1দৈনিক বার্তাঃ সুপ্রিম  কোর্টে পূর্ব  ঘোষিত কর্মসূচি করতে না  দেওয়ার প্রতিবাদে রোববার সারাদেশে আইনজীবীদের আদালত বর্জন কর্মসূচি  ঘোষণা করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া।

শনিবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে খালেদা জিয়াকে নিয়ে সমাবেশ করে এই কর্মসূচি  ঘোষণা করেন ফোরামের সভাপতি রফিকুল ইসলাম মিয়া। রোববার সকাল ১০টা  থেকে  বেলা ১টা পর্যন্ত সুপ্রিম কোর্টসহ সারাদেশে আদালত বর্জনের পাশাপাশি আরো চার দিনের কর্মসূচিও দিয়েছে বিএনপি সমর্থক আইনজীবীরা।সোমবার সারাদেশে বিক্ষোভ,মঙ্গলবার সারাদেশে মানববন্ধন এবং ২৮ ও ২৯  মে কালো পতাকা মিছিলের কর্মসূচিও ঘোষণা করেন তিনি। আইনজীবী সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন বিএনপি  চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।

সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও  বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেছেন, বাংলাদেশে  যে আইনের শাসন নেই তার প্রমাণ হচ্ছে আইনজীবী সমিতির সমাবেশে বাধা  দেয়া। আমি বিশ্ব বিবেকের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি-দেখুন, বাংলাদেশে আইনের শাসন কোথায়? এদেশে গুম-খুন চলছে। আইনের শাসন নেই। এর  থেকে রক্ষা করুন।

শনিবার বেলা ১১টার দিকে কোর্টের ভেতর  থেকে বেরিয়ে এসে মাজার গেইটে তিনি সাংবাদিকদে একথা বলেন।

এক প্রশ্নের জবাবে খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, সুপ্রিম  কোর্টে কোনো সমাবেশ করতে হলে বার  থেকে অনুমতি নিতে হয়।বারের সভাপতি হিসেবে আমি এর মালিক। আমি তাদের সমাবেশ করার অনুমতি দিয়েছি। ইতিপূর্বেও এখানে বহু সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।

প্রধান বিচারপতি থেকে অনুমতি নিতে হয় এমন এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, প্রধান বিচারপতি এবং সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রারের অনুমতির প্রশ্নই আসে না। কারণ আইনজীবী সমিতির সভাপতি হিসেবে অনুমতি  দেয়ার ক্ষমতা আমার।

সমাবেশ করতে  দেয়া হলে সরকারের বিরুদ্ধে উস্কানি  দেবে এমন বক্তব্যের জবাবে তিনি বলেন, তাদের এ অভিযোগ মিথ্যা। এখানে উস্কানি দেয়ার কিছুই নেই। এসময় তিনি  গ্রেফতারকৃত আইনজীবীদের ছেড়ে দিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।

বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত এবং অ্যাডভোকেট চন্দন সরকারসহ সব অপহরণ-খুনের বিচার দাবিতে আইনজীবী ফোরাম এই সমাবেশ ডেকেছিল।হরতাল-অবরোধের মধ্যে গত বছর উত্তাপ ছড়ানোর পর সরকার ও সরকারবিরোধী দুই পক্ষের আইনজীবীরা রাজনৈতিক  কোনো কর্মসূচি আদালত প্রাঙ্গণে না করতে সম্মত হয়েছিল।এরপর শনিবারই প্রথম কর্মসূচি আহ্বান করে সরকাবিরোধী আইনজীবীরা। কিন্তু গত বৃহস্পতিবার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে গুম-খুনের প্রতিবাদে বিএনপির নাগরিক সমাবেশের মতো এই সমাবেশটিও পণ্ড হয়ে যায়।পুলিশ ও সুপ্রিম কোর্ট কর্মকর্তারা বলছেন, অনুমতি ছাড়াই সমাবেশ করতে গিয়েছিল বিএনপি সমর্থক আইনজীবীরা।

এই সমাবেশের জন্য শুক্রবার রাতে মঞ্চ ও প্যান্ডেল  তৈরি করেছিল ফোরাম। তবে রাতেই পুলিশ মঞ্চ  ভেঙে দেয় এবং প্যান্ডেলের সব  চেয়ার-টেবিল সরিয়ে  দেয়।সকাল  থেকে সুপ্রিম কোর্টের ফটকগুলোতে অবস্থান নিয়ে তল্লাশি চালায় পুলিশ।  ঢোকার পথে সাতজন আইনজীবীকে আটক করা হয় বলেও বিএনপির আইনজীবী  নেতারা জানান।

সকালে হাই কোর্ট মাজারের ফটক  থেকে অ্যাডভোকেট  খোরশেদ আলম ও জহিরুল ইসলামসহ কয়েকজনকে পুলিশ ভ্যানে তুলে  নেয়া হলে আইনজীবীরা বিক্ষোভ করে।

