11দৈনিক বার্তা : সম্প্রচার মাধ্যমে বীভৎস ছবি না দেখাতে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী  শেখ হাসিনা।গণমাধ্যমের বিরুদ্ধে  প্রেস কাউন্সিলের মাধ্যমে ব্যবস্থা নিতে মন্ত্রীদের পরামর্শের প্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী  শেখ হাসিনা বলেছেন,প্রেস কাউন্সিল নিজেই একটা নখদন্তহীন প্রতিষ্ঠান। গণমাধ্যম বিষয়ে দেখভাল করার জন্য জাতীয় সম্প্রচার নীতিমালাটি আন্তর্জাতিক বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে প্রণয়ন করতে হবে।

সোমবার সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। সভায় সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নির্ধারিত এজেন্ডার বাইরে গণমাধ্যম, ভারতের নির্বাচন বিষয়ে আলোচনা হয়েছে বলে একাধিক মন্ত্রী জানিয়েছেন।

এছাড়া গণমাধ্যমে দুর্ঘটনাসহ সহিংসতার বীভৎস ছবি প্রকাশ বন্ধ করার জন্য তথ্য মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়েছেন।  বাজার কাটতির জন্য সম্প্রচার মাধ্যম বিশেষ করে টেলিভিশন চ্যানেলগুলো  কোনো ঘটনা বা দুর্ঘটনার বীভৎস ছবি প্রচারেও কার্পণ্য করে না। আর এতে শিশু, হার্টের রোগী এবং বয়োবৃদ্ধদের ওপর  নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।

মুন্সিগঞ্জের গজারিয়া উপজেলায় গত ১৫ মে লঞ্চ ডুবির ঘটনায় অন্তত ৫৫ জনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। রোববার পর্যন্ত নিহতদের মৃতদেহ অনেকটা বীভৎস হয়ে যায়। বেসরকারি কিছু টেলিভিশন মৃতদেহের ছবি  সেন্সর করে প্রচার করলেও বেশকিছু চ্যানেল সরাসরি লাশের বিকৃত ছবি প্রচার করেছে।

মন্ত্রিসভা মনে করে, বীভৎস ছবি প্রচার করায় এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। বাণিজ্যমন্ত্রী  তোফায়েল আহমেদ বিষয়টি উপস্থাপন করে সম্প্রচার নীতিমালায় এ বিষয়টি অন্তর্ভূক্তির ওপর জোর দেন বলে জানান বৈঠকে উপস্থিত একজন মন্ত্রী।প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিষয়টি সম্প্রচার নীতিমালায় অন্তর্ভূক্তির জন্য তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুকে নির্দেশ দিয়েছেন।

বৈঠকে উপস্থিত ওই মন্ত্রী বলেন, পৃথিবীর অন্য  দেশে  কোনো দুর্ঘটনার বীভৎস ছবি প্রচার করা হয় না, এমনকি দক্ষিণ  কোরিয়ায় ফেরি দুর্ঘটনায় নিহতদের ছবিও আমাদের মিডিয়ার মতো করে প্রচার করা হয়নি।

গত ১৬ এপ্রিল দক্ষিণ কোরিয়ায়  ফেরি ডুবির ঘটনায় ২৮১ জন যাত্রী নিহত হন। যার অধিকাংশ ছিল মাধ্যমিক স্কুল শিক্ষার্থী।মন্ত্রিসভায় শুধু দুর্ঘটনার বীভৎস ছবি নয়,  কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচির জ্বালাও- পোড়াওয়ের ছবিও বার বার প্রচারের বিষয়ে আলোচনা হয়।

প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়টিও  দেখতে তথ্যমন্ত্রীকে নির্দেশ দিয়েছেন। এর আগে  রোববার তথ্য মন্ত্রণালয় পরিদর্শনকালে কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে বক্তব্যদানকালেও  শেখ হাসিনা বলেন, পৃথিবীর সব  দেশে সম্প্রচার নীতিমালা রয়েছে। আমাদেরও করতে হবে।

তথ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সম্প্রচার নীতিমালার অনেক দূর এগিয়েছে, শিগগিরই বিষয়টি চূড়ান্ত করা হবে। সূত্র আরো জানায়, বিভিন্ন গণমাধ্যমে দুর্ঘটনাসহ সহিংসতার বীভৎস ছবি প্রকাশ বন্ধ করার জন্য তথ্য মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ জন্য জাতীয় সম্প্রচার নীতিমালা সংশোধনের জন্য মন্ত্রিসভার  বৈঠকে বলা হয়েছে।

