1দৈনিক বার্তাঃ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তাঁর পূর্বসূরিদের তুলনায় সবথেকে বেশি নিরাপত্তা পেতে চলেছেন নরেন্দ্র মোদী।

জঙ্গি হামলার আশঙ্কায় নতুন প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা এসপিজি (স্পেশ্যাল প্রোটেকশন গ্রুপ) কম্যান্ডোর সংখ্যা দ্বিগুণ করার কথা ভাবা হচ্ছে। এত দিন গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রীর নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিল সে রাজ্যের পুলিশ এবং এনএসজি। প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর নিয়মানুযায়ী মোদীর নিরাপত্তার ভার যাবে এসপিজি-র হাতে। কম্যান্ডোর সংখ্যা বাড়ানোর পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রীর কনভয়ের নিরাপত্তাও বাড়ানো হচ্ছে। সব মিলিয়ে নরসিংহ রাও, অটলবিহারী বাজপেয়ী বা মনমোহন সিংহের জন্য যে নিরাপত্তা ছিল, তার চেয়েও অনেক আঁটোসাঁটো নিরাপত্তার ব্যবস্থা হচ্ছে মোদীর জন্য।
ভোটের প্রচারের সময়ই মোদীর পটনার জনসভায় বিস্ফোরণ ঘটিয়েছিল ইন্ডিয়ান মুজাহিদিন। লস্কর-ই-তইবা থেকে শুরু করে সমস্ত পাক জঙ্গি সংগঠন ও খলিস্তানি সন্ত্রাসবাদীদের নিশানায় রয়েছেন তিনি। এমনকী তেহরিক-ই-তালিবানের সাহায্যে সিমি-ও মোদীর উপরে হামলা চালাতে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে। বস্তুত, গোয়েন্দা রিপোর্টই বলছে যে, মনমোহনের চেয়ে মোদীর উপরে হামলার আশঙ্কা অনেক বেশি। কাজেই একেবারে ঢেলে সাজা হচ্ছে তাঁর নিরাপত্তা ব্যবস্থা। গোয়েন্দা সংস্থার কর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন এসপিজি-র প্রধান কে দুর্গা প্রসাদ। এসপিজি-র বাছাই করা ৫০০ জন জওয়ানকে মোদীর নিরাপত্তায় নিয়োগ করার কথা ভাবা হচ্ছে। আগামী ২৬ মে শপথগ্রহণের আগের দিন থেকেই তাঁরা আনুষ্ঠানিক ভাবে দায়িত্ব নেবেন।
এসপিজি-র ‘ব্লু বুক’ অনুযায়ী, প্রধানমন্ত্রীর শরীরের একেবারে কাছে থাকেন ৮ থেকে ১০ জন কম্যান্ডো। নিরাপত্তার এই প্রথম বলয় তথা ‘রিং রাউন্ড টিম’-এর এসপিজি কম্যান্ডোদের পরনে থাকে স্যুট বা সাফারি স্যুট। হঠাত্‌ গুলি চললে বা হামলা হলে এঁরা প্রধানমন্ত্রীকে ঘিরে দাঁড়িয়ে পড়েন, যাতে প্রধানমন্ত্রীকে লক্ষ করে ছোড়া গুলি তাঁদের শরীরে লাগে। তাই স্যুটের নীচে এঁরা পরে থাকেন বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট। অত্যাধুনিক আগ্নেয়াস্ত্রগুলি প্রায়শই দেখা যায় হাতে। মোদীর জন্য এই রিং রাউন্ড টিমে কম্যান্ডোর সংখ্যা দ্বিগুণ করার কথা ভাবা হচ্ছে। এই টিমের পরে এনএসজি-র দ্বিতীয় ও তৃতীয় সুরক্ষা বলয়ে থাকা কম্যান্ডোরা স্যুট পরেন না। তাঁরা থাকেন পুরোদস্তুর সামরিক পোশাকে। হাতে সর্বদা অস্ত্র। মোদীর জন্য এই দুই বলয়েও কম্যান্ডোর সংখ্যা বাড়ানো হবে।11
