1দৈনিক বার্তাঃ বিচারিক আদালতে দুই দুর্নীতি মামলা জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়াউর রহমান চ্যারিটেবল ট্রাস্টের অর্থ আত্মসাৎ মামলার অভিযোগ গঠনকারী বিচারকের নিয়োগের  বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার করা রিট আবেদনের বিষয়ে বিভক্ত আদেশ দিয়েছেন হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ।

দুই দিন শুনানির পর রোববার বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি কাজী মো. ইজারুল হক আকন্দের  বেঞ্চে এই দুই আবেদনে রায়ের দিন ঠিক ছিল।বেঞ্চের  জ্যেষ্ঠ বিচারক বিচারপতি ফারাহ মাহবুব রুল এবং মামলার কার্যক্রমে স্থগিতাদেশ দিলেও কনিষ্ঠ বিচারক আবেদনটি খারিজের মত জানান।ফলে নিয়ম অনুযায়ী এখন এই আবেদন যাবে প্রধান বিচারপতির কাছে। তিনি তা তৃতীয় বিচারকের কাছে পাঠাবেন রায়ের জন্য।

আইনজীবীরা জানিয়েছেন, রিট আবেদনটি এখন প্রধান বিচারপতির কাছে যাবে। তিনি তৃতীয় একটি  বেঞ্চ গঠন করে রিটটি পাঠাবেন। ওই  বেঞ্চে এর নিষ্পত্তি হবে।

রোববার এ বিভক্ত আদেশ  দেন বিচারপতি ফারাহ্ মাহবুব ও বিচারপতি কাজী  মো. ইজারুল হক আকন্দের হাইকোর্ট  বেঞ্চ।  জ্যেষ্ঠ বিচারপতি ফারাহ্ মাহবুব বিচারিক আদালতে মামলা দু’টির বিচারিক কার্যক্রমের ওপর তিন মাসের স্থগিতাদেশ  দেন ও পাশাপাশি রুল জারি করেন। রুলে মামলা দু’টির অভিযোগ গঠনকারী বিচারকের নিয়োগকে  কেন অবৈধ  ঘোষণা করা হবে না- তা জানতে চাওয়া হয়। অন্যদিকে কনিষ্ঠ বিচারপতি কাজী  মো. ইজারুল হক কিছু পর্যবেক্ষণসহ খালেদা জিয়ার রিট আবেদনটি খারিজ করে  দেন।গত ১২  মে খালেদা জিয়ার পক্ষে অ্যাডভোকেট আসাদুজ্জামান এ রিট আবেদন দায়ের করেন। রিট বিবেচনাধীন থাকা পর্যন্ত মামলা দু’টির বিচারিক কার্যক্রমের ওপর স্থগিতাদেশও চাওয়া হয়।

গত ১৯ ও ২০  মে রিট আবেদনের ওপর শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। খালেদা জিয়ার পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট এ  জে  মোহাম্মদ আলী। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি  জেনারেল মাহবুবে আলম।
অ্যাডভোকেট আসাদুজ্জামান জানান, বিশেষ জজ আদালতের বিচারকদের নিয়োগ  দেওয়ার জন্য  গেজেট জারি করতে হয়। কিন্তু খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দুই দুর্নীতি মামলায় অভিযোগ গঠনের আদেশ দানকারী বিচারকের নামে  কোনো  গেজেট  নোটিফিকেশন জারি করা হয়নি। তাই এ অভিযোগ গঠনের  বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে আবেদন করা হয়।

খালেদার বিরুদ্ধে ওই দুই দুর্নীতি মামলার বিচারিক কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে ঢাকার বকসিবাজারের আলিয়া মাদ্রাসামাঠের অস্থায়ী আদালতে। এ দুই মামলার সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য আগামী ১৯ জুন দিন ধার্য রয়েছে।এর আগেও চার্জ গঠনের আদেশ বাতিল  চেয়ে গত ১৩ এপ্রিল হাইকোর্টে রিভিশন আবেদন করেন খালেদা জিয়া। ১৬, ১৭ ও ২০ এপ্রিল শুনানি  শেষে ২৩ এপ্রিল রিভিশন আবেদনটি খারিজ করে দেন বিচারপতি  বোরহান উদ্দিন ও বিচারপতি  কেএম কামরুল কাদেরের হাইকোর্ট বেঞ্চ।

গত ৭  মে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় ঢাকার ৩ নম্বর বিশেষ জজ আদালতে বিচারাধীন জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের অর্থ আত্মসাৎ সংক্রান্ত বিশেষ মামলা ও জিয়াউর রহমান চ্যারিটেবল ট্রাস্টের টাকা আত্মসাৎ সংক্রান্ত বিশেষ মামলার বিচারিক কার্যক্রম ঢাকার  মেট্রোপলিটন দায়রা জজ আদালত ভবনের পরিবর্তে ঢাকা মহানগরের বকসিবাজার এলাকার সরকারি আলিয়া মাদ্রাসা ও ঢাকা  কেন্দ্রীয় কারাগার সংলগ্ন মাঠে নির্মিত অস্থায়ী আদালত ভবনে চালানোর আদেশ জারি করে। ফৌজদারি কার্যবিধির ৯(২) ধারায় প্রদত্ত ক্ষমতাবলে ওই দুই মামলা পরিচালনার ভবনটিকে (যা বিডিআর হত্যাকাণ্ড মামলার অস্থায়ী আদালত ছিল) অস্থায়ী আদালত হিসেবে  ঘোষণা করা হয়েছে।