গণমাধ্যমের সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা বলছে এসএসসি পরীক্ষায় ফলাফল ভালো হলেও শিক্ষার মান বাড়েনি। তারা শহরে না  থেকে গ্রামে গিয়ে শিক্ষকতা করলে ভালো হয়। ভারতে বিজেপি সরকার গঠনের বিষয়ে বাংলাদেশের বিএনপি  বেশি খুশি হয়েছে। এ জন্য তাদের সমালোচনাও করা হয়েছে মন্ত্রিসভার  বৈঠকে।

ঢাকা শহরের চার পাশের (বুড়িগঙ্গা, তুরাগ,ধলেশ্বরী, বালু এবং শীতলক্ষ্যা) নদী দূষণ রোধে সংশি¬ষ্ট মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী  শেখ হাসিনা। পাশাপাশি নদীর তীর  যেই দখল করুক না  কেনো তাদের উচ্ছেদ করে পথচারীদের জন্য ওয়াকওয়ে করার জন্যও কড়া নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক মন্ত্রী জানান, মন্ত্রিসভার   বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী  শেখ হাসিনা ঢাকা শহরের চার পাশের (বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, ধলেশ্বরী, বালু এবং শীতলক্ষ্যা) নদী দূষণ  রোধে সংশি¬ষ্ট মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়েছেন। পাশাপাশি নদীর তীর  যেই দখল করুক না  কেনো তাদের উচ্ছেদ করে পথচারীদের জন্য ওয়াক ওয়ে করার জন্যও নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

আলোচনায় অংশ নিয়ে নৌ-পরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান জানান, নারায়ণগঞ্জের সাত খুনের প্রধান আসামি নুর  হোসেন মেঘনার তীরে দখল করে অবৈধ বালু ব্যবসা করছে। বুড়িগঙ্গায় হাজী  সেলিম, তুরাগে ইলিয়াস আলীসহ অনেক প্রভাবশালী ব্যক্তি এবং প্রতিষ্ঠান দখল করে রাখছে। এসব অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করা যাচ্ছে না। এ সময় আরো কয়েকজন মন্ত্রী নদী দখল ও দূষণের বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টিতে আনেন।

এ সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, দখলদাররা যত বড় এবং ক্ষমতাধর হোক না  কেন, তাদের উচ্ছেদ করতে হবে। নদীকে বাঁচাতে হবে। পরিবেশ রক্ষা করতে হবে। কাউকেই ছাড়  দেওয়া যাবে না। আমি চাই নদী দখল ও দূষণমুক্ত করতে  যে টাস্কফোর্স রয়েছে তারা অতি দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা নিবে। এজন্য তিনি পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়, পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়,  নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়, ভূমি মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে  যৌথভাবে তদারকি করতে নির্দেশ দিয়েছেন।

মন্ত্রীরা জানান, গ্রহস্থালী বর্জ্য নদীসহ আশপাশের জলাশয় নষ্ট করে  ফেলছে। এ জন্য বর্জ্য নির্দিষ্ট জায়গায়  ফেলা এবং এসব বর্জ্য দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য সরকারের  যে প্রকল্প রয়েছে তার কাজ দ্রুত শুরু করারও পরামর্শ  দেওয়া হয়েছে। বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে বৈঠকে কয়েকজন মন্ত্রী জানান, সিটি করপোরেশন ও পৌরসভার সহযোগিতা না পেয়ে এসব বর্জ্য কাজে লাগানো যাচ্ছে না।  বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঢাকা সিটির বর্জ্যগুলো বর্জ্য শোধানাগারে নিয়ে  যেতে বলেছেন। যার মাধ্যমে বিদ্যুৎসহ অন্যান্য জিনিস উৎপাদন করা যায়। বৈঠকে জাইকার অর্থায়নে বিদ্যুৎ  কেন্দ্র স্থাপনের কাজ দ্রুত করার পরামর্শ দিয়েছেন  শেখ হাসিনা।

