4দৈনিক বার্তা : ফেনীর ফুলগাজী উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি একরামুল হক একরামকে (৪৫) কুপিয়ে গুলি করে ও আগুন লাগিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা।  মঙ্গলবার সকাল ১১টা ৫০ মিনিটে ফেনী শহরের একাডেমিস্থ বিলাসী সিনেমা হলের সামনে এ ঘটনা ঘটে।

পুলিশ ও স্থানীয়রা জানায়, এ ঘটনায় তার সাথে থাকা চারজন আহত হয়েছেন। গুরুতর আহত দু’জনকে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। একরাম  চেয়ারম্যানকে হত্যা করার হওয়ার প্রতিবাদে তার সমর্থকরা শহরের একাধিক স্থানে রাস্তায় টায়ার জালিয়ে বিক্ষোভ করে।

এদিকে, ফেনীর ফুলগাজী উপজেলা  চেয়ারম্যান ও ফুলগাজী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি একরামুল হককে নির্মমভাবে গাড়ীসহ পুড়িয়ে মারার ঘটনায়  ক্ষোভ ও নিন্দা প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে এ নির্মম হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িতদের  গ্রেফতারের নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।

এক বিবৃতিতে প্রধানমন্ত্রী বলেন, একরামুল হক অত্যন্ত জনপ্রিয় একজন তরুণ নেতা ছিলেন। ফুলগাজীকে একটি আধুনিক উপজেলায় পরিণত করতে তিনি ছিলেন নিবেদিতপ্রণ।প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা  দেশের স্বাধীনতা ও মহান মুক্তিযুদ্ধের  চেতনার বিরোধী, যারা হত্যা ও সন্ত্রাসের মাধ্যমে আওয়ামী লীগকে সাংগঠনিকভাবে দুর্বল করতে চায়  সেই  দেশবিরোধী অশুভ শক্তিই একরামুল হককে নৃশংসভাবে হত্যা করতে পারে।

প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী মাহবুবুল হক শাকিলের স্বাক্ষরিত ওই বিবৃতিতে বলা হয়,প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ফুলগাজীবাসী এবং সমগ্র  দেশবাসীকে এই নির্মম হত্যাকা- ও ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

তিনি মরহুমের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন।শোকসন্তপ্ত ফুলগাজীবাসী ও মরহুমের পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা প্রকাশ করেন।প্রধানমন্ত্রী এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার নিশ্চিত করতে তার প্রতিশ্র“তি পূনর্ব্যক্ত করেন।

অন্যদিকে, ফেনীর ফুলগাজী উপজেলা  চেয়ারম্যানকে গাড়িসহ পুড়িয়ে হত্যার পর শহররের পরিস্থিতি স্থিতিশীল রাখতে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)  মোতায়েন করেছে  জেলা প্রশাসন।মঙ্গলবার দুপুর একটা  থেকে বিজিবি সদস্যরা শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে টহল দিচ্ছে।

ফেনী জেলা প্রশাসক হুমায়ুন কবির  খোন্দকার বিজিবি মোতায়েনের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, শহরের সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখেতে বিজিবি  মোতায়েন করা হয়েছে।
1
ফেনী বিজিবি-৪ এর পরিচালক লে. কর্নেল মাহমুদুন্নবী জানান, জেলা প্রশাসনের অনুরোধে ৪ প্লাটুন বিজিবি সদস্য দেওয়া হয়েছে।মঙ্গলবার সকাল ১১টার দিকে ফুলগাজী উপজেলা  চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি একরামুল হক একরামকে নিজ ব্যবহৃত মাইক্রোবাসসহ পুড়িয়ে হত্যা করেছে দূর্বত্তরা।

প্রতক্ষদশী ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার সকালে ফেনী শহরে নিজ বাসা থেকে প্রাইভেট কারে করে উপজেলা পরিষদে একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে যাচ্ছিলেন তিনি। এসময় তার সাথে ছিলেন সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মঈনুদ্দিন সামু, ব্যবসায়ী অংশীদার হোসেন,  দৈনিক ফেনী প্রতিদিনের নির্বাহী সম্পাদক মহিবুল্লাহ ফরহাদ ও গাড়ি চালক মামুন। সকাল পৌনে ১১টার দিকে গাড়িটি বিলাসী সিনেমা হলের সামনে পৌঁছালে একটি ব্যাটারি চালিত অটোরিক্সা তাদের গাড়ির সামনে আসে।

তারা অটোরিক্সাটিকে চাপা দিয়ে সামনে চলে যায়। এসময় ওই অটোরিক্সা থেকে তাদের লক্ষ্য করে বোমা বিস্ফোরণ ও গুলি ছুঁড়তে থাকে। দুর্বৃত্তরা গাড়ির সামনে এসে একরামুল হককে কুপিয়ে জখম করে বুকে গুলি করে। এসময় গাড়িতে থাকা অন্যরা আশপাশে ছুটে যায়। দুর্বৃত্তরা একরামের গায়ে আগুন লাগিয়ে দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়।এ ঘটনায় গুরুতর আহত ব্যবসায়ী অংশীদার হোসেন ও গাড়ি চালক মামুনকে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। বাকি দু’জনকে ফেনী সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ ঘটনায় শহরে আতঙ্ক ও উত্তেজনা বিরাজ করছে।ফেনী মডেল থানার ওসি মাহাবুব মোর্শেদ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

