1দৈনিক বার্তাঃ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী শনিবার রাতে (২৪ মে) চারদিনের এক সরকারি সফরে জাপান যাচ্ছেন। তাঁর এই সফরের মধ্য দিয়ে ঢাকা ও টোকিওর দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের নতুন দিগন্তের সূচনা হতে যাচ্ছে।

বাংলাদেশে নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত শিরো সাদোশিমা বুধবার কূটনৈতিক রিপোর্টারদের বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এ সফরের ফলে ঢাকা-টোকিও দ্বি-পাক্ষিক সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় উন্নীত হবে।

বাংলাদেশের বৃহত্তম উন্নয়ন অংশীদার জাপান দারিদ্র্য বিমোচন, ভৌত অবকাঠামো, বিদ্যুৎ উৎপাদন, মানবসম্পদ উন্নয়নের মতো বিভিন্ন খাতে আর্থিক সহযোগিতা প্রদানের মাধ্যমে বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।

কূটনীতিকরা বলেন, এই সফরের ফলে সহযোগিতার সকল ক্ষেত্রে বাংলাদেশ-জাপান সম্পর্ক আরো জোরদার হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রীর দফতর সূত্র জানায়, জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো অ্যাবের আমন্ত্রণে প্রধানমন্ত্রী শনিবার রাতে টোকিওর উদ্দেশ্যে ঢাকা ত্যাগ করছেন।

গত ৫ জানুয়ারির জাতীয় নির্বাচনের মধ্য দিয়ে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর কোন দেশে এটি হবে শেখ হাসিনার প্রথম দ্বি-পাক্ষিক সফর এবং প্রধানমন্ত্রী হিসেবে জাপানে এটি হবে তাঁর তৃতীয় সরকারি সফর। তিনি ১৯৯৭ সালে প্রথম এবং ২০১০ সালে দ্বিতীয়বার জাপান সফর করেন।

প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর সফরসঙ্গীদের বহনকারী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি ভিভিআইপি ফ্লাইট শনিবার মধ্যরাত ১২টায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ছেড়ে যাওয়ার কথা রয়েছে।২৫ মে বেলা ১টায় (জাপান সময়) ফ্লাইটটির টোকিওর হানেদা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছানোর কথা রয়েছে।

টোকিও যাওয়ার পথে প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর সফরসঙ্গীরা হংকং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্রায় দেড় ঘণ্টা যাত্রা বিরতি করবেন।
জাপানে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন এবং জাপানের পররাষ্ট্র বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্েরটাকল প্রধান শিজেউকি হিরোকি বিমানবন্দরে প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানাবেন।

বিমানবন্দরে উষ্ণ অভিনন্দন জানানোর পর শেখ হাসিনাকে মোটর শোভাযাত্রা সহকারে টোকিও’র মোতোয়াকাসাকা মিনান্টোতে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন আকাসাকা প্যালেসে নিয়ে যাওয়া হবে। জাপানের চারদিনের সফরকালে তিনি সেখানেই অব¯’ান করবেন।

প্রিন্ট ক্লোজ উইন্ডো সফরকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাপানের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আগামী ২৬ মে তাঁর কার্যালয়ে শীর্ষ বৈঠকে যোগ দেবেন। পরে দুই প্রধানমন্ত্রী এক যৌথ বিবৃতিতে স্বাক্ষর করবেন এবং এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে অংশ নেবেন।এর আগে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে আকাসাকা প্রাসাদে স্বাগত জানিয়ে গার্ড অব অর্নার প্রদান করা হবে।ওই দিন রাতেই জাপানের প্রধানমন্ত্রীর আমন্ত্রণে শেখ হাসিনা এক নৈশভোজে যোগ দেবেন। ২৬ মে তিনি টোকিও’র ইম্পেরিয়াল প্রাসাদে জাপানের সম্্রাট আকিহিতো’র সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন।

জাপানের উপ-প্রধানমন্ত্রী ও জাপান-বাংলাদেশ সংসদীয় লীগের সভাপতি কারো আসো এবং জাপানের পররাষ্ট্র মন্ত্রী ফুমিও কিশিদা পৃথকভাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন।এছাড়াও ‘বাংলাদেশের বন্ধু’ এবং বাংলাদেশ-জাপান-সংসদীয় লীগের সদস্যগণ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন।