গোয়েন্দা সূত্রের খবর, নতুন প্রধানমন্ত্রীর কনভয়ের নিরাপত্তাও বাড়ানোর কথা ভাবা হচ্ছে। এত দিন প্রধানমন্ত্রীর কনভয়ে অন্তত আটটি গাড়ি থাকত। সামনে থাকত একটি জ্যামার লাগানো টাটা সাফারি এবং সব শেষে মার্সিডিজ অ্যাম্বুল্যান্স। কালো রঙের বর্ম-আচ্ছাদিত বিএমডব্লিউ-৭ সিরিজের গাড়ি প্রধানমন্ত্রীর জন্য নির্দিষ্ট থাকত। ক্ষেপণাস্ত্র বা বোমার হামলাও এড়িয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে ওই গাড়িতে। রয়েছে গ্যাস-নিরোধক চেম্বার। এমন তেলের ট্যাঙ্ক থাকে ওই গাড়িতে, যা কোনও ভাবেই ফেটে গিয়ে অগ্নিকাণ্ডের আশঙ্কা নেই। প্রধানমন্ত্রীর গাড়ি ঘিরে থাকে বিএমডব্লিউ-র আরও পাঁচটি গাড়ি, যাতে এসপিজি কম্যান্ডোরা থাকেন। এর মধ্যে বর্ম-আচ্ছাদিত একটি ‘ডামি’ গাড়িও থাকে। প্রধানমন্ত্রীর গাড়িতে হামলা হলে তাঁকে ওই গাড়িতে তুলে দেওয়া হয়। জঙ্গিদের বিভ্রান্ত করতেও এটি কাজে লাগে। মোদী জমানায় প্রধানমন্ত্রীর কনভয়ে ডামি গাড়ির সংখ্যা আরও বাড়ানোর কথা ভাবা হচ্ছে। বাড়ানো হতে পারে অন্যান্য গাড়ির সংখ্যাও।
প্রধানমন্ত্রী, প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ও তাঁদের পরিবারের নিরাপত্তার দায়িত্ব থাকে এসপিজি-র কাঁধে। এত দিন মনমোহন সিংহ, তাঁর স্ত্রী-কন্যা, সনিয়া ও রাহুল গাঁধী, প্রিয়ঙ্কা বঢরা, বাজপেয়ী এসপিজি-র নিরাপত্তা পেতেন। সেই হিসেবে মোদীর স্ত্রী যশোদাবেন এবং মা হীরাবেন-এরও এসপিজি-র নিরাপত্তা পাওয়ার কথা। গোয়েন্দা সূত্রের খবর, মোদীর স্ত্রী বানসকাঁথা গ্রামে থাকেন। কোনও প্রধানমন্ত্রীর স্ত্রীর জন্য ওই এলাকা নিরাপদ নয়। তাই তাঁকে জেলা সদর বা গাঁধীনগরে সরিয়ে আনতে হবে। মোদী শপথ নেওয়ার পর এসপিজি-র কর্তারা এ নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলবেন। গুজরাত সরকারকে তাঁর জন্য একটি বাসভবনের বন্দোবস্ত করতে বলা হবে। মোদীর মায়ের ক্ষেত্রে অবশ্য এই সমস্যা নেই। কারণ তিনি গাঁধীনগরেই থাকেন। মোদীর স্ত্রী বা মা এসপিজি-র নিরাপত্তা নিতে রাজি না হলে গুজরাত পুলিশকেই ব্যবস্থা করতে বলা হবে।
এনএসজি ও গুজরাত পুলিশের ৪৫ জন কম্যান্ডো এত দিন মোদীর নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিলেন। তাঁদের মধ্যে গুজরাত পুলিশের কয়েক জনকে এসপিজি-তে নিয়ে আসা হতে পারে। গুজরাতে কী ভাবে মোদীর নিরাপত্তার বন্দোবস্ত হতো, তা বোঝার জন্য গোয়েন্দাদের একটি দল ইতিমধ্যেই গাঁধীনগরে পৌঁছে গিয়েছে।