Rajibpur pictur 19.05.2014রুহুল সরকার/দৈনিক বার্তা : রায়হানুল আর দশটা শিক্ষার্থীদের মতো শুধু লেখাপড়ার জন্যই সংগ্রাম করতে হয়নি। লেখাপড়ার পাশাপাশি তাকে লড়াই করতে হয়েছে অভাব আর নদী ভাঙ্গনের সঙ্গে। রাতে ঘুমানোর ও লেখাপড়ার ঘর না থাকার কারনে তাকে ভাবতে হয়েছে। লেখাপড়া নিয়ে তাকে যুদ্ধ করতে হয়েছে। আর সে যুদ্ধকে জয় করে সে তার বাবামা’র মুখে হাসি ফুটিয়েছে। চরের মানুষের মাঝে অভাবি অসহায় বাবামা’র মুখ উজ্জল করে তুলেছে। তার ভালো ফলাফলে চরের মানুষ ও স্কুলের শিক্ষকরা খুশি হলেও খুশি হতে পারেনি তার অভাবি বাবা মা। এর কারন হিসেবে জানা গেছে, ছেলে ভালো রেজাল্ট করায় তাদের চিন্তা আর ঘুম হারাম হয়ে গেছে। যে পরিবারের দু’বেলা দু’মুঠো ভাতের জন্য দৌড়াতে হয় সেই পরিবারের ছেলেকে কি করে উচ্চ শিক্ষায় গড়ে তুলবে।

রায়হানুল ইসলাম এ বছর এসএসসি পরীক্ষায় চরনেওয়াজী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে গোল্ডেন জিপিএ-৫ অর্জন করেছে। এর আগে সে ৫ম শ্রেণী ও ৮ম শ্রেণীতেও জিপিএ-৫ পেয়ে বৃত্তি লাভ করেছিল। কুড়িগ্রামের রাজীবপুর উপজেলার অধিনে ব্রহ্মপুত্র নদ বিচ্ছিন্ন চড়াইহাটি চরে তাদের বাড়ি। বাবা সাহার আলী একজন রিক্সা চালক। ঢাকায় রিক্সা চালান তিনি। মা রাহেলা বেগম অন্যের বাড়িতে কাজ করে। জমাজমি বলতে তাদের কিছুই নেই। বার বার নদী ভাঙ্গনের শিকার হয়ে তারা ভূমিহীনে পরিনত হয়েছে। বর্তমানে তারা অন্যের বাড়িতে একটা ঘর তুলে জীবন যাপন করছেন। রায়হানুলরা ৩ ভাই। বড় ভাই খোকন মিয়া আলিম পরীক্ষা দিবে আর ছোট ভাই রাকিবুল ইসলাম পড়ে তৃতীয় শ্রেণীতে।

ছেলের রেজাল্টের খবর শোনার পর ঢাকা থেকে বাড়ি ছুটে এসেছেন বাবা সাহার আলী। গতকাল রবিবার তাদের বাড়িতে গিয়ে কথা হয় সাহার আলীর সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘পোলায় ভালো রেজাল্ট করছে। এতে খুশি নাগবই। কিন্তুক ভালো ফল কইরা তো আমাকে বিপদে ফালাইছে। চরের মানুষ কয়-তোর ছেলে ভালো রেজাল্ট করেছে। তাকে পড়াবি কি ভাবে। কলেজে পড়াইতে মেলা টাকা নাগে। এই চিন্তায় ভালো নাগছে না।’ রাহেলা বেগম বলেন, ‘পোলা আমার অনেক কষ্ট কইরা পড়ছে। নদী ভাঙ্গনের সময় থাকার জায়গা ছিল না। মাইনসের বাইত্তে থাইকা পড়ছে। ভালামন্দ খাবার দিবার পারি নাই। মাইনসের পোলামাইয়া মাছ মাংশ দুধ খায়। আমার পোলা চোখেও দেখে না।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘কলেজে পড়াইতে এক গাদি ট্যাহা নাগবো। অত ট্যাহা পাবো কই।’

রায়হানুলের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, টাকার অভাবে তার প্রাইভেট পড়া হয়নি। ঘরের অভাবে মাইনসের বাড়িতে থেকে লেখাপড়া করছে। কেরোসিনে অভাবে অনেক রাতে তার পড়া হয়নি। উপোস থেকে স্কুলে যাওয়া তার নিত্যদিনের ঘটনা ছিল। পরীক্ষা শেষ করেই ঢাকা ও টাঙ্গাইলে কামলা দিবার গিয়েছিল রায়হানুল। রায়হানুল বলেন, ‘বড় হয়ে ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার ইচ্ছা আছে। জানি না আমার স্বপ্ন পূরণ হবে কিনা। কেননা কলেজে পড়তে অনেক টাকা লাগবে। সে টাকা তো বাবামা দিতে পারবে না। এই চিন্তা করছি। যদি ভালো কলেজে ভর্তি না হতে পারি এলাকার কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষা দিয়ে জিপিএ-৫ অর্জন করবো। জানি এ জন্য আমাকে অনেক চড়াই উৎড়াই পার হতে হবে। অনেক কষ্ট করতে হবে আমাকে।’

স্কুলের প্রধান শিক্ষক শফিউল আলম জানান, রায়হানুল ইসলাম খুবই ভালো ছাত্র। তার মেধা খুবই ভালো। লেখাপড়ায় স্মরন শক্তি অন্যান্য ছাত্রের চেয়ে রায়হানুলের অনেক বেশি। কিন্তু তার বাবা মা অভাবি। আর একারনে স্কুলের পক্ষ থেকে তাকে সুযোগ সুবিধা দেওয়া হতো। রায়হানুলকে যদি একটু সার্পোট ও উৎসাহ দেওয়া যায় তাহলে ভবিষ্যতে ভালো করবে সে।