1টিপু সুলতান/দৈনিক বার্তাঃ  দিন যত পার হচ্ছে কৃষিতে বাড়ছে উৎপাদন ব্যয়। কিন্ত সে অনুপাতে বাড়ছে না উৎপাদিত ফসলের মূল্য। গত দুটি মৌসুমে সৌর বিদ্যুতের প্লান্টের মাধ্যমে ক্ষেতে পানি সেচের ব্যবস্থা হওয়ায় উৎপাদন ব্যয় অনেকটা কমাতে পেরেছেন তাদের গ্রামের কৃষকেরা। তাছাড়াও এ পদ্ধতিতে চাষাবাদ অনেকটা ঝামেলামুক্ত। ফলে এলাকার গ্রামের কৃষকদের মাঝেও সৌর পাম্পের চাহিদা বেড়েছে ব্যাপক হারে। কথা হয় ঝিনাইদহ কালীগঞ্জে উপজেলার রামচন্দ্রপুর গ্রামের কৃষকদেও সাথে। একাধিক কৃষক জানান,আগের দিনের মত ফসল চাষ এখন শুধুমাত্র বৃষ্টির পানির উপরই নির্ভরশীল নেই। সেচের প্রয়োজনে প্রতিটি মাঠে ব্যাঙের ছাতার মত স্থাপন করা হয়েছে ডিজেল চালিত গভীর নলকুপ। কিন্ত এতে ব্যয় অনেক বেশি। এ বছর প্রতিবিঘা বোরো ক্ষেতে স্যালোমেশিনে চাষ করতে সেচ খরচ  পড়েছে ৫ থেকে সাড়ে ৫ হাজার টাকা। অপেক্ষাকৃত উচু মাঠের জমিগুলোতে সেচ বাবদ খরচের পরিমাণ আরো বেশি। সেক্ষেত্রে সৌর বিদ্যুতের মাধ্যমে প্রতি বিঘায় খরচ হয়েছে মাত্র ১৫,শ টাকা। ফলে সীমাবদ্ধতা থাকলেও আশ পাশের গ্রামের কৃষকেরাও চাচ্ছেন প্রত্যেক মাঠে এ সৌর প্লান্ট স্থাপন করতে। সরেজমিনে গেলে দেখা যায়, কালীগঞ্জ উপজেলার রামচন্দ্রপুর গ্রামের কৃষক আবু জাফর মুন্সির ১০ শতক জমির উপর নির্মাণ করা হয়েছে   একটি সৌরপ্লান্ট। যেখান থেকে এ বছর ৩০ বিঘা জমিতে বোরো ধানের চাষ করা হয়েছিল। আর সারাবছর আবাসিক সৌর বিদ্যুতের সুবিধা পাচ্ছে এ গ্রামের ১৫ টি পরিবার।
কৃষকেরা জানান,পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড একটি প্রকল্পের আওতায় জলবায়ু পরিবর্তন ও ট্রাস্ট ফান্ডের ৪৩ লাখ ৯২ হাজার টাকা অর্থায়নে ২০১২ সালে তাদের গ্রামের মাঠে এ সৌরপ্লান্টটি স্থাপন করেন। মেসার্স রহিম আফরোজ রিনিউএ্যাবল এনার্জি লিমিটেডের  নির্মাণ করা মোটরের ৫ হর্সপাওয়ার ডিসি সার্ব মার্জএ্যাবল ও সৌরপ্লান্টের ৬.৭২ কিলোওয়াট পিক ক্ষমতা সম্পন্ন। এ সৌর পাম্পের    প্রতিদিন ২ লাখ লিটার পানি উত্তোলনের ক্ষমতা রয়েছে। যে প্লান্টের সেচের আওতায় গত ২ বছর ধরে ঝামেলামুক্ত ভাবেই চাষ করে খরচ সাশ্রয় করছেন। ওই গ্রামের কৃষক আবু জাফর মুন্সি জানান, তার নিজের জমিতে স্থাপন করা সৌরপ্লান্টের কারনে এ মাঠের কৃষকদের খরচ সাশ্রয় হচ্ছে। ডিজেল চালিত স্যালোমেশিনে প্রতি বিঘায় সেচ দিতে যে টাকা খরচ হয়। সে তুলনায় সৌর বিদ্যুতে খরচ অনেক কম। তিনি আরো জানান, সম্প্রতি শেষ হওয়া বোরো চাষে আশপাশের মাঠে সেচ খরচ হয়েছে প্রতি বিঘায় প্রায় সাড়ে ৫ হাজার টাকা। সেক্ষেত্রে এ সৌরপ্লান্টে ৩০ বিঘা চাষ করে বিঘা প্রতি খরচ হয়েছে মাত্র পনের’শ টাকা। এর মধ্যে সেচ কাজ পরিচালনাকারী ও সার্বিক তত্তাবধানকারীর বেতনও রয়েছে। অর্থাৎ সারা বছরের জন্য পল্লী বিদ্যুতের অফিসে জমা দিতে হয়েছে সব কিছু মিলে মাত্র ৬ হাজার টাকা। আর প্রতি মাসে ১৫ টি আবাসিক সংযোগ থেকে তো মোট পনের’শ টাকা আসছেই।
কৃষক ফুরকান আলী জানান,ডিজেল চালিত গভীর নলকুপে অনেক ঝামেলা। বিগত কয়েক বছর তেমন একটা বৃষ্টিপাত না হওয়ায় গ্রীষ্মের শুরু থেকেই পানির স্তর দ্রুতই নীচে নেমে যায়। যে কারনে নলকুপগুলোতে ঠিকমত পানি পাওয়া যায় না। অনেক সময় পানির স্তর পেতে কৃষকদেরকে ১০/১২ ফুট মাটি খুড়ে স্যালোমেশিন বসিয়েও কাজে আসে না। বার বার বিকল হয়ে যায় মেশিনগুলো। আবার বাজার থেকে জ্বালানী তেল আনতে শ্রমের অপচয় ঘটে সাংঘাতিকভাবে। সেক্ষেত্রে সৌরপ্লান্টে চাষ খানিকটা ব্যতিক্রম । ছোটখাটো কোন সমস্যা দেখা দিলে বিদ্যুতের কর্মকর্তারা এসে দ্রুত ব্যবস্থা নেন। যে কারনে কৃষকরা থাকেন একেবারেই ঝামেলামুক্ত। কৃষকেরা মনে করছেন ব্যয়বহুল বিদ্যুৎ খাতে টাকা সাশ্রয় করতে হলে সরকারীভাবে সৌরশক্তিকে কাজে লাগাতে হবে। সরকারী উদ্যোগে মাঠে মাঠে স্থাপন করতে হবে সৌরপ্লান্টের সেচ পাম্প। এতে উৎপাদন ব্যয় সাশ্রয়ের মাধ্যমে লাভবান হবেন কৃষকরা। পারিয়াট গ্রামের কৃষক আব্দুর রহিম জানান, তিনি এ বছর বিঘাপ্রতি সাড়ে ৫ হাজার টাকার চুক্তিতে স্যালোচালিত মেশিনের আওতায় তিনি নিজের ও বর্গা নিয়ে মোট ৬ বিঘা জমিতে বোরো ধানের চাষ করেছিলেন। পানির স্তর নীচে নেমে যাওয়ায় ভালোভাবে শেষ মুহুর্তের সেচ দিতে পারেননি। ফলে আশানুরুপ ফলণ পাননি। অথচ তাদের পাশের রামচন্দ্রপুর গ্রামে স্থাপিত সৌরপাম্পের আওতায় কম খরচে ভাল ফলন পেয়েছেন। যে কারনে তাদেও গ্রামসহ আশপাশের সকল গ্রামের কৃষকেরা প্রত্যেকের মাঠে সৌর বিদ্যুতের প্লান্ট স্থাপনের কথা ভাবছেন।
এ ব্যাপারে কালীগঞ্জ পল্লী বিদ্যুতের আবাসিক প্রকৌশলী তোফাজ্জেল হোসেন জানান, উপজেলার রামচন্দ্রপুর গ্রামের কৃষককদের কল্যাণে স্থাপিত সৌর বিদ্যুতের প্লান্ট কৃষকদের উৎপাদন ব্যয় কমিয়েছে। কেননা সব কৃষক মিলে তাদেরকে বছরে জমা দিচ্ছেন মাত্র ৬ হাজার টাকা। যা ডিজেল চালিত গভীর নলকুপের চেয়ে বিঘা প্রতি খরচ অনেক কম। যে কারনে অন্য গ্রামের কৃষকেরাও চাচ্ছেন পরিবেশ বান্ধব এ সৌর প্লান্টে চাষাবাদ করতে। কৃষকদের দাবির কথা তিনি উপরি কর্মকর্তাদেরকে জানিয়েছেন।