2দৈনিক বার্তাঃ  দেশে বীমা ব্যবসার প্রসারে সঙ্গে সঙ্গে আর্থিক  লেনদেনে সন্ত্রাসের (মানিলন্ডারিং) ঝুঁকিও বাড়াছে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড.আতিউর রহমান।তিনি বলেন, মানিলন্ডারিং প্রতিরোধে শুধু আইন বা প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোতে পরিবর্তন আনলেই হবে না।  কেননা আইন প্রণয়ন বা প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর উন্নয়নই  শেষ কথা নয়। আইনের যথাযথ প্রয়োগ এবং বাস্তবায়নও অত্যন্ত জরুরি বলে মন্তব্য করেন ড. আতিউর।

রবিবার সকালে রাজধানীর হোটেল রূপসী বাংলায় মানিলন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধে বীমা প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রধান নির্বাহী এবং মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ পরিপালন কর্মকর্তা সম্মেলন-২০১৪’ এর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।মানিলন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধে বাংলাদেশ ব্যাংকের বিএফআইইউ বিভাগ এবং বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ  যৌথভাবে এ সম্মেলনের আয়োজন করে।

এতে  গেস্ট অব অনার হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অর্থমন্ত্রণালয়ের অধীন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব ড. এম আসলাম আলম।গভর্নর বলেন, মানিলন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন অভ্যন্তরীণ  কোনো সমস্যা নয়, এটি একটি আন্তর্জাতিক সমস্যা। বাংলাদেশে মানিলন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধে আইনী ও প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোতে ব্যাপক পরিবর্তন আনা হয়েছে। কিন্তু আইন প্রণয়ন বা প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর উন্নয়নই শেষ কথা নয়। আইনের যথাযথ প্রয়োগ এবং বাস্তবায়ন অত্যন্ত জরুরি।

এ  প্রেক্ষিতে তিনি বলেন, আইন প্রয়োগে বা বাস্তবায়নে রিপোর্ট প্রদানকারী সংস্থা হিসেবে বীমা প্রতিষ্ঠানগুলোর ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বীমা ব্যবসার প্রসারের সঙ্গে সঙ্গে মানিলন্ডারিংয়ের ঝুঁকিও বাড়ছে। তাই মানিলন্ডারিং প্রতিরোধে আইনগতভাবে বীমা প্রতিষ্ঠানগুলোকে দায়িত্ব পালন করতে হবে।

আতিউর রহমান জনান,দেশে মানিলন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধে বাংলাদেশ ব্যাংকের বিএফআইইউ দেশের কেন্দ্রীয় সংস্থা হিসেবে কাজ করছে। বিএফআইইউ রিপোর্ট প্রদানকারী সংস্থা  থেকে প্রাপ্ত রিপোর্ট পর্যালোচনা, বিশ্লেষণ, সংরক্ষণ এবং বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণের জন্যে সংশ্লিষ্ট আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে তথ্যাদি   প্রেরণ করছে।

তিনি আরও জানান, মানিলন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড প্রণয়নকারী সংস্থা ফাইন্যান্সিয়াল অ্যাকশন টাস্কফোর্স (এফএটিএফ) প্রণিত ৪০টি সুপারিশের আলোকে  দেশগুলোকে নিজ নিজ অঞ্চলে মানিলন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধে কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হয়।

উল্লেখ্য, এফএটিএফ’র অধীনে আট ধরনের স্টাইল  রেজিওনাল বডি (এফএসআরবি) রয়েছে, যার মধ্যে এশিয়া-প্যাসিফিক গ্র“প অন মানিলন্ডারিং (এপিজি) অন্যতম। বাংলাদেশ এপিজি’র প্রতিষ্ঠাতা সদস্য দেশ।

