2দৈনিক বার্তাঃ জাতীয় মানবাধিকার কমিশনারের  চেয়ারম্যান ড. মিজানুর রহমান বলেন, নারায়ণগঞ্জে ৭ হত্যাকাণ্ডের পর বলা হয়েছিল সন্দেহভাজনরা রাষ্ট্রীয় নজরদারিতে আছে, কিন্তু নজরদারিতে থাকার পরও সন্দেহভাজন কেউ কিভাবে  দেশ  থেকে বের হয়ে  গেল। এর  পেছনে শক্তিশালী ও ক্ষমতাবান কারও হাত না থাকলে তা সম্ভব হতো না।

রোববার সকালে রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন, কমনওয়েলথ হিউম্যান রাইটস ইনিশিয়েটিভ আয়োজিত  স্ট্রেংদেনিং পুলিশ একাউন্টেবিলিটি ইন বাংলাদেশে: চ্যালেঞ্জেস এন্ড স্ট্র্যাটেজিস শীর্ষক এক  সেমিনারে তিনি এ মন্তব্য করেন। জাতীয় মানবাধিকার কমিশন এবং ভারতের কমনওয়েলথ হিউম্যান রাইটস ইনিশিয়েটিভস যৌথভাবে এই আলোচনার আয়োজন করে।

সেমিনারে আরও উপস্থিত ছিলেন- সাবেক বিচারপতি আব্দুল মতিন, ব্যারিস্টার সারা আরা  হোসেন, পুলিশ স্টাফ কলেজের পরিচালক নজরুল ইসলাম, আইন ও সালিশ  কেন্দ্রের অসিত দাশ, জিরাই খান বাবনা প্রমুখ।

মিজানুর রহমান আরো বলেন, আইনজীবীসহ ৭ হত্যাকাণ্ড ঘটানো অপরাধীদের আটকের ব্যাপারে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মাঝে অনেকটা  শৈথিল্য এবং অবহেলা  দেখা গেছে। অপরাধ সংগঠিত হওয়ার ৭ দিন পর অভিযানে যাওয়াই তা প্রমাণ করে। এই ৭ দিনই যথেষ্ট সকল প্রমাণ এবং অপরাধের আলামত নষ্ট করার জন্য।

তিনি বলেন, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর আচরণ  দেখে অপরাধীদের প্রতি তাদের এক ধরণের পক্ষপাতিত্ব লক্ষ করা  গেছে। এই কারণে রাষ্ট্রের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার যথেষ্ট কারণ রয়েছে এবং সাম্প্রতিক ঘটনাগুলোয় বাহিনীর কার্যক্রম নিয়ে নতুন করে ভাবার সময় এসেছে।

নারায়ণগঞ্জে ৭ হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে সরকারের নিকট সুপারিশ করা সম্পর্কে তিনি বলেন, হত্যাকাণ্ডের সঠিক তদন্ত করার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও সচিবদের কাছে  বেশকিছু সুপারিশ দিয়েছি এবং সার্বিক আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়নের জন্য মানবাধিকার কমিশনের পক্ষ নাগরিক সমাজের উদ্বিগ্নতার কথা জানিয়েছি। বিশেষ করে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া খুন, গুম, বন্দুকযুদ্ধে আসামির মৃত্যু এবং বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছি।

মিজানুর রহমানর‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নকে (র‌্যাব) সাবধান করে দিয়ে আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকতে বলেছেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের  চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান।র‌্যাবের উদ্দেশে মিজানুর রহমান বলেন, র‌্যাব সাবধান। আইন মানতেই হবে। আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে। আইন অমান্য করতে পারবেন না।

জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের  চেয়ারম্যান বলেন, আইন মানলে, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও জনগণ সবারই উপকার হয়। সর্বোপরি আমাদের প্রিয় মাতৃভূমিরও উপকার হয়।

বর্তমান অবস্থায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর জবাবদিহি নিয়ে আলোচনা করার সবচেয়ে উপযুক্ত সময় বলে মত  দেন মিজানুর রহমান। তবে তিনি  ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আজ এই অনুষ্ঠানে পুলিশের অনেক কর্মকর্তা এসেছেন। কিন্তু র‌্যাবের কাউকে  দেখতে পাচ্ছি না।মিজানুর রহমান বলেন, র‌্যাবের এখন  যে ভাবমূর্তি-সংকট,  সে-কারণেই তাদের জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সঙ্গে কাজ করতে হবে। জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের কথা ও সুপারিশ শুনতে হবে। কিন্তু তারা যদি সামাজিক বিতর্ক  থেকে দূরে থাকতে চায়, তাহলে সংকট আরও ঘনীভূত হবে। এমন  প্রেক্ষাপটে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সঙ্গে কাজ করার জন্য র‌্যাবের নীতিনির্ধারকদের প্রতি অনুরোধ জানান তিনি।

জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের অনেক ক্ষমতা নেই বলে স্বীকার করেন মিজানুর রহমান। তবে তিনি বলেন, তার পরও আমরা কাগুজে বাঘ নই।

মিজানুর রহমান দাবি করেন, আমরা র‌্যাবকে বিভিন্ন সময়  যেসব সুপারিশ করেছিলাম, তারা যদি গুরুত্ব দিয়ে যেসব বিবেচনা করত, তাহলে আজকের ঘটনা ঘটত না।ভারতের কমনওয়েলথ হিউম্যান রাইটস ইনিশিয়েটিভসের পরিচালক মায়া দারুয়ালা বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর জন্য জবাবদিহি অনেক জরুরি। এই জবাবদিহি মানে কারও দিকে আঙুল  তোলা নয়। বরং সেই বাহিনীকে আরও শক্তিশালী করা।

মায়া দারুয়ালা বলেন, ক্ষমতায়  থেকে কেউ পুলিশকে যা বলবে, আর পুলিশ তা করবে, তা হতে পারে না। প্রতিটি কাজ হওয়া উচিত আইন অনুযায়ী।জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সদস্য কাজী রিয়াজুল হক বলেন, আজকে নারায়ণগঞ্জের ঘটনার পর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভাবমূর্তি প্রশ্নবিদ্ধ। এই সমস্যা সমাধানে রাজনৈতিক সদিচ্ছা থাকতে হবে।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে দায়মুক্তি  দেওয়ার সংস্কৃতির সমালোচনা করেন বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্টের (ব্লাস্ট) পরিচালক সারা  হোসেন।অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা, পুলিশের প্রতিনিধি, বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনের প্রতিনিধি ও আইনজীবীরা অংশ  নেন।