিচালকের ২ শতাংশের কম শেয়ার ছিল।ওই বছরের ২২  মে এনসিসি ব্যাংক, মার্কেন্টাইল ব্যাংক, সাউথইস্ট ব্যাংক, ন্যাশনাল লাইফ ইন্সুরেন্স ও প্রাইম ফিনান্সের ২৪ জন পরিচালক হাই কোর্টে পাঁচটি আবেদন করেন।

সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন অধ্যাদেশ, ১৯৬৯-এর যে ধারার ক্ষমতাবলে এসইসি ওই নির্দেশনা দিয়েছিল, সেই ২ সিসি ধারা অবৈধ ঘোষণার আবেদন জানান পরিচালকরা।এসব আবেদনে ওই বছরের ৪ জুন রুল  দেয় আদালত। এসইসি আইনের ২ সিসি ধারা কেন অসাংবিধানিক ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয় রুলে।রুলের চূড়ান্ত শুনানি করে ওই মাসেই দেয়া রায়ে সবগুলো রুল খারিজ করে  দেয় আদালত।

এসইসির ওই ধারায় বলা হয়েছে, ১৯৯৪ সালের  কোম্পানি আইন অথবা বিদ্যমান কোনো আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক না হলে এসইসি এ ধরনের শর্ত আরোপ করতে পারবে।

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত  কোম্পানির উদ্যোক্তা পরিচালকদের ন্যূনতম শেয়ার ধারণের বিষয়ে ২০১১ সালের ২২ নভেম্বর একটি আদেশ (প্রজ্ঞাপন) জারি করে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (এসইসি)।প্রজ্ঞাপন পরিচালকদের পৃথকভাবে ন্যূনতম দুই শতাংশ ও সম্মিলিতভাবে ৩০ শতাংশ  শেয়ার ধারণের বাধ্যবাধকতা আরোপ করা হয়।এ প্রজ্ঞাপনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করেন ন্যাশনাল ক্রেডিট অ্যান্ড কমার্স ব্যাংকের (এনসিসি) উদ্যোক্তা পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান। এ রিটের প্রেক্ষিতে ২০১২ সালের ১২ ডিসেম্বর হাইকোর্ট রুল জারি করেন।ওই রুলের চূড়ান্ত শুনানি শেষে বুধবার এ রায় দেওয়া হয়।