2 দৈনিক বার্তা-নারায়ণগঞ্জে সাত খুনের ঘটনায় জামাতার সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ উঠার পর থেকে দলীয় কর্মসূচি ও দাফতরিক কাজ এড়িয়ে চলছেন ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনামন্ত্রী  মোফাজ্জল হোসেন  চৌধুরী মায়া। মন্ত্রিসভার সোমবারের   বৈঠকেও তিনি অংশ  নেননি। এ নিয়ে টানা তিনটি  বৈঠকে অনুপস্থিত তিনি।

এদিকে, নারায়ণগঞ্জে সাতখুনে র‌্যাব কর্মকর্তা জামাতা  গ্রেপ্তার হওয়ার আগে পরিবারের  কেউ এ ঘটনায় জড়িত নয় দাবি করায় নানা মহল  থেকে পদ ছাড়ার দাবির মধ্যেই সরকারি সফরে থাইল্যান্ড  গেছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী  মোফাজ্জল  হোসেন  চৌধুরী মায়া। সোমবার দুপুরে ঢাকা ছাড়ার আগে মন্ত্রিসভার বৈঠকে যোগ দেননি ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মায়া।এনিয়ে পরপর মন্ত্রিসভার তিনটি  বৈঠকে অনুপস্থিত থাকলেন তিনি।

মন্ত্রিপরিষদের বৈঠকে অনুপস্থিতির বিষয়টি নিয়ে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব  মোশাররফ  হোসেন ভূইয়া বলেন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী  মোফাজ্জল  হোসেন  চৌধুরী মায়া বিদেশে যাচ্ছেন। এটা মন্ত্রিপরিষদ বিভাগকে আগাম জানানো হয়েছে।সচিব বলেন, সংসদে  যে নিয়ম আর মন্ত্রিপরিষদের নিয়ম এক নয়। মন্ত্রিসভার সদস্যরা পর পর অনুপস্থিত থাকতে পারেন। এজন্য তার মন্ত্রিত্ব যাবে না।সচিবালয় সূত্র জানায়, ব্যক্তিগত সফরে মায়া  সোমবার দুপুরে ব্যাংককে যাচ্ছেন।

প্রসঙ্গত, নারায়ণগঞ্জের আলোচিত সাত খুনের ঘটনায় র‌্যাবের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ রয়েছে। এ ঘটনায় র‌্যাবে কর্মকর্তাদের মধ্যে প্রধান অভিযুক্ত র‌্যাব-১১ এর  সাবেক অধিনায়ক কর্নেল তারেক সাঈদ  মোহাম্মদ মায়ার জামাতা। ইতিমধ্যে তাকে  গ্রেফতারের পর রিমান্ডে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় মায়ার ছেলে দীপু  চৌধুরীর সংশ্লিষ্টতার অভিযোগও উঠেছে। জামাতা ও ছেলের সংশ্লিতায় এ ঘটনায় বিব্রত মায়া মন্ত্রিসভা  থেকে পদত্যাগ করছেন বলে গুঞ্জন উঠে। তবে সরকারের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে কোনো আভাস পাওয়া যায়নি।

ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা ওমর ফারুক দেওয়ান জানান, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার ওপর একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনে  যোগ দিতে  সোমবার  বেলা ১২টায় থাইল্যান্ডের উদ্দেশ্যে ঢাকা  ছেড়েছেন মন্ত্রী।মন্ত্রণালয়ের একজন যুগ্ম-সচিব মন্ত্রীর সঙ্গে রয়েছেন জানিয়ে তিনি বলেন, আগামী ২২  মে তার  দেশে  ফেরার কথা রয়েছে।এর আগে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগকে কিছু না জানিয়েই দুটি মন্ত্রিসভার  বৈঠকে অনুপস্থিত ছিলেন মায়া।

গত ২৭ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের ২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম, আইনজীবী চন্দন কুমার সরকারসহ সাতজনকে অপহরণ করা হয়। তিন দিন পর শীতলক্ষ্যা নদীতে তাদের লাশ  ভেসে ওঠে।

লাশ উদ্ধারের আগের দিন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়ার  মেয়েজামাই তারেক সাঈদ  মোহাম্মদকে র‌্যাব-১১ এর অধিনায়কের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে  সেনাবাহিনীতে পাঠানো হয়।এরপর নিহত নজরুলের শ্বশুর শহীদুল ইসলাম অভিযোগ করেন, নারায়ণগঞ্জের আরেক কাউন্সিলর নূর  হোসেন ও তার সহযোগীদের কাছ  থেকে ছয় কোটি টাকা নিয়ে র‌্যাব সদস্যরা তার জামাতাসহ সাতজনকে ধরে নিয়ে হত্যা করেছে।

ওই অভিযোগ ওঠার পর গত ৭  মে সাঈদসহ র‌্যাব-১১ এর তিন কর্মকর্তাকে সামরিক বাহিনীর চাকরি  থেকে অবসরে পাঠানো হয়।অবশ্য ঘটনার তদন্ত চলার মধ্যেই  মোফাজ্জল  হোসেনে  চৌধুরী মায়া এক বিবৃতি পাঠিয়ে দাবি করেন, ওই হত্যাকাণ্ডে অভিযুক্ত কারো সঙ্গে তার পরিবারের  কোনো সদস্যের সংশ্লিষ্টতা ছিল না।তদন্ত চলাকালে এ ধরনের বিবৃতি দেয়ায় বিভিন্ন মহল  থেকে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া পাওয়া  গেছে,  কেউ কেউ মায়ার পদত্যাগ দাবি করেছেন।

ওই ঘটনায় সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে মায়ার  মেয়ের জামাইসহ তিন র‌্যাব কর্মকর্তাকে  গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বর্তমানে তারা রিমান্ডে আছেন।