1দৈনিক বার্তা : রাডার ক্রয়-সংক্রান্ত দুর্নীতি মামলায় আত্মপক্ষ সমর্থন করে নিজেকে নির্দোষ দাবি করেছেন জাতীয় পার্টির  চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ। এই মামলায় ন্যায়বিচার  চেয়েছেন তিনি।বৃহস্পতিবার ঢাকার বিভাগীয় বিশেষ জজ আব্দুর রশিদের আদালতে আত্মপক্ষ সমর্থন করেন এরশাদ। মামলার যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের জন্য ২৯  মে তারিখ ধার্য করা হয়েছে।

রাডার ক্রয়-সংক্রান্ত দুর্নীতি মামলায়  ফৌজদারি কার্যবিধি ৩৪২ ধারায় আসামিপক্ষের আত্মসমর্পণের জন্য দিন ধার্য ছিল আজ। এরশাদসহ এ মামলার বাকি দুই আসামি বিমানবাহিনীর সাবেক সহকারী প্রধান মমতাজ উদ্দিন আহমেদ ও সুলতান মাহমুদ আদালতে গিয়ে আত্মপক্ষ সমর্থন করেন। তাঁরাও নিজেদের নির্দোষ দাবি করেন। মামলার আরেক আসামি এ  কে এম মুসা পলাতক আছেন।

১৯৯২ সালের ৪  মে তত্কালীন দুর্নীতি দমন ব্যুরো এ মামলা করে।এতে অভিযোগ করা হয়, তৎকালীন বিমানবাহিনীর প্রধান সদর উদ্দিন আহমেদ তত্কালীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কাছে বাহিনীর জন্য রাডার ক্রয়ের আবেদন করেন।

জিয়াউর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক সভায় ফ্রান্সের থমসন সিএসএফ কোম্পানির নির্মিত অত্যাধুনিক একটি হাই পাওয়ার রাডার ও দুইটি লো  লেভেল রাডার ক্রয়ের প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়।

মামলার অভিযোগে বলা হয়, এরশাদসহ বাকি আসামিরা পরস্পরের  যোগসাজশে  ফ্রান্সের থমসন সিএসএফ  কোম্পানির অত্যাধুনিক রাডার না কিনে  বেশি দামে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়েস্টিং  কোম্পানির রাডার কিনে সরকারের ৬৪  কোটি ৪ লাখ ৪২ হাজার ৯১৮ টাকা আর্থিক ক্ষতি করেন।

১৯৯৪ সালের ২৭ অক্টোবর এরশাদসহ চার আসামির বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন আইনের ৫ (২) ধারা এবং দণ্ডবিধি ১০৯ ধারায় অভিযোগপত্র  দেয় দুদক। ১৯৯৫ সালের ১২ আগস্ট মামলাটিতে আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন আদালত।

দুই যুগ আগের করা এই মামলায় গত ২৪ এপ্রিল রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষ্যগ্রহণ হয়। ওই দিনই বিচারক আসামিদের বক্তব্য শোনার দিক ঠিক করেন।বর্তমানে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত এরশাদ আত্মপক্ষ সমর্থন করে একটি লিখিত বক্তব্যও দাখিল করেন আদালতে।

এরশাদসহ তিন আসামিই বিচারককে জানিয়েছেন, তারা  কোনো সাফাই সাক্ষ্য  দেবেন না। অন্য দুই আসামি হলেন বিমানবাহিনীর সাবেক প্রধান মমতাজউদ্দিন আহমেদ ও সুলতান মাহমুদ।এই দুজনও বিচারকের কাছে নিজেদের নির্দোষ দাবি করে ন্যায়বিচার প্রত্যাশা করেন। তবে তারা কোনো লিখিত বক্তব্য দেননি।

তিনজনের বক্তব্য শোনার পর বিচারক আগামী ২৯ মে এই মামলায় যুক্তিতর্ক শুনানির দিন ঠিক করেছেন।এরশাদ ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর ১৯৯২ সালের ৪  মে বিমানের রাডার কেনায় দুর্নীতির এই মামলার আসামি হন। দুর্নীতি দমন ব্যুরো এই মামলাটি দায়েরের দুই বছর পর ১৯৯৪ সালের ২৭ অক্টোবর আদালতে অভিযোগপত্র জমা হয়।

১৯৯৫ সালের ১২ অগাস্ট এরশাদসহ আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের পর ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত মামলার সুপ্রিম কোর্টের আদেশে স্থগিত ছিল।এরপর সাক্ষ্যগ্রহণে বাধা না থাকলেও মামলা এগোয়নি। মামলার বাদী দুর্নীতি দমন ব্যুরোর কর্মকর্তা আলী হায়দারকেও আদালতে হাজির হতে হয়নি। ইতোমধ্যে ব্যুরো বিলুপ্ত হয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন গঠিত হয়।২০১০ সালের ১৯ আগস্ট বাদীর সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়ে ২০১২ সালের ১ মার্চ তা শেষ হয়।

জাতীয় পার্টি  চেয়ারম্যান এরশাদের বিরুদ্ধে  মেজর  জেনারেল আবুল মঞ্জুর হত্যামামলাও বিচারাধীন। রায়ের দিন ঠিক হওয়ার পর রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনে বর্তমানে মামলাটির অধিকতর তদন্ত চলছে।