এরপর ফোরামের মহাসচিব ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক মাহবুবউদ্দিন খোকন সাংবাদিকদের বলেন, এরপরও আমরা সমাবেশ করব।সুপ্রিম  কোর্ট প্রাঙ্গণে ভাঙা মঞ্চে সমাবেশ শুরু করেছিল আইনজীবীরাভাঙা মঞ্চের পাশেই সমাবেশের কার্যক্রম শুরু হয় মাহবুবউদ্দিন  খোকনের সভাপতিত্বে। প্রথমে বক্তব্য রাখেন অ্যাডভোকেট  গোলাম মোস্তফা।

অর্ধশত আইনজীবী নিয়ে সমাবেশ শুরু হয়। উপস্থিত ছিলেন বিএনপির যুগ্মমহাসচিব রুহুল কবির রিজভী,কেন্দ্রীয় নেতা সানাউল্লাহ মিয়া, ইকবাল  হোসেন প্রমুখ।পুলিশ সব মাইক খুলে নেয়ায় হ্যান্ডমাইক দিয়ে  নেতারা বক্তব্য রাখছিলেন। আধা ঘণ্টা পরে আইনজীবীরা সমাবেশ পাশের জাতীয়  প্রেসক্লাবে সরিয়ে নেন।

সেখানে সমাবেশে যোগ দিয়ে খালেদা জিয়া আইনজীবী সমাবেশে বাধা  দেয়ার নিন্দা জানিয়ে বাড়াবাড়ি না করতে সরকারকে হুঁশিয়ার করেন। আমরা এখনও আন্দোলন শুরু করিনি,  কেবল শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করছি। কিন্তু এ সরকার এত দুর্বল যে, কোনো একটা  বৈধ সমাবেশ তারা করতে দিচ্ছে না। তারা বুঝে  গেছে সরকারের পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে  গেছে। তাই ভয়ে তারা আজ কোনো সমাবেশ করতে দিতে চায় না।এ মন্তব্য বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার।

তিনি বলেন,কেবল আজকের সমাবেশ নয়। কিছু দিন আগেও একটি সমাবেশ হওয়ার কথা ছিল।  সেখানে দেশের বরেণ্য ব্যক্তিরা আসার কথা ছিল। সেটাও করতে দেওয়া হয়নি। আওয়ামী লীগের এই  র‌্যাব যা আমরা গঠন করেছিলাম তা এখন রাজনৈতিক স্বার্থে কাজে লাগানো হচ্ছে।  বোমাবাজি, দুর্নীতি দমন করার জন্য আমরা  র‌্যাব গঠন করেছিলাম। সেসময়  র‌্যাব সব সন্ত্রাসী, শীর্ষ জঙ্গিদের ধরেছিল। কিন্তু আমরা রাজনৈতিক কাজে ব্যবহার করিনি।

আওয়ামী লীগ আজ  র‌্যাব কে রাজনৈতিক কাজে ব্যবহার করে তাদের ভরসায় ক্ষমতায় আছে। টাকার বিনিময়ে আজ ৠাব মানুষ খুন করছে।বনে-জঙ্গলে-নদীতে শুধু লাশ।এই  র‌্যাব আর চলতে পারে না। অবিলম্বে র‌্যাব  বিলুপ্ত করতে হবে।

খালেদা বলেন,আজ কোথায় গণতন্ত্র? সমাবেশ করার অধিকার নেই। কোথায় আইনের শাসন? ন্যায় বিচার? মানবাধিকার লঙ্ঘণ করা হচ্ছে। সরকারি দলের জন্য এক বিচার এবং বিরোধী দল আর সাধারণ জনগণের জন্য আলাদা বিচার। বিরোধী দল আর সাধারণ মানুষকে বিনা বিচারে জেলে নেয়া হচ্ছে আর আওয়ামী লীগ কর্মী খুন করলেও তাদের ধরা হবে না।

সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, অতীতে আমরা মঈনুদ্দিন, ফখরুদ্দীন দেখেছি। তারাও চেষ্টা করেছে যেন আমাকে রাজনীতি  থেকে দূরে রাখা যায়। তারা পারেনি, আপনারাও পারবেন না। এখনো গণতন্ত্রের পথে আসুন।  বেশি দেরি হলে পরিস্থিতি অন্যরকম হতে পারে।এসময় ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করার জন্য জনগণকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ, বিএনপি  চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আহমেদ আযম খান, যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী আহমেদ, নারায়ণগঞ্জ বিএনপি’র সভাপতি অ্যাডভোকেট  তৈমুর আলম খন্দকার, যুবদল সভাপতি অ্যাডভোকেট  সৈয়দ  মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, ধর্মবিষয়ক সম্পাদক মাসুদ তালুকদার, মানবাধিকার বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার নাসিরউদ্দিন আহমেদ অসীম, অ্যাডভোকেট নিতাই রায় চৌধুরী, সাবেক এমপি অ্যাডভোকেট আসিফা আশরাফি পাপিয়া প্রমুখ।