অস্থায়ী আদালতে গত ২১  মে বিচারিক কার্যক্রমের প্রথম দিনে দুই মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ  পেছানোর আবেদন জানান আসামিপক্ষ। আবেদনের শুনানি  শেষে ১৯ জুন সাক্ষ্যগ্রহণের দিন পুননির্ধারণ করেনদুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় গত ১৯ মার্চ খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন আদালত। চার্জ গঠন করা হয় খালেদা জিয়ার বড়  ছেলে ও বিএনপির সিনিয়র ভাইস  চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ মামলা দু’টির অপর ৮ আসামির বিরুদ্ধেও।

ওইদিন খালেদার উপস্থিতিতে মামলা দু’টির চার্জ শুনানি  শেষে অভিযোগ গঠন করেন ঢাকা তৃতীয় ও বিশেষ জজ আদালতের বিচারক বাসুদেব রায়।ওই দিন চার্জ শুনানিতে খালেদার আইনজীবীদের সময়ের আবেদন নামঞ্জুর করে চার্জ গঠন করেন আদালত। বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে এর আগেও জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় ৪১ বার ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় ১১ বার চার্জ শুনানির জন্য সময় বাড়ানোর আবেদন করেছিলেন খালেদা জিয়া।জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট: ২০১১ সালের ৮ আগস্ট জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের নামে অবৈধভাবে অর্থ লেনদেনের অভিযোগ এনে খালেদা জিয়াসহ ৪জনের নামে  তেজগাঁও থানায় মামলা দায়ের করে দুদক।

মামলার অভিযোগ বলা হয়, ২০০৫ সালে কাকরাইলে সুরাইয়া খানমের কাছ  থেকে শহীদ জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট’-এর নামে ৪২ কাঠা জমি কেনা হয়। কিন্তু জমির দামের চেয়ে অতিরিক্ত ১  কোটি ২৪ লাখ ৯৩ হাজার টাকা জমির মালিককে দেওয়া হয়েছে বলে কাগজপত্রে দেখানো হয়, যার কোনো বৈধ উৎস ট্রাস্ট  দেখাতে পারেনি।জমির মালিককে  দেওয়া ওই অর্থ ছাড়াও ট্রাস্টের নামে  মোট ৩ কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা অবৈধ লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে।

২০১২ সালের ১৬ জানুয়ারি এ মামলায় আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুর্নীতি দমন কমিশনের সহকারী পরিচালক হারুনুর রশিদ খান।২০১১ সালের ৮ ডিসেম্বর খালেদা জিয়া হাইকোর্ট  থেকে ৮ সপ্তাহের জামিন পান। ১৭ জানুয়ারি খালেদা জিয়া ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে জামিননামা দাখিল করেন।

মামলায় অভিযুক্ত অপর ৩ আসামি হলেন খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব হারিছ  চৌধুরী, হারিছ  চৌধুরীর তৎকালীন একান্ত সচিব, বর্তমানে বিআইডব্লিউটিএ’র নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক বিভাগের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক জিয়াউল ইসলাম মুন্না ও ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের সাবেক  মেয়র সাদেক  হোসেন  খোকার একান্ত সচিব মনিরুল ইসলাম খান।

জিয়াউল ইসলাম মুন্না ও মনিরুল ইসলাম খান জামিনে আছেন। হারিছ  চৌধুরী মামলার শুরু থেকেই পলাতক।জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট: জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের নামে দুর্নীতির অভিযোগে ২০০৮ সালের ৩ জুলাই রমনা থানায় মামলাটি দায়ের করে দুর্নীতি দমন কমিশন।

এতিমদের সহায়তা করার উদ্দেশে একটি বিদেশি ব্যাংক  থেকে আসা ২  কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৭১ টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ এনে এ মামলা দায়ের করা হয়।মামলার অপর আসামিরা হলেন- বিএনপির সিনিয়র ভাইস  চেয়ারম্যান খালেদাপুত্র তারেক রহমান, মাগুরার সাবেক এমপি কাজী সালিমুল হক কামাল ওরফে ইকোনো কামাল, ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ, ড. কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও মমিনুর রহমান।

তারেক রহমান দেশের বাইরে আছেন। মাগুরার সাবেক এমপি কাজী সালিমুল হক কামাল ওরফে ইকোনো কামাল, ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ জামিনে আছেন। তবে শরফুদ্দিন আহমেদ আদালতে হাজির না থাকায় ১৯ মার্চ তার বিরুদ্ধে  গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত।অপর দুই আসামি ড. কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও মমিনুর রহমান মামলার শুরু  থেকেই পলাতক।মামলাটি তদন্ত করে দুদকের সহকারী পরিচালক হারুনুর রশিদ খালেদা জিয়া, তারেক রহমানসহ অপর ৪ জনকে অভিযুক্ত করে ২০০৯ সালের ৫ আগস্ট আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন।