1দৈনিক বার্তাঃ আগামী বাজেটে ঘাটতি থাকছে ৬৬ হাজার ৫০০কোটি টাকা। বিশাল অঙ্কের এ ঘাটতি মেটাতে সরকার নির্ভর করছে ব্যাংক ঋণ ও  বৈদেশিক সহায়তার ওপর বলে জানান বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহ উদ্দিন আহমদ।

ব্যাংক ঋণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করছে প্রায় ৩১ হাজার  কোটি টাকা আর  বৈদেশিক সহায়তা বাবদ পাওয়া আশা করছে ২৭ হাজার ৭০০  কোটি টাকা এবং বাকী টাকা আসবে সঞ্চয়পত্র বিক্রয়   থেকে বলেও জানান সাবেক এ গভর্নর।

তিনি আরো বলেন, বিশাল অঙ্কের ব্যাংক ঋণের ফলে এদিকে  যেমন মুল্যস্ফীতি বাড়ার আশঙ্কা থাকছে, তেমনি বাধাগ্রস্থ হতে পারে  বেসরকারি খাতের বিনিয়োগও। ব্যাংক ঋণের ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে, সহজ সর্তে  বৈদেশিক ঋণের দিকে মনোযোগী হওয়ার  দেন সালেহ উদ্দিন।

২ লাখ ৫০ হাজার  কোটি টাকার বাজেট। জাতীয় রাজস্ব  বোর্ডকে এক লাখ ৪৯ হাজার  কোটি টাকা রাজস্ব আদায়ের টার্গেট  দেয়া হয়েছে। কর বহির্ভূত বিভিন্ন খাতে আরও প্রায় ৩৫ হাজার  কোটি টাকা রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে সরকার।

তবে এরপরেও আয়-ব্যয়ের হিসেবে ঘাটতি থেকে যাচ্ছে সাড়ে ৬৬ হাজার  কোটি টাকার। সরকার আশা করছে এর মধ্যে ৫৫%  মেটানো হবে স্থানীয় মুদ্রায়, স্থানীয় উৎস থেকে।

সিডিপির নির্বাহী পরিচালক ড.মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, অভ্যন্তরীণ অর্থবাজারে এত বড় অঙ্কের চাপের ফলে হিতে বিপরীত হতে পারে।

মোস্তাফিজুর রহমানের মতে ব্যাংকগুলোর কাছে প্রায় ১ লাখ ৩৫ হাজার কোটি টাকা অলস পরে থাকলেও কমনি সুদের হার। তবে বেসরকারি খাত চাঙ্গা হলে, সরকারের ঋণের কারণে অর্থের অভাবে বিনিয়োগ বাধাগ্রস্থ হবে। এতে কর্মসংস্থান ব্যহত হওয়ার পাশাপাশি প্রবৃদ্ধি কমে যাওয়ার আশঙ্কাও করছেন তিনি।

এ অবস্থায় ঘাটতি মেটাতে করের আওতা বাড়ানোর পাশাপাশি প্রকল্পের স্বচ্ছতা ও জবাবদীহিতা নিশ্চিত করার ওপর জোড় দিচ্ছেন তারা। প্রয়োজনে  বৈদেশিক সহায়তার দিকে দৃষ্টি দেয়াই ভালো বলে মনে করেন এ বিশেষজ্ঞরা।

২০১৪-১৫ নতুন অর্থ বছরে ৮৬ হাজার  কোটি টাকার প্রস্তাবিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) গ্রহণ করেছে সরকার। এর মধ্যে পদ্মা  সেতুর জন্য ৮ হাজার একশ’  কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।মূল এডিপি’র মধ্যে স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা খাতের ৫ হাজার ৬৮৫  কোটি ৪৮ লাখ টাকা  যোগ করা হয়েছে।

নতুন এডিপিতে পদ্মা  সেতু, বিদ্যুৎ খাত, পরিবহন, শিক্ষা ও পল্লী উন্নয়নকে অধিক গুরুত্ব  দেওয়া হয়েছে। পদ্মা  সেতুতে বরাদ্দ রাখা ৮ হাজার একশ’  কোটি টাকা। এর মধ্যে স্থানীয় মুদ্রা সাড়ে ৬ হাজার  কোটি টাকা এবং প্রকল্প সাহায্য  থেকে ১ হাজার ছয়শ’  কোটি টাকা  মেটানো হবে। পদ্মাসেতুসহ এ বিভাগে  মোট বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৮ হাজার ৭১৩  কোটি টাকা।মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি)  বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়।

অনুমোদিত এডিপির মধ্যে নিজস্ব তহবিল  থেকে ৫২ হাজার ৬১৫  কোটি টাকা যোগান দেয়া হবে। আর প্রকল্প সাহায্য  থেকে আসবে ২৭ হাজার ৭০০ কোটি টাকা।শেরেবাংলা নগরে এনইসি সম্মেলন  কেন্দ্রে বৈঠক  শেষে পরিকল্পনা মন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এসব তথ্য জানান।এডিপিতে  দেশের সবচেয়ে বড় অবকাঠামো প্রকল্প পদ্মা  সেতু নির্মাণের জন্য ৮ হাজার ১০০  কোটি টাকা রাখা হয়েছে।

চলতি ২০১৩-১৪ অর্থবছরে মূল এডিপির আকার ছিল ৬৫ হাজার ৮৭২ কোটি টাকা। পরে এপ্রিল মাসে তা সংশোধন করে ৬০ হাজার  কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়। বৈঠক  শেষে পরিকল্পনা মন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এসব তথ্য জানান। তিনি জানান,  সেতু বিভাগে ৮ হাজার ৭১৩  কোটি টাকার মধ্যে প্রকল্প সাহায্য থেকে ১ হাজার ছয়শ’  কোটি টাকা এবং স্থানীয় মুদ্রা  থেকে ৭ হাজার ১১৩ কোটি টাকা মেটানো হবে।তিনি জানান, মূল এডিপি’র আকার ছিল ৭৯ হাজার ৩১  কোটি টাকা। এর সঙ্গে নতুন অর্থবছরে প্রধানমন্ত্রী’র সম্মতিতে ১ হাজার ২৮৪  কোটি টাকা বৃদ্ধি করা হয়েছে।

এডিপি প্রসঙ্গে কামাল জানান, বাড়তি ১ হাজার ২৮৪ কোটি টাকা স্থানীয় মুদ্রা থেকে মেটানো হবে। পরে যেসব খাতে অধিক বরাদ্দের প্রয়োজন সেখানে বরাদ্দ  দেওয়া হবে। তবে এখন ঠিক করা হয়নি অতিরিক্ত টাকা কোথায় কত বরাদ্দ  দেওয়া হবে।

মুস্তফা কামাল জানান, পদ্মা  সেতু বিভাগে সাড়ে ৬ হাজার  কোটি স্থানীয় মুদ্রা খরচ করা হবে এবং আগামী বছর পদ্মা সেতুর ফিজিক্যাল ওয়ার্ক শুরু হবে। আমরা পদ্মা  সেতু প্রকল্প বাস্তবায়ন করে  গোটা জাতিকে  দেখাতে চাই।

নতুন এডিপিতে ১৭টি সেক্টর এবং উন্নয়ন সহায়তা খাতে  মোট বরাদ্দ দাঁড়াল ৮০ হাজার ৩১৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে প্রকল্প সাহায্য ২৭ হাজার সাতশ’  কোটি টাকা এবং স্থানীয় মুদ্রা ৫২ হাজার ৬১৫  কোটি টাকা।

কামাল বলেন, সেক্টর ভিত্তিক মোট ১৭টি সেক্টরে নতুন এডিপি’তে বরাদ্দ থাকছে ৭৬ হাজার ৩  কোটি ৯৬ লাখ টাকা। এর মধ্যে প্রকল্প সাহায্য ২৭ হাজার ২১৬  কোটি ৯৬ লাখ টাকা এবং স্থানীয় মুদ্রা ৪৮ হাজার ৭৮৭ কোটি টাকা।

নতুন অর্থ বছরে  সেক্টর ভিত্তিক বরাদ্দ  বেশি থাকছে পরিবহন খাতে প্রায় ১৮ হাজার ৯৮ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। এর মধ্যে প্রকল্প সাহায় ৪ হাজার ২৭৪ কোটি ২৪ লাখ টাকা এবং স্থানীয় মুদ্রা ১৩ হাজার ৮২৪  কোটি ১৪ লাখ টাকা।এছাড়া  যোগাযোগ খাতে বরাদ্দ থাকছে ৭৭০  কোটি ৭৭ লাখ টাকা। এর মধ্যে স্থানীয় মুদ্রা ৩৬১ কোটি ১৭ লাখ এবং প্রকল্প সাহায্য ৪০৯  কোটি ৬০ লাখ।

এছাড়া নতুন অর্থবছরে কৃষি খাতে ৫ হাজার ৫৭৫  কোটি, পল্লী উন্নয়ন খাতে ৬ হাজার ৮৭১ কোটি, পানি সম্পদ খাতে ২ হাজার ৪৫৩  কোটি, শিল্প খাতে ১ হাজার ৫৩০ কোটি, বিদ্যুৎ খাতে ৯ হাজার ২৭৭  কোটি,  তেল-গ্যাস  ও প্রাকৃতিক সম্পদ খাতে ২ হাজার ২২২  কোটি,  সেতু খাতে ৮ হাজার ৭১৩  কোটি,  ভৌত পরিকল্পনা, পানি সরবরাহ ও গৃহায়ন খাতে ৭ হাজার ৮৭৬  কোটি, শিক্ষা ও ধর্ম খাতে ৯ হাজার ৪০৩  কোটি, ক্রীড়া ও সংস্কৃতি খাতে ১৮২  কোটি, স্বাস্থ্য খাতে ৪ হাজার ৯৪৩ কোটি, গণসংযোগ খাতে ১১৮  কোটি, সমাজকল্যাণ খাতে ৫৭৬ কোটি, জন প্রশাসন ২ হাজার ৬৩৮  কোটি, বিজ্ঞান, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতে ৩ হাজার ১২১ কোটি এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান খাতে ৩৪২  কোটি টাকা বরাদ্দ থাকছে।এছাড়া ১০টি উন্নয়ন সহায়তা খাতে  মোট বরাদ্দ ৩ হাজার ২৭  কোটি টাকা। এর মধ্যে প্রকল্প সাহায্য ৪৮৩ কোটি টাকা এবং স্থানীয় মুদ্রা ২ হাজার ৫৪৪ কোটি টাকা।