Rajibpur pictur 26,05,2014 .1

দৈনিক বার্তা -রম্নহুল সরকার, রাজীবপুর (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি :  ফারইস্ট লাইফ ইন্সুরেন্স কোম্পানীর রাজীবপুর শাখা ইনচার্জ মিজানুর রহমান প্রায় আড়াই হাজার বীমা গ্রাহকের জমানো প্রায় অর্ধ কোটি টাকা নিয়ে উধাও হওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে৷ অভিযোগে জানা গেছে বীম গ্রাহকের টাকা কোম্পানীতে জমা না দিয়েই সম্পূর্ন ভুয়া রশিদের মাধ্যমে অভিযুক্ত ইনচার্জ আত্মসাত্‍ করে উধাও হয়ে যায়৷ এতে আড়াই হাজারের ওপরে বীমা গ্রাহক হতাশ হয়ে ছোটাছুটি করছে৷ গত ৩ মাস থেকে কোম্পানীর কুড়িগ্রামের রাজীবপুর শাখা অফিসে তালা ঝুলছে৷ অফিসের কাউকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না৷ এ অবস্থায় বীমা গ্রাহকরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকতর্া বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছে৷ 

সরেজমিনে একাধিকবার রাজীবপুর শাখা অফিসে গিয়ে তালা ঝোলানোর দৃশ্য দেখা গেছে৷ গতকাল সোমবারও একই দৃশ্য দেখা গেছে৷ রাজীবপুর বাজার থেকে বটতলা সড়কের বড়াইডাঙ্গি নামক স্থানে ফারইষ্ট ইসলামী লাইফ ইন্সুরেন্স সাংগঠনিক অফিসের সামনে সাইনবোর্ড রয়েছে৷ একটি ভাড়া ঘরে কোম্পানী প্রায় ৮বছর আগে অফিস খুলে বসে ফারইষ্ট ইসলামী লাইফ ইন্সুরেন্স কোম্পানী৷ অধিক মুনাফার লোভে এলাকার সহজ সরল ও ব্যবসায়িরা কোম্পানীর সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়ে মাসিক সঞ্চয় স্কীম ও একক বীমা পলিসি গ্রহন করে৷ প্রথম দুইতিন বছর কোনো অনিয়ম দেখা যায়নি৷ কিন্তু এরপরই শুরম্ন হয় শাখা ইনচার্জ মিজানুর রহমানের ছলছাতুরি৷ গ্রাহকদের কাছ থেকে কিসত্মির টাকা গ্রহণ করে ভুয়া রশিদ প্রদান করতে থাকে৷ যা ফাঁস হয়ে পড়ে গত তিনমাস আগে৷ এরই মধ্যে ওই ইনচার্জ প্রায় অর্ধকোটি টাকা আত্মসাত্‍ কলে লাপাত্তা হয়ে যায়৷ 

উপজেলার বালিয়ামারী মন্ডল পাড়া গ্রামের রেজাউল করিম অভিযোগ করে বলেন, ‘আমি মাসিক ৫শ’ টাকা করে ১০ বছর মেয়াদি সঞ্চয়স্কীম করি৷ আমার পলিসিনং-৯৯৬০০৬৬৭৪৷ আমি ২৯ মাসে ১৪ হাজার ৫শ’ টাকা জমা দিয়েছি যার রশিদও আছে আমার কাছে৷ বিভিন্নভাবে খোঁজ খবর নিয়ে এবং কোম্পানীর ওয়েবসাইটে আমার পলিসির বিপরীতে মাত্র ৮ হাজার টাকা জমা হয়েছে৷ বাকী সাড়ে ৬হাজার টাকার খোঁজ নাই৷’ জাহিদুল ইসলাম নামের এক গ্রাহক বলেন, ‘আমি ১২ বছর মেয়াদি একটি একক বীমা গ্রহণ করি৷ ৬মাস পর ১২ হাজার ৭৭৫ টাকা কিসত্মি দেই৷ এতে ৩ বছরে আমার ৭৬ হাজার ৫৫০ টাকা জমা হওয়ার কথা৷ সেখানে আমার জমা হয়েছে মাত্র ২৫ হাজার টাকা৷ রেজাউল ও জাহিদুল ইসলামের মতো অসংখ্য গ্রাহক একই অভিযোগ করেন৷ 

রাজীবপুর পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিৰক আলহাজ্ব আজিম উদ্দিন ও রাজীবপুর সদর ইউপি চেয়ারম্যান নুর-ই শাহী ফুল অভিযোগ করেন, তারাও ফারইষ্ট ইসলামী লাইফ ইন্সুরেন্স কোম্পানীতে বীমা করেছেন৷ একই সমস্যা তাদেরও হয়েছে৷ তারা জানান, কোম্পানীর কোনো কমর্ীকে তারা খুঁজে পাচ্ছে না৷ অভিযোগ পাওয়া গেছে, অর্ধকোটি টাকা নিয়ে লাপাত্তা হওয়া মিজানুর রহমান একই কোম্পানীর কুড়িগ্রাম জেলা ইনচার্জ আবুল কালামের ভাতিজা৷ ওই টাকা তারা দু’জনেই ভাগবাটোয়ার করেছেন৷ 

রাজীবপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শফিউল আলম বলেন, ‘আমার কাছে এলাকাবাসি অভিযোগ দিয়েছে যে, ফারইষ্ট ইসলামী লাইফ ইন্সুরেন্স কোম্পানী প্রায় কোটি টাকা আত্মসাত্‍ করেছে৷’ উপজেলা নির্বাহী কর্মকতর্া আব্দুল লতিফ খান জানান, এ বিষয়ে তদনত্মের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে৷ 

এ প্রসঙ্গে পলাতক ইনচার্জ মিজানুর রহমান এর মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, ‘আমি পালাইনি৷ আমাকে কুড়িগ্রাম অফিসে বদলি করা হয়েছে৷ তবে তিনি কিছু গ্রাহকের সমস্যার কথা স্বীকার করেন৷’ ফারইষ্ট ইসলামী লাইফ ইন্সুরেন্স কুড়িগ্রাম ইনচার্জ আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘রাজীবপুর অফিস তালা দেওয়া এটা আমার জানা নেই৷ অফিসের মিজানুর রহমান কিছু গ্রাহকের কাছ থেকে ভুয়া রশিদের মাধ্যমে টাকা গ্রহণের বিষয়টির সত্যতা আছে৷ তবে প্রমাণ সাপেৰে সব গ্রাহকের সমাধান হবে৷’