এপিজি একটি নির্দিষ্ট সময় পর পর সদস্য বিচারের মাধ্যমে প্রতিটি  দেশে মানিলন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধে এফএটিএফ’র সুপারিশমালার বাস্তবায়ন অবস্থান যাচাই করে থাকে। এটি  যে প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সম্পন্ন হয় তা পারস্পরিক মূল্যায়ন(মিউচুয়াল ইভালুয়েশন)নামে পরিচিত।বাংলাদেশের পরবর্তী মূল্যায়ন ২০১৫ সালে সম্পন্ন হবে এবং এ প্রক্রিয়া সুষ্ঠুভাবে সম্পন্নের লক্ষ্যে ব্যাপক উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানান ব্যাংক গভর্নর।

তিনি বলেন, আগামী মিউচ্যুয়াল ইভালুয়েশনে আইনী কাঠামো পর্যালোচনার পাশাপাশি আইনের সঙ্গে সম্পর্কিত পরিপালনীয় ১১টি তাৎক্ষণিক ফলাফল নিয়ে পর্যালোচনা করা হবে।

এ সময় কথা প্রসঙ্গে গভর্নর ড. আতিউর রহমান বিভিন্ন আর্থিক ও বীমা প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মকর্তাদের মানিলন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধ কার্যক্রমে সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন ও নিয়মিত তদারকির পরামর্শ দেন।এতে মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ কার্যক্রমসহ বীমা খাত সংশ্লিষ্ট বিষয়ে প্রয়োজনীয় নীতিগত পরিবর্তনে ব্যাংক সচিবকে সহযোগিতা দেয়ার আহ্বান জানান।

ব্যাংকিং খাতে কঠোর নিয়ম হওয়ায় এখন বীমা খাতের মাধ্যমে মানিলন্ডারিংয়ের ঝুঁকি বাড়ছে বলে মন্তব্য করেন অর্থমন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সচিব ড. এম আসলাম আলম।তিনি বলেন, মানুষ সুযোগ  পেলেই অপরাধ করে তাই মানুষকে অপরাধের সুযোগ দেওয়া যাবে না। মানিলন্ডারিং প্রতিরোধে বীমা খাতে আরও আধুনিক সফটওয়্যার ব্যবহারের পরামর্শ দেন তিনি। যাতে অবৈধ কর্মকাণ্ড সহজেই ধরা যায়।

আমরা অপরাধকে নির্মূল করতে পারবো না তবে একে সীমিত করার চেষ্টা করতে হবে। সবাই মিলে চেষ্টা করলে একদিন দেশ থেকে অপরাধ-দুর্নীতি নির্মূল হবেই বলে তিনি আশা করেন।সচিব ড. এম আসলাম আলম বলেন, আমাদের  দেশে আইন আছে কিন্তু আইনের সঠিক প্রয়োগ নেই। আমরা একের পর এক আইন করে যাচ্ছি কিন্তু কোথাও এর প্রয়োগ হচ্ছে আবার কোথাও এটা প্রয়োগ করা হচ্ছে না তা যানি না।

তিনি বলেন, আমরা এখন বিশ্ব অর্থায়নের সঙ্গে সরাসরি জড়িত তাই আমাদের এখন বিশ্ব সমাজের কাছে আস্থা অর্জন করতে হবে। এর জন্য ২০০৮ সাল  থেকে বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে ফলে আমরা এখন বিশ্বের  দেশগুলোর সন্দেহের তালিকা থেকে মুক্ত হতে  পেরেছি।বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের  চেয়ারম্যান এম.  শেফাক আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যান্যর মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের সদস্য  মো. কুদ্দুস খান, বিএফআইইউ প্রধান ও বাংলাদেশ ব্যাংকের  ডেপুটি গভর্নর আবু হেনা  মোহাম্মদ রাজী হাসান এবং বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স এসোসিয়েশনের  সভাপতি শেখ কবির হোসেন।

এতে বিভিন্ন বীমা প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এবং মানিলন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধ সংশ্লিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গরাও উপস্থিত ছিলেন।