100দৈনিক বার্তাঃ  রিকশা-ভ্যান শ্রমিক ইউনিয়ন আয়োজিত গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা বলেন, ঢাকা শহরে ব্যাটারি চালিত রিকশা চলাচল বন্ধ করে দেয়ার ফলে বিপুল সংখ্যক শ্রমজীবি মানুষের জীবনে যে সংকট সৃষ্টি হয়েছে, তা নিরসনে অবিলম্বে ব্যাটারি চালিত রিকশা চালু করতে হবে।

মঙ্গলবার বিকাল ৪টায় প্রগতি সম্মেলন কক্ষে গোলটেবিল বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়। রিকশা-ভ্যান শ্রমিক ইউনিয়নের আহ্বায়ক আব্দুল কুদ্দুস-এর সভাপতিত্বে গোলটেবিল বৈঠকে আলোচনা করেন সংগঠনের উপদেষ্টা প্রখ্যাত শ্রমিক নেতা মনজুরুল আহসান খান, ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সহ-সভাপতি মাহবুব আলম, সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক রাজেকুজ্জামান রতন, অ্যাড. হাসনাত কাইয়ুম, বাপার সাবেক সাধারণ সম্পাদক মহিদুল হক খান, একে এম সিরাজুল ইসলাম, নগর পরিকল্পনাবীদ মারূফ আহমেদ, গার্মেন্ট শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের কার্যকরী সভাপতি সাদেকুর রহমান শামীম, বস্তিবাসী ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল বারেক, রিক্সার মালিক লুৎফুর কবির মুকুল, জবা আক্তার, রিক্সা শ্রমিক মো. ফারুক, সংগঠনের যুগ্ম-আহ্বায়ক হাসান আহমেদ বাবলু, মোস্তফা, কাজী প্রমুখ নেতৃবৃন্দ। বৈঠকে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন রিক্সা-ভ্যান শ্রমিক ইউনিয়নের সংগঠক মঞ্জুর মঈন।

মনজুরুল আহসান খান  বলেন, বছরাধিককাল যাবৎ ঢাকা শহরে রিকশা চালকদের একটা বড় অংশ ব্যাটারি চালিত রিকশা চালিয়ে তাদের জীবকা নির্বাহ করছে। হঠাৎ করে ১০ দিন আগে ব্যাটারি চালিত রিকশা বন্ধ করার ফলে হাজার হাজার রিকশা চালক, মিস্ত্রী, মালিক, তাদের লক্ষাধিক পরিবার পরিজনসহ আজ অর্ধাহারে অনাহারে দিনাতিপাত করছে। রিকশা চালকদের উপর বার বার এই রকম তুঘলগি আচরন করা হচ্ছে। ভিআইপি রাস্তার নামে ঢাকা শহরের অনেক রাস্তায় রিকশা চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। হাজার হাজার রিকশা সিজ করে সরকারি দলের ক্যাডার ও সরকারী কর্মচারীদের লুট করে নেওয়ার সুযোগ করে দেয়া হয়েছে। রাস্তা ঘাটে শ্রমিকদের মারপিট ঘুষ-দুর্নীতি হয়রানি টায়ার ফুটা করে দেয়া এবং রিকশা সিজ করে ঘুষ নিয়ে ছেড়ে দেয়া নিত্যনৈমিক্তক ব্যাপার।

তিনিন বলেন, এক শ্রেণীর টাউটগোষ্ঠী প্রশাসনের সাথে যোগসাজশে ব্যাটারি চালিত রিকশার টোকেন ও অনুমোদন ইত্যাদি প্রদানের নামে মালিক ও শ্রমিকদের নানানভাবে প্রতারিত করেছে। তারা ভূয়া রুট পারমিট, টোকেন দিয়ে দেড়, দুই হাজার বা তারো বেশি পরিমাণ টাকা নিয়ে ব্যাটারি চালিত রিকশা চলাচলের টোকেন দিয়েছে। দৃষ্টান্ত হিসাবে বলা যায়, মো. ইনসুর আলী নামে এক ব্যক্তি ব্যাটারি চালিত রিকশার পক্ষে হাইকোর্টে রীট করেছিল। তারপর সেই রীটের নাম ভাঙিয়ে ভূয়া রুট পারমিট দিয়ে ব্যাটারি চালিত রিকশা চলাচলের টোকেন দিয়েছিল। এভাবে ইনসুর আলীর মতো লোকেরা প্রশাসনের সাথে যোগসাজশে শ্রমিক-মালিকদের কাছ থেকে অবৈধভাবে টাকা তুলেছে। ব্যাটারি চালিত রিকশার ব্যপারে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা না থাকার কারনে বিভিন্ন স্থানে নিয়মিত মাসোহারা দিয়ে রিকশা চালাতে হতো। সরকার ও প্রসাশনের ছত্র ছায়ায় একটি টাউট গোষ্ঠী যারা অনেক টাকা নিয়ে ব্যাটারি চালিত রিকশা চলাচলের টোকেন প্রদান করে এবং যন্ত্রপাতি আমদানি করে ব্যাটারি চালিত রিকশা চালুর ক্ষেত্রে মূল ভূমিকা রাখে তাদের অনেকেই এখন এর বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে। কিছু দিন আগে ওরা ব্যাটারি চালিত রিকশা বন্ধের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে রীট করেছিল।