জেটরো সদর দপ্তরে জাপান বাংলাদেশ কমিটি ফর কমার্শিয়াল এ্যান্ড ইকোনোমিক কো-অপারেশন (জেবিসিসিইসি) আয়োজিত এক নির্ধারিত সেমিনারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উপস্থিত থাকবেন।

শেখ হাসিনা জাপানের ওয়াসেদা বিশ্ববিদ্যালয় পরিদর্শনে যাবেন এবং স্বনামধন্য এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে ভাষণ দেবেন। এছাড়া তিনি জাপান প্রেসক্লাবে যাবেন এবং জাপানি সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলবেন।

প্রধানমন্ত্রী হোটেল ওকুরায় প্রবাসী বাঙালীদের উদ্দেশে ভাষণ দেবেন এবং টোকিও কাইকানে জেবেসিসিইসি’র আমন্ত্রণে মধ্যাহ্নভোজে অংশগ্রহণ করবেন।

প্রধানমন্ত্রী জাপানের জাতীয় সম্প্রচার সংস্থা এনএইচকে’কে একটি সাক্ষাৎকার দেবেন। তিনি ২৯ মে দেশে ফিরে আসবেন বলে আশা করা যাচ্ছে।

বাংলাদেশ ও জাপানের মধ্যে বাণিজ্য ব্যবধানে টোকিওর যে আধিপত্য ছিল তা সাম্প্রতিক সময়ে ধীরে ধীরে কমে এসেছে এবং বাংলাদেশের রফতানি বৃদ্ধি পেয়েছে।

দেশ ২০১২-১৩ অর্থবছরে ৭৫০ দশমিক ২৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের পণ্যসামগ্রী রফতানি এবং ১ হাজার ১৬৮ দশমিক ৭০ মার্কিন ডলারের পণ্যসামগ্রী আমদানি করেছে। কিন্তু ২০১১-১২ অর্থবছরে রফতানি ও আমদানির বাণিজ্য বৈষম্য ছিল যথাক্রমে ৬০০ দশমিক ৫৩ মিলিয়ন ও ১ হাজার ৪৫৫ দশমিক ৯০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।বাংলাদেশ ২০১২-১৩ অর্থবছরে জাপানে যে সকল পণ্য রফতানি করেছে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে হিমায়িত খাদ্য, কৃষি পণ্য, চা, রাসায়নিক পণ্য, চামড়া, কাঁচা পাট, পাটজাত পণ্য, নিটওয়্যার ও তৈরি পোশাক।

বাংলাদেশ জাপান থেকে যে সকল পণ্য আমদানী করে থাকে তার মধ্যে উল্লেখ যোগ্য হচ্ছে- উদ্ভিদজাত পণ্য, পশু বা উদ্ভিদজাত চর্বি ও তেল ছিল এবং এ জাতীয় পণ্য, প্রস্তুতকৃত ভোজ্য চর্বি, পশু বা উদ্ভিদজাত ওয়েক্স, প্রস্তুতকৃত খাদ্য সামগ্রী, পানীয়, ¯প্রীট ও ভিনেগার, তামাক ও শিল্পজাত তামাক পণ্য, খনিজ পণ্য, রাসায়নিক পণ্য বা এ জাতীয় শিল্প পণ্য, প্লাস্টিক ও এ জাতীয় পণ্য, রাবার ও এ জাতীয় পণ্য, ত্বক পরিচর্যার কাঁচা পণ্য, চামড়া, ভ্রমণ সামগ্রী, হাতব্যাগ ও অনুরূপ সামগ্রী, কাঠ ও কাঠ জাতীয় পণ্য, কাঠ কাঠকয়লা, কর্ক এবং কর্ক জাতীয় পণ্য, বেণী উপকরণ, ঝুড়ি, কাঠের সজ্জা, বস্ত্র ও টেক্সটাইল সামগ্রী, জুতা, পাগড়ি, ছাতা, হাঁটার লাঠি এবং সীট লাঠি ইত্যাদি।