ফুলগাজী উপজেলা চেয়ারম্যান একরামুল হক একরামেকে পুড়িয়ে হত্যার প্রতিবাদে ফেনী শহরের মহিপাল অংশে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করে স্থানীয় আওয়ামীলীগ,যুবলীগ এবং ছাত্রলীগ  নেতাকর্মীরা।মঙ্গলবার দুপুরে একটি বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে ওই মহাসড়কে অবস্থান  নেয় বিক্ষোভকারীরা। এসময় কিছু গাড়ি ভাঙচুর করে বিক্ষুব্ধরা।

এর আগে এছাড়া শহরের ট্রাংক  রোডে এলাকায়  জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুর রহমান বিকমের  নেতৃত্বে একটি বিক্ষোভ মিছিল  বের করে।এতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের উভয়পাশে কয়েক কিলোমিটার যানজটের সৃষ্টি হয়। সকালে একরাম  চেয়ারম্যানকে হত্যার প্রতিবাদে তার সমর্থকরা শহরের একাধিক স্থানে রাস্তায় টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেছে।
ফেনী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কালাম আজাদ জানান, বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে যাওয়ায় চলাচল স্বাভাবিক হয়েছে।ঘটনাস্থলে র‌্যাব  মোতায়েন রয়েছে। এছাড়াও শহরের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে বিজিবির ৪ প্লাটুন সদস্য মোতায়েন রয়েছে।মঙ্গলবার সকাল ১১টার দিকে ফুলগাজী উপজেলা  চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি একরামুল হক একরামকে নিজের ব্যবহৃত মাইক্রোবাসসহ পুড়িয়ে ও গুলি করে হত্যা করেছে দূবৃর্ত্তরা।

মঙ্গলবার সকাল ১১টার দিকে  জেলা শহরের একাডেমি এলাকায় বিলাসী  প্রেক্ষাগৃহের সামনে নিহত একরাম উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতিও ছিলেন।

একরামের সঙ্গে গাড়িতে থাকা এক সাংবাদিকসহ তিনজন আহত হয়েছেন বলে পুলিশ জানিয়েছে। তাদের দুজনের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় চট্টগ্রাম  মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।এই হত্যাকাণ্ডের পর  জেলা শহরের থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে, বন্ধ হয়ে  যায় শহরের  ভেতরে সব ধরনের গাড়ি চলাচল। বিক্ষোভ মিছিল করেছে জেলা আওয়ামী লীগ, কয়েকটি গাড়িও ভাংচুর করে।একরাম হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে ফুলগাজীতে তার সমর্থকদের অবরোধে বন্ধ হয়ে যায় জেলার সঙ্গে পরশুরাম উপজেলার সড়ক  যোগাযোগ বন্ধ যায়।আওয়ামী লীগ  নেতারা জানান, একরাম সকালে শহরের মাস্টারপাড়ায় নিজের বাসা  থেকে নিজের গাড়ি নিয়ে ফুলগাজীর উদ্দেশে রওনা দিয়েছিলেন।

একাডেমি এলাকার বিলাসী সিনেমা হলের সামনে  পৌঁছলে একদল দুর্বৃত্ত একটি ভ্যান দিয়ে একরামের গাড়িটি আটকে  ফেলে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়।হামলাকারীরা কয়েকটি হাতবোমার বিস্ফোরণ ঘটালে ওই এলাকায় মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এরপর হামলাকারীরা একরামকে লক্ষ্য করে গুলি চালানোর পর গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয় বলে পপ্র্যক্ষদর্শীরা জানায়।

গাড়িতে আগুন  দেয়ার আগে সম্বু  চেয়ারম্যান, ফরহাদ ও গাড়িচালককে  বের করে এনে পিটিয়ে ও কুপিয়ে আহত করা হয়।এরপর গাড়িতে  পেট্রোল দিয়ে আগুন ধরিয়ে হামলাকারীরা চলে যায়। ফেনীর সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি-সার্কেল) সামছুল আলম সরকার সাংবাদিকদের বলেন, হামলার খবর  পেয়েই তারা ঘটনাস্থলে যান।  সেখানে গিয়ে গাড়ির ভেতরে একরামের অগ্নিদগ্ধ লাশ পাওয়া যায়। এর মধ্যে দমকল বাহিনী এসে আগুন নেভায়।

ঘটনাস্থলে গিয়ে  দেখা যায়,একরামের হলুদ রঙের প্রাইভেট কারটি পুড়ে গেছে, তার লাশ পড়ে আছে গাড়ির দরজার পাশে। লাশটি পুড়ে এতটাই বিকৃত হয়েছে যে  চেনার জো নেই। পুলিশ একরামের লাশটি গাড়ি  থেকে বের করে আনার পর ময়নাতদন্তের জন্য ফেনী সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠায়।

একরাম হত্যাকাণ্ডের খবরে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা ঘটনাস্থলে এসে কয়েকটি গাড়ি ও  দোকান ভাংচুর করে। এরপর শহরে গাড়ি চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। জেলা আওয়ামী লীগ শহরে বিক্ষোভ মিছিল করে। এর মধ্যে একদল  নেতা-কর্মী দুপুর ৩টার দিকে মহিপালে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করে। পরে তাদের সরিয়ে দেয় পুলিশ।এদিকে একরাম সমর্থকরা ফুলগাজীতে ফেনী-পরশুরাম আঞ্চলিক সড়কে গাছের গুঁড়ি  ফেলে অবরোধ  করে রাখে বলে স্থানীয় সাংবাদিকরা জানিয়েছে।