1
File Photo

দৈনিক বার্তাঃ  সবুজের  চিহ্নটুকু পর্যন্ত নেই। চারদিকে সব যেন বিবর্ণ হয়ে যাচ্ছে। মাইলের পর মাইল জুড়ে কৃষি জমিতে সবুজ ঘাঁসের অস্তিত্ব পর্যন্ত নেই। এ সময়, বৈশাখ-জৈষ্ঠ মাসে সবুজ ঘাঁসের আস্তরণে ঢেকে যাওয়ার কথা এসব কৃষি জমি। কিন্তু সব যেন ধুসর হয়ে আছে। একটি ফসল আমন মৌসুমে ধান আবাদ নিয়ে শঙ্কায় পড়েছে কৃষক। বাড়তি কোন ফসল ফলানো তো দুরের কথা। গবাদিপশুকে খাওয়ানোর মতো সবুজ ঘাঁসের কণাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। চিরচেনা কৃষিজমির চেহারা এভাবে পাল্টে যাচ্ছে। জলবায়ুর পরিবর্তনজনিত কারণে নদী-সাগরে লোনা পানির প্রবাহ মারাত্মকভাবে বেড়ে গেছে। যে পানির প্রবাহ বইছে স্লুইস সংযুক্ত অভ্যন্তরীণ খালেও। কখনও খাল উপচে আবাদি জমিতে।

আর তাতেই সর্বনাশ কৃষিক্ষেত্র। কলাপাড়ার গোটা উপকূলীয় জনপদের অন্তত চারটি ইউনিয়নে কৃষিজমিতে এমন বিপর্যয় শুরু হয়েছে। কৃষকের ইচ্ছা থাকলেও পরিবর্তিত পরিস্থিতির শিকার থেকে জমি রক্ষা করতে পারছে না। কারণ প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের চেয়ে বেশি সর্বনাশ করছে এক শ্রেণীর প্রভাবশালী লোভী মানুষ। তারা মাছ ধরার জন্য স্লুইসগেট খুলে লোনা পানিতে ডুবিয়ে দিচ্ছে কৃষি জমি। আর এ কারণে জমির উপরিভাগের পলিরস্তর নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। বিষয়টি কৃষককে উদ্বিগ্ন করে তুলেছে। কিন্তু উপজেলা কৃষিবিভাগ কিংবা উপজেলা প্রশাসন এমনকি ইউনিয়ন পরিষদ কৃষিউৎপাদন ঠিক রাখতে লোনা পানির প্রবেশ ঠেকাতে প্রয়োজনীয় কোন পদক্ষেপ নিচ্ছে না। ইতোমধ্যে কলাপাড়ার এক দশমাংশ কৃষি জমি একটি মৌসুম ছাড়া অনাবাদি হওয়ার শঙ্কায় পড়েছে।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, মিঠাগঞ্জ ইউনিয়নের আরামগঞ্জ আলীগঞ্জ গ্রামের মাঝের খালে লোনা পানির প্রবাহে খাল উপচে দুইদিকের শতাধিক একর কৃষি জমি ডুবে যায়। লোনা পানিতে প্রায় তিন মাস আগে প্লাবিত হয় এ জমি। শুকনো জমিতে চুষে নেয় লোনা পানি। স্থানীয় অসংখ্য কৃষকের অভিযোগ, সরকারি দলের নাম ব্যবহার করে সেখানকার টুলু ফকির, নাসির ফকিরসহ একটি প্রভাবশালী মহল জবান খাঁর খালটিতে বাঁধ দিয়ে লোনা পানিতে তলিয়ে দেয়। ওই পনি সংযুক্ত কাপালির খালেও প্রবেশ করে। এখন পানি শুকিয়ে গেছে। কিন্তু জমি গেছে বিবর্ণ হয়ে। এভাবে কলাপাড়ার উপকূলের কৃষি জমি অনুর্বর করে দেয়া হচ্ছে। এখন ফেটে চৌচির হয়ে আছে এসব জমি। যেখানে উপরিভাগের দুই থেকে তিন ইঞ্চি লবণাক্ততায় ফুঁসে আছে। চারদিকে এ জমিতে সবুজ ঘাঁসের কোন আস্তরণ নেই। ধুসর, বিবর্ণ জমির এ মাটিতে কখন মিঠা পানিতে প্লাবিত করতে পারবেন- কৃষকের এমন অপেক্ষা। কিন্তু বৃষ্টি না হওয়ায় দীর্ঘ খরার কবলে পড়ে জমির প্রকৃতি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

কৃষকরা জানালেন, মাত্র দু’বছর আগেও তারা এ সময় আউশের আবাদের প্রস্তুতি নিয়েছেন। বৃষ্টি না হলেও বোনা আউশের আবাদ করতেন। কিন্তু এখন তাও পারছেন না। এমনকি ঘাঁস না থাকায় গবাদিপশু পালন করাও সম্ভব হচ্ছে না। কারণ কৃষিজমির উপরিভাগে মাত্রাতিরিক্ত লবণাক্ততা রয়েছে। মিঠাগঞ্জের এ গ্রাম দু’টি ছাড়াও আজিমউদ্দিন, তেগাছিয়া, চরপাড়া, সাফাখালীতে একই অবস্থা কৃষিজমির। ডালবুগঞ্জের রসুলপুর ও পেয়ারপুর গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে একই দৃশ্য। মহিপুরের মোয়াজ্জেমপুর, নিজামপুর, সুধিরপুর, সেরাজপুর গ্রামেও ওই দৃশ্য। ধুলাসারের অধিকাংশ জমির এমনদশা হয়েছে। মাইলের পর মাইলজুড়ে চারটি ইউনিয়নের কৃষি জমির এমনদশা হয়েছে। এজন্য কৃষকরা প্রকৃতিকে যতটুকু দায়ী করছেন, তার চাইতে বেশি দায়ী করছেন স্লুইসগেট নিয়ন্ত্রেণে প্রভাবশালীদের প্রভাবকে। এখন যেন একটি ফসল আমান আবাদেও ঝুঁকির কবলে পড়তে হচ্ছে হাজারো কৃষককে। সচেতন কৃষকরে দাবি, জলবায়ুর পরিবর্তন জনিত বিরুপ প্রভাবের শঙ্কা থেকে কৃষক এবং কৃষিক্ষেত্র রক্ষা করতে না পারলেও অন্তত কৃষিতে মানবসৃষ্ট ক্রমাগত এ বিপর্যয় ঠেকাতে এখনই পদক্ষেপ নেয়া জরুরি প্রয়োজন।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মসিউর রহমান এসব শঙ্কার কথা স্বীকার করেই জানালেন, জলবায়ুর পরিবর্তন জনিত কারণে দীর্ঘ খরার প্রভাবে এমনিতেই জমির উর্বরতা শক্তি কমে যাচ্ছে। কৃষিক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাবের শঙ্কা বাড়ছে। তার উপড়ে প্রভাবশালী মহলের এমন সর্বনাশা কান্ডে জমি লবনাক্ততার কবলে পড়ছে। যাতে এ বছর আউশের আবাদ করতে পারবে না। উল্টো আগামি বছর এসব জমিতে আমনের আবাদও কমে যাবে। এক্ষেত্রে যেসব লোকজন কৃষিক্ষেত্রে বিপর্যয়ের কারণ হয়ে দাড়াচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেয়া জরুরি প্রয়োজন বলেও তিনি মতামত ব্যক্ত করেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, কৃষিক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসাবে খাল দখলদার ও স্লুইস দখলদারদের তালিকা করতে ভূমি প্রশানকে নির্দেশ দেয়া হচ্ছে।