আলোচনায় অংশ নিয়ে মন্ত্রীরা বলেন, যারা  বেশি খুশি হয়েছে তারাই ভারত বিরোধী। মন্ত্রিসভার প্রায় সব মন্ত্রীই এ বিষয়ে বিভিন্ন কথা বলেছেন বলে সংশি¬ষ্ট সূত্র জানিয়েছে। সভায় এসব বিষয় ছাড়াও কক্সবাজারের  সোনাদিয়ায় গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ  নেওয়ারও পরামর্শ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী  শেখ হাসিনা। তাছাড়া চীন, জাপান ও ভারতকে বাংলাদেশে বিনিয়োগ বাড়াতে কার্যকর উদ্যোগ নিতে সব মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।

এদিকে, মন্ত্রিসভা রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক আইন, ২০১৪’র খসড়া অনুমোদন করেছে। ব্যাংকের কার্যক্রম বিস্তৃত করার মাধ্যমে অধিকসংখ্যক লোককে এর সেবার আওতায় আনা নতুন আইনের লক্ষ। সোমবার বাংলাদেশ সচিবালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে এ অনুমোদন দেয়া হয়। বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব এম মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া সাংবাদিকদের এ কথা জানান।

তিনি বলেন, সামরিক শাসনামলে জারি করা একটি অধ্যাদেশকে সামান্য পরিবর্তন, পরিমার্জন ও হালনাগাদ করে এ আইনটি বাংলায় করা হচ্ছে।

এ আইনে কৃষি এবং ক্ষুদ্র কৃষকদের সংজ্ঞা বিস্তৃত করার কথা উলে¬খ করে তিনি বলেন, এখন থেকে প্রক্রিয়াজাতকরণ মাছ ও পশু পণ্যকে কৃষি কর্মকান্ডের অংশ এবং জেলেদের পাশাপাশি পশু পণ্য ও পোলট্রি উৎপাদনকারীদের ক্ষুদ্র কৃষক হিসেবে গন্য করা হবে।মন্ত্রিপরিষদ সচিব সদ্য প্রতিষ্ঠিত রংপুর বিভাগকে এ ব্যাংকের অধীনে ন্যস্ত হওয়ার কথাও উলে¬খ করেন।

মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া বলেন, ব্যাংকের কার্যক্রম সম্প্রসারিত হওয়ার কারণে ব্যাংকের পরিচালনা পরিষদের সদস্য সংখ্যা ৭ থেকে বাড়িয়ে ১১ এবং উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালকের একটি পদ সৃষ্টির প্রস্তাব খসড়ায় উলে¬খ করা হয়েছে।

তিনি বলেন, ব্যাংকের নতুন শাখা খোলার পাশাপাশি এজেন্ট ব্যাংকিং এবং মোবাইল ও অনলাইন সেবা প্রবর্তনের মাধ্যমে এর কার্যক্রম সম্প্রসারিত করা হবে।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন,প্রস্তাবিত খসড়া আইনটি নতুন কোন আইন নয়। সামরিক শাসনামলে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক অধ্যাদেশ, ১৯৮৬’ নামে জারি করা অধ্যাদেশটিকেই হালনাগাদ করে বাংলায় সংস্করণ করা হচ্ছে।

মোশাররফ হোসেন বলেন, দেশে কৃষি শিক্ষার বিস্তার ঘটাতে খুলনায় একটি নতুন কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্য আজ মন্ত্রিসভায় খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ২০১৪’র খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হয়েছে।তিনি বলেন, ২০১১ সালের ৫ মার্চ খুলনা সফরকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অঙ্গীকার বাস্তবায়নে এ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, মন্ত্রিসভা ২০১১ সালের অক্টোবরে কয়েকটি পর্যবেক্ষণসহ নীতিগতভাবে এ আইনের খসড়া অনুমোদন করেছিল। শিক্ষা মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যে খুলনায় এই বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে।

তিনি বলেন, বিদ্যুৎ, জ্বালানী ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রীর নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদলের গত ২০ থেকে ২৬ এপ্রিল জাপান সফরের কথা মন্ত্রিসভাকে অবহিত করা হয়।বৈঠকে কেবিনেট মন্ত্রী ও সংশি¬ষ্ট প্রতিমন্ত্রীগণ যোগ দেন। সংশি¬ষ্ট সচিবগণ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।