মনজুরুল আহসান বলেন, আবার গত ২২ মে প্রেসক্লাবে ব্যাটারি চালিত রিকশা চালুর দাবিতে আমরা যখন সমাবেশ ডাকি তখন তারা পুলিশের সহায়তায় ব্যাটারি চালিত রিকশা বন্ধের দাবিতে সমাবেশ করে। অপরদিকে পুলিশ আমাদের সভা ও মিছিলে লাঠিচার্য করে। সবাই জানে টাউটরা এই ধরনের বিপরীতমূখী কাজ করে অবৈধ চাদা ও অর্থ সংগ্রহের ধান্ধায়। আজ ব্যাটারি চালিত রিকশার শ্রমিক ও মালিকরা সরকার ও প্রশাসনের ভ্রান্ত নীতি এবং তাদেরই প্রশ্রয়ে লালিত টাউটদের চাদাবাজি ও নির্যাতনের শিকার। রিক্সা শ্রমিক ও মালিকদের অনেকে ভিটে-বাড়ি বিক্রি করে এমনকি চড়া সুদে ঋণ নিয়ে এসব ব্যাটারি চালিত রিকশা ক্রয় করেছে। বর্তমান অবস্থায় সর্বশ্বান্ত হয়ে হাজার হাজার মানুষ পথে বসেছে।

বৈঠকে বক্তারা বলেন, রিকশা আমাদের দেশের একটি পরিবেশ বান্ধব, দেশজ ও সাধারণ মানুষের পরিবহন। ঢাকা শহরে বেশিরভাগ লোক রিকশায় চলাচল করে। অল্প মালমাল অল্প দূরত্বে নেওয়ার জন্য ভ্যান ব্যাবহার করে। বিভিন্ন গবেষনায় দেখা গেছে যানজট রিকশার কারণে হয় না। যেসব রাস্তায় রিকশা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে সেসব রাস্তায় যানজট কমেনি বরং বেড়েছে। রিকশা বিপুল সংখ্যক মানুষের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করে। রিকশা কিনতে কোন বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় হয় না।

বৈঠকে বক্তারা আরো  বলেন, পেট্রোল বা ডিজেলের দরকার পরে না। রিকশার টাকা গ্রামে যায় দেশেই থাকে। রিকশা চালকরা বিদেশে টাকা পাচার করে না, বিদেশে ছেলে মেয়েদের পড়ায় না, চিকিৎসা করায় না, দালান কোঠাও বানায় না। রিকশায় মটর লাগানোর ফলে অতীতে যে অমানবিক পরিশ্রম করতে হতো তা অনেক লঘু হয়েছে। ব্যাটারি চার্জ করতে যে বিদ্যুৎ ব্যয় হয় তা ধনীদের আরাম আয়েশ বিলাসের ব্যয়ের তুলনায় কিছুই না। রিকশা চালকদের কষ্ট লাঘবের জন্য রাষ্ট্র এইটুকু দায়িত্ব কি নিতে পারে না! আমাদের দেশের প্রকৌশলীরা রিকশাকে উন্নত, নিরাপদ এবং যাত্রী ও চালকদের জন্য আরামদায়ক করার জন্য নানা পরীক্ষা নিরীক্ষা করছেন, মডেল তৈরি করেছেন। ব্যাটারি চালিত রিকশার গতি নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে। দুঃখের বিষয় এইসব নিয়ে সরকারের ভাবার ও সময় নেই, বাস্তবায়নতো দূরের কথা। আমাদের দেশে বড়লোক বিশেষ করে লুটেরা ধনিকদের রাজত্ব। তারা তাদের স্বার্থই দেখে। তারা ঢাকাকে ভিআইপিদের শহর বানাতে চায়। গরীব মেহনতি মানুষ এখানে থাকতে পারবে না। তাই তারা রিকশা উচ্ছেদ করে, বস্তি উচ্ছেদ করে। এই গরীব মারার নীতির বিরুদ্ধে আমাদের ঐক্যবদ্ধ লড়াই গড়ে তুলতে হবে।